বিসিএস এবং কিছু প্রশ্ন ?

 বিসিএস নিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করলাম।
১- অনার্স পাশ করে কি বিসিএস এ আবেদন করা যায় ? নাকি মাস্টার্স লাগে ? উঃ অনার্স ফাইনালের লিখিত পরীক্ষা হয়ে গেলে অনার্স ফাইনালে appeared দেখিয়েও বিসিএস পরীক্ষার জন্য আবেদন করা যায় ।
২- কত নাম্বারের পরীক্ষা ? কি কি বিষয় থাকে ? উঃ প্রথমে ২০০ নাম্বারের প্রিলিমিনারি ( MCQ ) পরীক্ষা হয়, এর মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক পরীক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচন করা হয় । ঠিক কতজন নির্বাচন করা হবে তার কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই, তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষাতে মোটামুটি ৫৫-৬০% নাম্বার পেলে ধরে নেয়া যায় প্রিলিমিনারিতে সফল হবার চান্স বেশি । প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বিষয়গুলো বাংলা, ইংরেজি, গনিত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সাধারণ জ্ঞান, মানসিক দক্ষতা, ভূগোল ও পরিবেশ, নৈতিকতা ইত্যাদি । প্রশ্ন সাধারণত কেমন হয় এজন্য যারা নতুন পরীক্ষা দিচ্ছেন তারা বিগত বছরের প্রিলিমিনারির প্রশ্নগুলো দেখুন , কিছুটা ধারণা হবে । এরপর , প্রিলিমিনারি পরীক্ষা থেকে বাছাইকৃত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৯০০ নাম্বারের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় – বাংলা ২০০ নাম্বার, ইংরেজি – ২০০ নাম্বার, সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী – ২০০ নাম্বার, সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী -১০০ নাম্বার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি -১০০ নাম্বার ( বিজ্ঞান ৫০+ প্রযুক্তি ৫০ ), গনিত ও মানসিক দক্ষতা ১০০ ( গনিত ৫০ + মানসিক দক্ষতার ৫০ টি MCQ ) , লিখিত পরীক্ষায় পাশ নাম্বার ৯০০ এর মাঝে সম্মিলিতভাবে ৫০% অর্থাৎ ৪৫০, প্রতিটি বিষয়ে আলাদাভাবে পাশ করতে হয় এখানে বিষয়টি এমন নয়, তবে কোন বিষয়ে ৩০ এর কম নাম্বার পেলে সেটি আর মোট নাম্বারের সাথে যোগ হয়না । লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের থেকে ভাইভার জন্য নির্বাচন করা হয় । ভাইভা ২০০ নাম্বারের পরীক্ষা , পাশ মার্ক ৫০% । বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্ট লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষার নাম্বার মিলিয়ে সম্মিলিতভাবে দেয়া হয়, লিখিত পরীক্ষায় নাম্বার ৯০০ আর ভাইভাতে নাম্বার ২০০ , তারমানে লিখিত পরীক্ষায় যে যত ভালো নাম্বার পাবে তার পরীক্ষায় সফল হবার সম্ভাবনাও ততো বেড়ে যাবে । বিসিএস পরীক্ষার মূল পরীক্ষাটাই হচ্ছে লিখিত পরীক্ষা ।
৩ – অনার্স পাশ করা যেকেউ কি যেকোনো জেনারেল ক্যাডারের জন্য আবেদন করতে পারবে ? উঃ পারবে , ফরম পূরণ করার সময় আপনি চাইলে চয়েস সবগুলোই দিতে পারবেন । যার যে টাইপ জব ভালো লাগে বা যে ক্যাডার পছন্দ সেভাবে সিরিয়ালি দিতে পারেন, কোন বাধা নেই । আপনি শুধু জেনারেল, শুধু টেকনিক্যাল অথবা both cadre চয়েস দিতে পারবেন যেটা আপনার ইচ্ছা । কয়টা চয়েস দেয়া যাবে এসব নিয়েও কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই , আপনি চাইলে সবগুলো চয়েসই দিতে পারবেন ।
৪ – জেনারেল, টেকনিক্যাল নাকি both cadre কিভাবে ফরম পূরণ করলে সুবিধা ? উঃ আপনি যেভাবেই ফরম পূরণ করুন না কেন শুধুমাত্র ভালো পরীক্ষা দিতে পারলেই আপনার সফল হবার সম্ভাবনা বাড়বে, ফরম পূরণ করা নিয়ে বিশেষ কোন সুবিধা আপনি পাবেন না , তবে এটা তো যেকেউ বুঝবে যে both cadre এ ফরম পূরণ করলে আপনার অপশন বেশি থাকছে তাইনা ? তবে both cadre এ ফরম পূরণ করলে এক নাম্বার চয়েস টেকনিক্যাল ক্যাডার না দিলেই ভালো । অন্তত ৫-৬ টি জেনারেল ক্যাডারের চয়েস দিয়ে পরে আপনি টেকনিক্যাল ক্যাডার চয়েস দিতে পারেন ।
৫ – জেনারেল ক্যাডার কোনগুলো এবং টেকনিক্যাল ক্যাডার কোনগুলো ? উঃ আপনি যেকোনো বিসিএস এর সার্কুলার একটু মনোযোগ দিয়ে পুরোটা পড়লে আপনার অনেক প্রশ্নেরই উত্তর পাবেন । জেনারেল ক্যাডারের মাঝে রয়েছে বিসিএস প্রশাসন, পুলিশ, ফরেন এফেয়ারস, কাস্টমস, ট্যাক্স, অডিট, ইকনোমিক, ফুড, সমবায়, আনসার, ডাক, রেলওয়ে ইত্যাদি । আর টেকনিক্যাল ক্যাডারে পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি আপনার graduation এর বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট জব পাবেন যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সরকারী কলেজের বিভিন্ন বিষয়ের প্রভাষক, কৃষি অফিসার, মৎস্য অফিসার ইত্যাদি ।
৬ – বিসিএস এর সবচেয়ে ভালো ক্যাডার কোনটা ? উঃ অনেকেই এই প্রশ্ন করেন , উত্তর হল একেক ক্যাডার একেক রকম । এক চাকুরী সবার ভালো লাগবেনা এটাই স্বাভাবিক , যার যেই ক্যাডার পছন্দ সেটাই তার জন্য বেস্ট । যেমন কারো পুলিশ পছন্দ বেশি , কারো প্রশাসন পছন্দ, কারো ফরেন, কারো কাস্টমস, কারো ট্যাক্স, কারো অডিট ইত্যাদি । যদি প্রশ্ন করা হয় ভার্সিটির এক নাম্বার সাবজেক্ট কোনটা উত্তর কি হবে ? ভার্সিটিতে কোন স্টুডেন্ট যে বিষয়ে স্টাডি করে খুব ভালো কিছু করতে পারবে সেটাই তার জন্য ১ নাম্বার সাবজেক্ট তাইনা ?
৭ – বিসিএস পরীক্ষার জন্য দৈনিক কয় ঘণ্টা করে স্টাডি করা উচিত ? উঃ একেকজনের পড়ার স্টাইল একেকরকম । একেক বিষয়ে একেকজনের একেকরকম সময় লাগতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক । পড়া হওয়া দিয়ে কথা। সেটা আপনি ৩ মাসে পড়লেন নাকি ৬ মাসে সেটা ফ্যাক্ট না । এটা ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে ।
৮ – প্রিলির জন্য কি কি বই পড়তে হয় ? উঃ বই এর কোন শেষ নেই । প্রথমে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে ধারণা নিন প্রশ্ন কেমন হয়, পরে প্রতিটি বিষয়ের যেকোনো একটি বই মোটামুটিভাবে পড়ে ফেলার চেষ্টা করুন । বাজারে যেসব গাইড আছে সেগুলোও ভালোই । আগে প্রতিটি বিষয়ের জন্য যেকোনো একটি করে বই পড়ে ফেলুন, পরে সময় পেলে নিজের জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করুন , ব্যস । যেই বই থেকেই পড়ুন ভালমতো পড়ুন, একটি বিষয়ের ৫-১০ টি বই আধো আধো না দেখে একটি বই ভালমতো দেখুন সেটা কাজে আসবে ।
৯ – নন- ক্যাডার কি ? উঃ যারা প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাশ করার পর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভাইভা পরীক্ষা দিয়ে ভাইভাতেও পাশ করে কিন্তু বিসিএস ক্যাডার হতে পারে না ( আসন সংখ্যা সীমিত থাকার কারনে ) ।
পরে নন- ক্যাডারদের মধ্যে যারা সিরিয়ালে সামনের দিকে থাকে তাদের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট এর চাকুরীর জন্য সুপারিশ করা হয় ।
১০ – both cadre এ পরীক্ষা দিলে কি বেশি পরীক্ষা দেয়া লাগে ? উঃ হ্যাঁ, তখন মোট ১১০০ নাম্বারের পরীক্ষা দিতে হয়, অতিরিক্ত আপনার graduation এর সাবজেক্টের ১ম পত্র আর ২য় পত্র এই ২ টি ২০০ নাম্বারের পরীক্ষা আপনাকে অতিরিক্ত দিতে হবে , প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা সিলেবাস থাকে ।
১১ – both cadre এ কি সবাই পরীক্ষা দিতে পারবে ? উঃ তার graduation এর বিষয়ের সাথে related টেকনিক্যাল ক্যাডার থাকলে সে পরীক্ষা দিতে পারবে । এই হিসেব অনুযায়ী সবাই পারেনা ।
১২ – লিখিত পরীক্ষায় আর ভাইভা পরীক্ষায় কত নাম্বার পেলে ক্যাডার হওয়া যায় ? উঃ এটার কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই, একেকবার একেক টাইপ হয়ে থাকে । তবে আমার যেটা মনে হয় লিখিত পরীক্ষায় ৫৫০ প্লাস নাম্বার একটি ভালো নাম্বার ।
১৩ – ডাক্তাররা নাকি জেনারেল বিসিএস দিতে পারেনা ? বা দিলেও নাকি ভাইভা তে সমস্যা হয় ? উঃ ডাক্তাররা জেনারেল বিসিএস দিতে পারে, ভাইভাতে শুধু উত্তর দিতে হবে কেন একজন ডাক্তার জেনারেল ক্যাডারে যেতে চায় । ভাইভা তে খুব বেশি সমস্যা হয় বিষয়টা এমন নয় । এসব নিয়ে অনেকেই মিসগাইড করে । লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা যার ভালো হবে তার সফল হবার সম্ভাবনা বেশি থাকবে ।
১৪ – জাতীয় ভার্সিটি থেকে কি বিসিএস দিতে পারে? সেখান থেকে কি ক্যাডার হয় ? উঃ পারবে না কেন ? অবশ্যই পারবে । ক্যাডার হবেনা কেন, পরীক্ষা যার ভালো হবে তারই সফল হবার সম্ভাবনা বেশি, কে কোথায় কোন বিষয়ে পড়েছে এটা ফ্যাক্ট না ।
১৫- প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে কি ক্যাডার হয় ? উঃ হবেনা কেন ? একই উত্তর, কে কোথায় স্টাডি করেছে এটার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কে কেমন পরীক্ষা দিলো সেটা, পরীক্ষা ভালো দিলে তো অবশ্যই হবার সম্ভাবনা থাকবে ।
১৬- ডাক্তাররা both cadre চয়েস দিয়ে প্রথম চয়েস হেলথ ক্যাডার দিলে সমস্যা কি? উঃ প্রথম চয়েস যদি হেলথ ক্যাডারই দেয়া হবে তাহলে both cadre চয়েস দেয়ার দরকার কি?কারণ এক্ষেত্রে আপনি যত ভালো নাম্বারই পান না কেন আপনার হেলথ ক্যাডারেই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে । ডাক্তার যারা জেনারেল ক্যাডার চয়েস দিতে চান তারা অবশ্যই শুরুর কয়েকটি চয়েস জেনারেল ক্যাডার দিয়ে পরে হেলথ চয়েস দিতে পারেন ।
১৭- ভার্সিটি এর শুরু থেকেই কি চাকুরীর জন্য পড়বো বা কিভাবে শুরু করবো ? উঃ ভার্সিটির শুরু থেকে আপনি আপনার graduation এর সাবজেক্টে ভালো রেজাল্টের জন্য চেষ্টা করা উচিত । বিসিএস ই একমাত্র পেশা নয়, আপনি ফাইনাল ইয়ারের দিকে এসে ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করুন , এতো আগে থেকে এসব বোরিং বিষয় নিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে নিজের ক্যাম্পাস লাইফের আনন্দ মাটি করার দরকার নেই ।
ভালো থাকবেন সবাই, Good luck.
লেখকঃ আরিয়ান আহমেদ সহকারী কমিশনার(ট্যাক্স) ঢাকা মেডিকেল কলেজ সেশনঃ ২০০৩-০৪
প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটারঃ উর্বী সারাফ আনিকা ৫ম বর্ষ রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ঠাকুরগাঁও মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের ঈদ পুনর্মিলনী,সংবর্ধনা ও নতুন কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠান

Mon Aug 27 , 2018
প্রতি বছরের মতো এবারও, “Medical & Dental Students Association of Thakurgaon (বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন, ঠাকুরগাঁও জেলা শাখা কর্তৃক অনুমোদিত সংগঠন)”- এর আয়োজনে “ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাল্টি পারপাজ হলে” ঈদ পূণর্মিলনী, নবীন বরণ এবং ইন্টার্ন ডাক্তারদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বর্তমান সভাপতি ডাঃ সাদমান সাকিব এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo