লাইফ ইন লকডাউন, ডে টুয়েন্টি নাইন

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩ মে ২০২০, রবিবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

তৃতীয় শ্রেনীর সরকারি কর্মচারীর ছেলে। ভাইবোন পাঁচ জন। অভাবের সংসারে শুধু দুপুরের খাবারটিই নিশ্চিত করে জুটতো। শারীরিক বেখাপ্পা গড়নের জন্য বন্ধুবান্ধব তেমন ছিল না। পড়াশোনাতেও তেমন ভাল ছিলেন না। ছোটবেলা থেকে শুধু এক প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন। ‘ওদের এতো আছে, ওরা কেন শেয়ার করে না’? এ এক প্রশ্নই তাকে আত্মহত্যায় সফল হতে দেয় নি। তিনি কিশোর কুমার দাস। ‘বিদ্যানন্দ’ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা। তার পরিচয় সংগঠনের চেয়েও বড় হয়ে যাচ্ছিলো- তাই প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদ ছেড়ে দিয়েছেন।

সম্ভবত আমাদের লকডাউন প্রিয়ডে সবচেয়ে বড় বিতর্ক এটি। কেন তিনি পদ ছাড়লেন- এ প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে ‘বিদ্যানন্দ’ গোটা দেশেই একটি অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। তার সরে যাওয়া- একটি হাস্যকর অভিযোগের ভিত্তিতে অপ্রত্যাশিত। বেশিরভাগ মানুষ তার পক্ষে ছিল। কিন্তু তিনি তার বিপক্ষদের পক্ষে ছিলেন। তাদের জিতিয়ে দিলেন!

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে সন্ধানীর নাম নিতে হয়। আমার উদ্দেশ্যে ওরা কিছু একটা পাঠিয়েছে। আজ ফোন এসেছিল। ক্যুরিয়ার গুলো এ লকডাউনের দিনে খুব বিশ্বস্ত সার্ভিস দিচ্ছে। যে জীবনে কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করে নি সে কখনো বুঝবে না- ভালোবাসা কীরকম থাকে এদের প্রতি। সামান্য কথায় গায়ের সবগুলো লোমকূপে আগুন ধরে যায়।

ঢাকার বাইরে হাইওয়ে সব যেন ইউরোপের রাস্তা। আমি অবশ্য কখনো ইউরোপ যাই নি। ভাড়া করা গাড়ির ড্রাইভারও যায় নি। কিন্তু ও বলল- এটাই নাকি ইউরোপের রাস্তা। সব ফাঁকা ফাঁকা। প্রশস্ত রাস্তা, হঠাৎ এক দুই গাড়ি; রিকশা ভ্যান সাইকেল মানুষ কিছু নেই। স্থানে স্থানে পুলিশ ব্যারিকেড। পুলিশ নেই। ড্রাইভার বলছিলো- সপ্তাহ খানেক তাকে এখানে এখানে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এখন সবার গা সয়ে গেছে। ব্যারিকেড জড় পদার্থ, কোভিড পজেটিভ হওয়ার ভয় নেই। তাই দাঁড়িয়ে আছে। ধানক্ষেতের সামনে গাড়ি দাঁড় করে সঙ্গে নেওয়া কফি খেলাম। রোদ্দুর হীন আকাশে এলোপাতাড়ি বাতাস। ভাবছিলাম করোনাভাইরাস না আসলে কখনো জানতাম না- পৃথিবীতে কথা বলার জন্যও একজন লাগে। সবাই ব্যস্ত। কারো অবসর নেই।

এদিকে ইসরায়েল আজ ঘোষণা দিলো- তারা নোভেল করোনাভাইরাসের এন্টিবডি আবিস্কার করে ফেলেছে। এগুলো শরীরের ভেতরে গিয়ে ভাইরাস গুলোকে নিউট্রালাইজ করে দিবে। তারা এখন পেটেন্ট করে ছেড়ে দিতে চাচ্ছে কোম্পানিগুলোর হাতে। ডিফেন্স মিনিস্টারের বক্তব্য ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম। ফেব্রুয়ারিতে ভাইরাসের স্যাম্পল পাঁচটি জাহাজে করে ইতালি জাপান থেকে ইসরায়েল পৌছেছিল। সংরক্ষণ করা হয়েছিল -৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

সারভাইভাল নিয়ে শিখতে হলে এদের কাছ থেকে শিখতে হয়। লকডাউন দুর্বল হতে হতে ঈদের দিনের চেয়েও দুর্বল হয়ে গেছে। এখন একে শুক্রবার বলা যায়। প্রতিদিন শুক্রবার। আজ শুক্রবার, গতকাল শুক্রবার, আগামীকাল শুক্রবার। যারা মানছে- নির্দেশনা ভাঙ্গার ইচ্ছে হচ্ছে না বলে মানছে। শুধু আমাদের দেশে নয় সারা পৃথিবীতে একই অবস্থা। আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। লকডাউন শিথিল হচ্ছে।

ঢাকা ছেড়ে আসলাম। এ শহর তৈরিই হয়েছে ইট সিমেন্ট আর মানুষ দিয়ে। এটা অসম্ভব- ঢাকায় ঘরের ভিতর বন্দী না থেকে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা। কোভিড উনিশ অনেককিছু বদলে দিয়েছে। চীনের প্রতি বিশ্বনেতাদের অসন্তোষ নেট নিউজে ঢুকলেই টের পাওয়া যায়। শুধু আন্তর্জাতিক রাজনীতি নয়, আমরাও বদলে যাচ্ছি। ডাটা নির্ভরতা বাড়ছে। আজ পড়লাম- দিল্লির এক স্বনামধন্য স্কুলের ছাত্র ইন্সটাগ্রাম গ্রুপে তার ক্লাসমেটকে রেপ করার প্ল্যান করছিল। সে গ্রুপে তারা এসব আলোচনাই করতো। গ্রুপের নাম দিয়েছিল ‘বয়েজ লকার রুম’। দিল্লি পুলিশ সব ভেস্তে দিয়েছে। অদ্ভুত খবর। করোনাভাইরাসের চেয়ে মস্তিষ্কের এ ভাইরাস আরো বেশি খারাপ। করোনা অন্তত ভার্চুয়ালি ছড়ায় না। সত্যিই পৃথিবী সংঘবদ্ধ শুধু খারাপ কিছুতে। যেমন ইসরায়েল হয়তো ভাল কিছু করে পৃথিবীকে সংঘবদ্ধ করতে পারবে না, তবে খারাপ কিছু করলে অবশ্যই পারবে! পক্ষে বা বিপক্ষে।

আজ অনেকদিন পর ছাদে গেলাম। কে যেন বাগান সাজিয়েছে। মোট তিন রঙের গোলাপ ফুটে আছে। বেলী, কাঁঠালিচাঁপা, নয়নতারা, দুই গাছে গাঁদা ফুলও দেখলাম। ছোট ছোট পেয়ারা ধরেছে। আরেকদিকের গাছে লেবু। জবা, অর্কিড, তুলশী গাছ অসংখ্য। মেহেদী, নাইট কুইন, ডালিম গাছও আছে। বট আর অশ্বত্থ গাছের বনসাই করার চেষ্টা চলছে। আরেকটি সাদা রঙের ফুল। কেউ নাম বলতে পারলো না। নাম- সবার পেটে আসছিল। অন্তর্যামী না হলে পেটের কথা পড়া যায় না। খুব সুন্দর। গন্ধ নেই।

এ বাগানকারদের আমার শ্রেষ্ঠ শিল্পী মনে হয়। তাদের মননশক্তির কী জোর- যে কথা বলতে পারে না, হাঁটতে পারে না, তাকেও সে হাসিয়ে ছাড়ে। স্বয়ং ঈশ্বরের প্ল্যান তার মেগা প্ল্যানের অংশ। একজন জন্মান্ধ নিশ্চয় শুধু কোনো সুগন্ধি ফুলের বাগানে গেলেই নিজেকে ‘দুর্ভাগা’ ভাবেন না!

আজকের চাঁদটিও অনেক বড়। ডাক্তার না হয়ে যদি মালী হতাম- এ চাঁদটাও আমার হয়ে খেটে দিতো। মুক্ত পাখিগুলোও খেটে দিতো। ঝড়ের পরের বাতাস, সূর্যডোবা সন্ধ্যা, সন্ধ্যারতি, আযান- সবাই তার তার অংশের সৌন্দর্য ঢেলে দিতো!

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

করোনা যুদ্ধে আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতালে চালু হচ্ছে ২০০ শয্যার ইউনিট

Wed May 6 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, বুধবার, ৬ মে, ২০২০ করোনা যুদ্ধে বিভিন্ন হাসপাতাল গুলোর মতো ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতাল এগিয়ে এসেছে। সরকারের পাশাপাশি করোনা মোকাবিলায় পাশে দাঁড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ইনডোর আর আউটডোর মিলে সাধারণ রোগীদের জন্য রয়েছে ৭৫০ বেড। করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য দু’পাশের দুটি আলাদা […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo