রিইনফেকশনের অদ্যাবধি || ডা. মারুফুর রহমান অপু

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৮ আগস্ট, ২০২০, শুক্রবার

ডা. মারুফুর রহমান অপু
ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (মেডিকেল বায়োটেকনোলজি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

এতদিন ধরে বিভিন্ন ইন্ডিভিজুয়াল কেস এর খবর থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞানী মহল মোটামুটি জোর গলায় বলে আসছিলো যে রিইনফেকশনের প্রমান নেই বরং যেসব রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর নানা রকম বিশ্লেষণ থেকে যেসব কারন পাওয়া যায় সেগুলো হলো-

(১) ভুল রিপোর্ট (ফল্টি স্যাম্পল কালেকশন, কন্টামিনেশন, রিএজেন্ট এর মান ইত্যাদি)
(২) কম সেনসিটিভিটি এর কারনে ফলস নেগেটিভ (ন্যাসাল স্যাম্পল এর আরটি-পিসিআর এর সেনসিটিভিটি ৬০-৭০%)
(৩) প্রলং ভাইরাল শেডিং (৫০-৬০ দিন পর্যন্ত এমনকি সর্বোচ্চ ১০৪ দিন পর্যন্ত ভাইরাল শেডিং এর প্রমাণ পাওয়া গেছে)

তো এগুলো দিয়েই বলা হচ্ছিলো রিইনফেকশনের এভিডেন্স নেই। এখন গন্ডগোল বাধিয়েছেন হংকং এর এক লোক। ৩৩ বছর বয়স্ক এই লোকের উল্লেখযোগ্য কোন কোমরবিডিটি নেই এবং মোটামুটিভাবে স্বাভাবিক সুস্থ সবল মানুষ। তিনি ৩ দিনের মাথা ব্যথা, জ্বর সর্দি কাশি নিয়ে ২৬ মার্চ নমুনা পরীক্ষা করিয়ে পজিটিভ হয়েছিলেন এবং ২৯ তারিখে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন যদিও সে সময়ে তার সিম্পটম চলে গেছে। এরপর ১৪ এপ্রিল তার পরপর দুটি স্যাম্পল নেগেটিভ হলে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ নেন।

এই ঘটনার ১৪২ দিন পর এই লোক স্পেন থেকে ইংল্যান্ড হয়ে হংকং এয়ারপোর্টে এসে নমুনা দেন এবং আবার পজিটিভ হন। এসময় তার কোন সিম্পটম ছিল না। তাকে হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়৷ এইবার মাথা খারাপ বিজ্ঞানীরা একটা সুরাহা বের করার সিদ্ধান্ত নেন৷ কপাল গুনে সেই ২৬ মার্চের স্যাম্পল -৮০° ফ্রিজারে প্রিজার্ভ অবস্থায় পাওয়া যায় এবং সেটির জেনোম সিকয়েন্স করা হয়। বর্তমানের নমুনা থেকেও জেনোম সিকয়েন্স করা হয়। এরপর নমুনা দুটির মাঝে কে কার বাপ/ভাই এই সম্পর্ক বের করতে ফাইলোজেনি এনালাইসিস করে দেখা যায় এদের সম্পর্ক দূর দুরান্তের। ২৬ মার্চের স্যাম্পলের মিল পাওয়া যায় আমেরিকান ক্লেড এর সাথে যেটি মার্চ-এপ্রিলের দিকে প্রিভ্যালেন্ট ছিলো এবং এখনকারটার মিল পাওয়া যায় সুইজারল্যান্ড ক্লেড এর সাথে যেটা জুলাই-আগস্টে প্রিভ্যালেন্ট। দেখা যায় প্রথমটার থেকে দ্বিতীয়টার স্পাইক প্রোটিনে ৪টি এমাইনো এসিডের পার্থক্য আছে L18F, A222V, D614G, Q780E। এগুলোর মাঝে ২২২ ও ৬১৪ নাম্বার পজিশন গুলো দুটো বি সেল এপিটোপের (ভাইরাল প্রোটিনের একটি ছোট অংশ যে যায়গার সাথে লিম্ফোসাইট ইন্টারেকশন হয় এবং ইমিউন রেসপন্স তৈরি হয়) মাঝে পড়েছে। এছাড়াও ২২২ পজিশনটা CD4+ T Cell এপিটোপেরও অংশ। এখন কথা হলো মাত্র দুটো এপিটোপের পরিবর্তনে পুরো ইউমিন রিএকশন এর প্যাটার্নই পাল্টে যায় কিনা এটি প্রমাণ সাপেক্ষ। আফসোস এর ব্যপার হলো সেই প্রমাণ করা যায়নি। প্রমাণের জন্য সবচেয়ে সহিহ উপায় হলো সেই প্রথমবার ইনফেকশনে যে এন্টিবডি তৈরি হয়েছিল সেটা কোনভাবে প্রিজার্ভ করে বর্তমান ইনফেকশনের ভাইরাসকে আটকাতে পারে কিনা তা নিউট্রালাইজিং আ্যাসে এর মাধ্যমে দেখা।
দুর্ভাগ্যজনক ভাবে প্রথমবার ইনফেকশনের ১০ দিন পর নেয়া ব্লাডে এন্টিবডি পাওয়া যায়নি এবং এরপর আর ব্লাড স্যাম্পল নিয়ে রাখা হয়নি।

তবে এই গবেষণায় স্পষ্ট যে রিইনফেকশন হয়েছে। এখন কেন হলো, কিভাবে হলো এটিই আলোচ্য বিষয়। আশার কথা হলো রিইনফেকশন হলেও এবারে সিম্পটম নেই। এর কারন হয়তো এমন হতে পারে যে পূর্বের ইমিউনিটি কিছুটা হলেও ফাইট দিয়ে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখে, ডিজিজ সিভিয়ারিটি কমায়। এই ঘটনা ৬টি বানরের উপরে করা আরেকটি পরীক্ষাতেও দেখা গেছে। রিইনফেকশনের সিভিয়ারিটি কম হয়। অন্যদিকে হতাশার কথা হলো সম্ভবত একবার ইনফেকশনে পুরোপুরো ইমিউন হবার মত প্রটেকশন পাওয়া যায়না। সেক্ষেত্রে হয়তো ভ্যাকসিনও আজীবন প্রটেকশন দিতে পারবে না। করোনার অন্যান্য জাতভাইদের মত সিজনাল ফ্লু হিসেবে এটি বার বার ফিরে ফিরে আসতে পারে সম্ভবত দুর্বল রূপে। তবে উল্টোটা হবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেবার উপায় নেই।

মূল রিসার্চ পেপারটি এখান থেকে পড়তে পারেন: http://academic.oup.com/cid/advance-article/doi/10.1093/cid/ciaa1275/5897019

Mosrat Moontaha Shamsi

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

করোনা কথামালাঃ শিশুদের আক্রান্ত হতে দেখে এক মায়ের অনুভূতি

Fri Aug 28 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৮ আগস্ট, ২০২০,শুক্রবার ডা. আফরোজা আকবর সুইটি সহকারী অধ্যাপক ভাইরোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ। কাজের সুবিধার জন্য টেস্ট রিপোর্ট ল্যাব থেকে হাতে পৌঁছানোর আগেই রোগীর অন্যান্য তথ্যাদি কম্পিউটার এ টাইপ করে রাখতে হয়। আসলে একটি শিশুর নাম, বয়স লেখার সাথে সাথেই মাতৃরূপের প্রকাশ শুরু হয়ে যায়। কার বাচ্চা, […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo