প্লাজমা থেরাপি সম্পর্কে জানুন, মানুষকে জানান

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৬ মে ২০২০, শনিবার

‘প্লাজমা থেরাপি’ ইদানিং কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আলোর সঞ্চালন করেছে। চলুন, এই প্লাজমা থেরাপি কি, কিভাবে কাজ করে, এর উপযোগিতা, বিশ্ব এবং বাংলাদেশ পরিস্থিতি, প্লাজমা সংগ্ৰহ, সংরক্ষণ এবং কারা কিভাবে দান করতে পারবেন জেনে আসি।

প্লাজমা এবং প্লাজমা থেরাপি:

• প্লজমা হল রক্তের তরল, হালকা হলুদাভ অংশ। রক্তের উপাদান প্রধানত দুইটি। রক্তরস এবং রক্তকনিকা। মানুষের রক্তে শতকরা ৫৫ ভাগ রক্তরস থাকে। এই রক্তরসের ভিতরে শতকরা ৭.৫-৮ ভাগ প্রোটিন থাকে। এই প্রোটিনের গ্লোবিউলিন অংশে থাকে এন্টিবডি, যা ইমিউনোগ্লোবিউলিন নামে পরিচিত। এটি আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ৩-৭ দিনের মধ্যে তৈরি হয়। আর প্লাজমা থেরাপি হল আক্রান্ত সুস্থ ব্যক্তির শরীর থেকে রক্তরস নিয়ে অসুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্রদান করা।

প্লাজমা থেরাপি কিভাবে কাজ করে:

• করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীর জ্বর, কাশি ও গলাব্যথা শুরু হয়। ভাইরাসের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং ফুসফুসে সংক্রমণ করে। এই প্রদাহকালীন সময়ে নানা ধরনের সাইটোকাইন এবং কেমোকাইন বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হয়ে ফুসফুসে জ্বালা করে এবং শ্বাসকষ্ট হয়। আর এই ধরনের সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে লাঘব করতে পারে এই প্লাজমা থেরাপি।

• প্লাজমা থেরাপির শক্ত বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে। এটি মানুষের শরীরে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করে। করোনা ভাইরাসের এখন পর্যন্ত কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। আর প্লাজমা থেরাপির কোন ক্ষতি নেই। তাই জটিল কোভিড রোগিদের চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপির প্রয়োগ ইতিবাচক।

• বিভিন্ন স্টাডিতে দেখা গেছে ৪০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত এটা কার্যকর হয়েছে।

বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিস্থিতি:

• বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতিমধ্যে প্লাজমা থেরাপির প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে এবং এটি প্রয়োগে একটি প্রটোকল প্রনয়ন করেছে এবং এই থেরাপি প্রয়োগের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেসব করোনা রোগী আছেন তাদের উপর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। পরবর্তীতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতাল সমুহে প্রয়োগ করা হবে।

• বাংলাদেশে প্রায় ১৮ টি এ্যফেরেসিস মেশিন আছে যার মাধ্যমে করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তির রক্ত থেকে প্লাজমা তৈরি করা সম্ভব। রক্ত থেকে ২০০ মিলি প্লাজমা তৈরি করতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। ১ টি মেশিন দিয়ে দিনে ১০-১২ জনের প্লাজমা নেওয়া সম্ভব।

• সম্প্রতি ইরান ঘোষণা করেছে তারা প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করেই করোনায় মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া চীন, যুক্তরাষ্ট্র, এবং ইউরোপের অনেক দেশেই প্লাজমা থেরাপি সফলভাবে চালু করেছে।

কেন প্লাজমা এখন সংগ্ৰহ এবং সংরক্ষণ করা জরুরি:

• দেশে যেহেতু করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং এই চিকিৎসা পদ্ধতি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে। তাই এখনই সময় করোনা থেকে সুস্থ হয়ে যাওয়া মানুষের কাছ থেকে প্লাজমা সংগ্ৰহ ও সংরক্ষণ করার। প্লাজমা সংগ্ৰহের পর -৪০ থেকে -৫০ ডিগ্ৰি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২৪ মাস বা ২ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা যায়।

প্লাজমা সংগ্ৰহের নিয়ম:

• একজন করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠা ব্যক্তির শরীর থেকে ১০ মি.লি/কেজি পরিমাণ প্লাজমা নেওয়া যায়। সাধারণত একজন ব্যক্তি করোনা উপসর্গ থেকে মুক্তির ২৮ দিন পর অথবা ১৪ দিন পর (এক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টা ব্যাবধানে পর পর দুই টি করোনা ভাইরাস টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে) প্লাজমা দান করতে পারবেন।

কোথায় যোগাযোগ করবেন:

• করোনা উপসর্গ থেকে মুক্ত হওয়া একজন ব্যক্তি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ”রক্ত সঞ্চালন বিভাগে” অথবা সন্ধানীর সহযোগীতায় প্লাজমা দান করতে পারবেন। এ ব্যাপারে সন্ধানীর ফেসবুক পেজ অথবা হটলাইন নম্বরে (01791952353, 01785648622) যোগাযোগ করতে পারেন।

পরিশেষে:

• জাতির এই ক্রান্তিকালে প্রত্যেকেই তার অবস্থান থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে পারে। ঘরে থেকে, অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করে, অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে অথবা করোনা থেকে শুরু সুস্থ হয়ে উঠছেন, এমন ব্যক্তিকে প্লাজমা দানে উদ্বুদ্ধকরনের মাধ্যমে আপনি এই জাতীয় দুর্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। মনে রাখবেন ১জন মানুষের প্লাজমা ৩ জন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে। তাই আসুন থমকে থাকা পৃথিবীতে মানবতার কল্যাণে সবাই এগিয়ে আসি।

ডা: মো: হামিদুল ইসলাম (হিমেল)
রেসিডেন্ট এম এস (অর্থো)
বি এস এম এম ইউ

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯: আরো ১৬ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ৯৩০ জন

Sat May 16 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, শনিবার, ১৬ মে, ২০২০ গত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৯৩০ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন আরো ১৬ জন ও আরোগ্য লাভ করেছেন ২৩৫ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগী ২০,৯৯৫ জন, মোট মৃতের সংখ্যা ৩১৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন মোট ৪,১১৭ জন। দুপুর ০২.৩০ […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo