জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ রক্ষার জন্য আবেদন

শিক্ষার্থীদের কল্যাণ ও জনস্বার্থ সহ সার্বিক দিক বিবেচনা পূর্বক জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে বর্তমান অবস্থান হতে অন্যত্র স্থানান্তর না করে বর্তমান অবস্থানেই বহাল রাখার বিষয়ে সদয় বিবেচনা করার জন্য মাননীয় সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা একান্ত ভাবে কামনা করছি।
13664680_1342858882408207_92798788_n

সিলেটে, গতকাল দুপুরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মানবিক আবেদন জানান “জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ” এবং “বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী নার্সিং কলেজ” এর শিক্ষার্থীবৃন্দ। তারা বলেন-
“নিয়ম অনুযায়ী যেকোন মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি সংখ্যার অনুমোদন দেওয়া হয় রোগীর বেড সংখ্যার অনুপাতে। ৫ শয্যার বিপরীতে ১ জন শিক্ষার্থী।তথা ২৫০ শয্যার বিপরীতে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেওয়া হয়। বর্তমানে এই কলেজে ১৯০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন রয়েছে। এই ১৯০ জন শিক্ষার্থীর জন্য অন্তঃত ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল সহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে।যা অত্যন্ত কঠিন, সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুলও বটে।
মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনার প্রতি আমাদের পূর্ণশ্রদ্ধা রয়েছে।তবে এই রায়ের ফলে আমাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে আমরা চরম উৎকন্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি।”
এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ সুপ্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি বন্ধ হয়ে গেলে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হবে শত শত শিক্ষার্থীর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন। চলমান পাঁচটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জীবনে নেমে আসবে সুগভীর হতাশা।অভিভাবকদের মনে সঞ্চার হবে সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশংকা ও ভয়!” – বলেন তারা।

13872819_1342456219115140_4857703887848551297_n

জানা যায়,গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ বিগত ১৯শে জানুয়ারী তারাপুর চা বাগানকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া সংক্রান্ত সতেরটি নির্দেশনা প্রদান করেন।যার একটিতে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতার দরুন সিলেট জেলার তারাপুরস্থ জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে বর্তমান অবস্থান থেকে অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ আঠাশে জুলাই, রোজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১ ঘটিকায় নগরীর সুবিদবাজারস্থ সিলেট প্রেসক্লাবে এবং পরবর্তীতে দুপুর ৩ ঘটিকায় জিন্দাবাজারস্থ সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী নার্সিং কলেজের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীবৃন্দ।
দেশের বেসরকারী মেডিকেল কলেজ সমূহের মধ্যে সিলেটের জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল অন্যতম। এই কলেজে রয়েছে ২টি ১০ তলা বিশিষ্ট ভবন।যার প্রতিটি ভবনের প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ১৩,৩০০ বর্গফুট। ছয়তলা বিশিষ্ট ৩টি হাসপাতাল ভবন, লেকচার গ্যালারী, ৫ তলা বিশিষ্ট ৪টি ছাত্রাবাস মিলিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের ভবনসমূহের সর্বমোট আয়তন ৭,৯৩,০০০ বর্গফুট। আন্ডার কন্সট্রাকশনে রয়েছে প্রায় ৮৭ হাজার বর্গফুট।

দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলী, পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো।স্বল্প খরচ, চিকিৎসা সেবার মান, পাশের হার, সর্বোপরি পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রতিবছর স্বনামধন্য এই কলেজে অসংখ্য দেশী-বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির জন্য আগ্রহী হয়। বর্তমানে এই কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০০৮ জন। তার মধ্যে বিভিন্ন দেশের বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন ৩১৮ জন। নার্সিং বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৪২ জন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে সর্বমোট ১৬৯২ জন শিক্ষক, চিকিৎসক সহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন।
13867148_1342858842408211_1477353748_n

১৯৯৪-১৯৯৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে সর্বমোট ২৬০৭ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছেন। তার মধ্যে জানুয়ারী, ২০১৬ পর্যন্ত ১৫৬৫ জন ছাত্র-ছাত্রী চূড়ান্ত পেশাগত এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।ইন্টার্নশিপ ট্রেইনিং সম্পন্ন করেছেন ১৩৯৬ জন চিকিৎসক, এবং বর্তমানে ইন্টার্নশিপ ট্রেইনিংয়ে রয়েছেন ১৬৯ জন চিকিৎসক। উল্লেখ্য,এই কলেজ থেকে পাশকৃত চিকিৎসকগণ অত্যন্ত সুনামের সাথে দেশ-বিদেশের নামকরা প্রতিষ্ঠান সমূহে কর্মরত আছেন। প্রতিবছর কলেজের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রাক্তন শিক্ষার্থী সফলতার সাথে দেশে-বিদেশে উচ্চ শিক্ষা তথা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে চলেছেন।

জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল বৃহত্তর সিলেটের চিকিৎসা ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। ১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করা এই হাসপাতালটি সুদীর্ঘ ২২ বছর ধরে বৃহত্তর সিলেটের জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছে। ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট এই অত্যাধুনিক হাসপাতালে রয়েছে ১২০টি কেবিন এবং ১৬টি ICU বেড। অত্যাধুনিক মানের
৯টি অপারেশন থিয়েটার, ICU, CCU, NICU সহ সকল বিভাগেই রয়েছেন প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ ও অভিজ্ঞ অধ্যাপক, লেকচারার এবং সহযোগী কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। বিশ্বের সর্বাধুনিক মানের 128 slice CT scan, 1.5 Tesla MRI, Endoscopy, Colonoscopy, ERCP, Neurosurgery Operating Microscope, Dialysis মেশিন ইত্যাদি সহ প্রতিটি বিভাগই অত্যাধুনিক মানের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি দ্বারা সুসজ্জিত।ফলে মাত্র বিশ টাকা টিকেটের বিনিময়ে এখানে আগত রোগীরা নিতে পারছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ।
সংবাদ সম্মেলনে ভবিষ্যৎ চিকিৎসকেরা হাসপাতাল স্থানান্তরের অসুবিধাসমূহের দিকে আলোকপাত করেন এবং স্থানান্তরের ফলে সেবার মান কমে যাওয়ার আশংকা প্রকাশ করে বলেন-“৯টি ওটি কমপ্লেক্স সহ বিভিন্ন বিভাগে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা সম্বলিত যন্ত্রপাতিসমূহ স্থানান্তর করতে গেলে এসবের কার্যকারিতা হারানোর সমূহ সম্ভাবনা থেকে যাবে।”
তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন- “আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রায় পাঁচ শতাধিক ওয়ার্ডবয়, আয়া, মাসী, ওটিবয়, ক্লিনার কর্মরত রয়েছেন। যাদের অধিকাংশই অত্র প্রতিষ্ঠানের আশে পাশের এলাকার অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী থেকে এসেছেন। এই মুহূর্তে হাসপাতালের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে তাদের পরিবার পরিজন সহ পথে নামতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনায় শিক্ষার্থীদের সার্বিক দিক নির্দেশনা প্রদান করেন ডাঃ মোহাম্মদ ফজলুল হক, ডাঃ গোলাম মর্তুজা, ডাঃ আবু তাহের, ডাঃ জুনেদ এবং ডাঃ এস.এম. দীপু। কলেজের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে সম্মেলনে স্মারকলিপি পাঠ করেন আশিকুর রহমান শ্রাবণ।
13669601_1342455715781857_5373008534068017389_n (1)

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান শেষে উপস্থিত শিক্ষার্থীবৃন্দ গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা কামনা করে বলেন- “আমরা যারা শিক্ষার্থী রয়েছি তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে কোনভাবেই যেন কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়।সেই বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে আমরা আপনাদের মাধ্যমে মহামান্য আদালত ও সরকারের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।” এদিকে…. সিলেটবাসীর ব্যানারে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ, ঐতিহ্যবাহী মদন মোহন কলেজের তারাপুর ক্যাম্পাস, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, তারাপুর মৌজায় অবস্থিত কয়েকশত বাসা বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষায় শান্তিপূর্ণ মানব বন্ধন করেছেন সর্বস্তরের মানুষ।


সুবিদ বাজার থেকে মদিনা মার্কেট পর্যন্ত বিস্তৃত এ মানব বন্ধনে এলাকাবাসী মাথা গোজাঁর শেষ আশ্রয়স্থল কেড়ে না নিতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও সিলেটের কৃতি সন্তান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সুদৃষ্টি কামনা করেন। এসময় মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা মাননীয় জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রেরণের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষর প্রদান করেন।

উল্লেখ্য,জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও গত সোমবার শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত না হওয়ার দাবিতে মৌন র‍্যালী করা হয়। এছাড়াও কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ আগামী ৩০শে জুলাই শনিবার, সকাল ১১ ঘটিকায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শান্তিপূর্ণ মানব বন্ধনের ঘোষণা দিয়েছেন

Ishrat Jahan Mouri

Institution : University dental college Working as feature writer bdnews24.com Memeber at DOridro charity foundation

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

জীয়ন-সবার জন্য স্বাস্থ্য

Sat Jul 30 , 2016
লিখেছেন ঃ ডাঃ মোহিব নীরব, প্রতিষ্ঠাতা-প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের প্রায় ৮৬ হাজার গ্রামের ১০ কোটি মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য পল্লী চিকিৎসক অথবা ওষুধের দোকানদারের কাছে যায়। অপ্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে চিকিৎসা গ্রহণ যেমন স্বাস্থ্যের দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ, অধিকার হিসেবে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। হ্যাঁ, বাংলাদেশ সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo