রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫
দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থায় নারী স্বাস্থ্য এখনও গুরুত্ব পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন দেশের অন্যতম গাইনি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার।
তিনি বলেন, নারীদের জন্য আলাদা অসংখ্য রোগ আছে। সেই বিবেচনায় আলাদা স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হলে চিকিৎসাসেবা যেমন গুরুত্ব পাবে, তেমনি গবেষণাও বাড়বে। আমাদের মায়েরা অনেক বেশি সুরক্ষিত থাকবেন।
রোববার (২৫ মে) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) শহীদ আবু সাইদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ‘ইলেক্ট্রনিক ডাটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং’ কর্মসূচির ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ডা. সায়েবা আক্তার বলেন, দেশে মেডিসিন ও সার্জারির বিভিন্ন বিষয়ে ১৮টি ইনস্টিটিউট গড়ে উঠেছে। কিন্তু নারী স্বাস্থ্যের জন্য আজও কোনো ইনস্টিটিউট হয়নি। অথচ আমাদের নারীদের জন্য রয়েছে মাসিক, গর্ভাবস্থা, প্রসবকালীন জটিলতা, মেনোপজ, প্রজননস্বাস্থ্য, হরমোন সংক্রান্ত জটিলতা, স্তন ও জরায়ুমুখ ক্যানসারসহ অনেক স্বাস্থ্যঝুঁকি—যা পুরুষদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে সরাসরি মেলানো যায় না। তাই নারী স্বাস্থ্যের জন্য আলাদা ইনস্টিটিউট সময়ের দাবি।
তিনি আরও বলেন, জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার কোনো একটা পরিবারে হলে সবাই জানে, ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করা কত কঠিন—শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে এবং আর্থিকভাবে। শুধু যে একজন নারী আক্রান্ত হন তা নয়, পুরো পরিবারকে এই যুদ্ধে অংশ নিতে হয়। আমরা মাতৃমৃত্যুর কথা বলি, সেটা অনেক সময় হঠাৎ ঘটে। কিন্তু ক্যানসার রোগীরা ধুঁকে ধুঁকে মারা যান। একজন নারী ক্যানসারে আক্রান্ত হলে কেবল তিনি নন, তার সন্তান, স্বামী, পরিবার—সবাই ভোগে।
বিএমআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দেশে এখনো মেয়েদের চিকিৎসা নিতে গেলে অনেক প্রতিবন্ধকতা আসে। সামাজিক ট্যাবু, আর্থিক সংকট, এবং চিকিৎসা-সেবার অভাব তাদের চিকিৎসা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। তাই প্রয়োজন একটি এমন প্রতিষ্ঠান, যেখানে নারীরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন, যেখানে থাকবে নারী চিকিৎসক, নারীদের জন্য উপযোগী প্রযুক্তি ও পরিসেবা।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই, নারী স্বাস্থ্য নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট গড়ে উঠুক, যেখানে নারী ও শিশুদের সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা থাকবে। নারীরা ফার্স্ট ক্লাস সিটিজেন, তাদের চিকিৎসাও হতে হবে সেই মর্যাদার সঙ্গে। এ ইনস্টিটিউটে গবেষণা, উন্নত প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ, এবং আস্থা—সব থাকবে। সরকার চেষ্টা করছে, কিন্তু আরও উদ্যোগী হতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচির আওতায় গত পাঁচ বছরে (২০২১–২০২৫) মোট ৩৮ হাজার ১৮৩ জন নারী স্ক্রিনিং করান। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৩১ জনের শরীরে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) শনাক্ত হয়। এতে গড় আক্রান্তের হার ৩.৭৫ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এই হার অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে দেশে নারীদের ক্যানসারের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাবে। একমাত্র সময়মতো স্ক্রিনিং, সচেতনতা এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব।