চিকিৎসক সানজানা জেরিন

সাত মাস ধরে চিকিৎসক সানজানা জেরিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। উন্নতি বলতে এখন চোখ দুটো মেলতে পারেন। তবে দুই চোখ খোলা থাকলেও সে চাহনিতে কোনো প্রাণ নেই। চোখের সামনে স্বামী বা আপনজনকে দেখলেও চোখ থাকে ভাবলেশহীন। মাঝে মাঝে বাম হাত নাড়ান। ব্যথায় শরীর কুঁকড়ে গেলে শুধু চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়ে। মুখে কিছুই প্রকাশ করতে পারেন না।

গত বছরের ২৪ আগস্ট ছিনতাইয়ের ঘটনায় জেরিনের এই পরিণতি। ফলে জেরিনের স্বামী চিকিৎসক মুনতাহিদ আহসানের স্ত্রীকে নিয়ে সুখের ঘর বাঁধার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে। ৩৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হন এই চিকিৎসক দম্পতি। গত ৭ আগস্ট জেরিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়োগ পান। ২৪ আগস্ট ভোর ছয়টার দিকে রিকশায় করে স্বামীর সঙ্গে জেরিন তাঁর কর্মস্থল ফেনীর পরশুরামে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। রাজধানীর কমলাপুর ফুটবল স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কার থেকে জেরিনের হাতব্যাগে হ্যাঁচকা টান দেওয়া হয়। এতে জেরিন ১০-১৫ ফুট দূরে পড়ে গিয়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পান।

বিয়ের এক বছর পাঁচ মাসের মাথায় ছিনতাইয়ের এ ঘটনা ঘটে। বিদেশে হানিমুনে যাওয়ার জন্য জমিয়ে রাখা টাকা দিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসা শুরু করেন মুনতাহিদ।

১৪ মার্চ ছিল এই দম্পতির বিয়ের দ্বিতীয় বার্ষিকী। দিনটি কেটেছে হাসপাতালে। স্বামী দিনটির মর্ম বুঝলেও স্ত্রী তা বুঝতে পেরেছেন কি না, তা-ও জানার উপায় নেই। কেননা, ঘটনার পর থেকে জেরিন জীবিত থেকেও মৃত হয়ে আছেন। মুনতাহিদের ভাষ্য, ‘আমার মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা, আমার মাথার সিটিস্ক্যান করাও’- এ কথা বলেই জ্ঞান হারান জেরিন। এটাই ছিল জেরিনের মুখ থেকে শোনা শেষ কথা। এর পর থেকে তিনি নির্বাক, বলতে গেলে নিথর। লাইফসাপোর্টে ছিলেন জেরিন। তবে আপাতত লাইফসাপোর্ট ছাড়াই তিনি বেঁচে আছেন।

মুনতাহিদ বলেন, ‘জেরিন তাকিয়ে থাকে। তবে আমি জানি না সে চোখে দেখে কি না। সে আমার কথা শুনতে পায় কি না, তা-ও বুঝতে পারি না। তবে আমি হেরে যেতে চাই না। আমার বিশ্বাস, চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারলে সে একদিন না একদিন আবার আগের মতো সব বুঝতে পারবে।’

ঘটনার পর জেরিনকে প্রথমে আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়ন্সে ভর্তি করা হয়। পরে নেওয়া হয় কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে। তারপর বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। আবেদন করায় বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনায় আইসিইউর ভাড়া নিচ্ছে না। এর পরও এ পর্যন্ত জেরিনের চিকিৎসার পেছনে খরচ হয়ে গেছে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত এই দম্পতির আত্মীয় এবং বন্ধুবান্ধবই ভরসা। তাঁরাই সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন।

মুনতাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেরিন একজন সরকারি চাকরিজীবী। কর্মস্থলে যাওয়ার পথেই দুর্ঘটনার শিকার হন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জেরিনের চাকরি নিয়মিতকরণ ও বেতন-ভাতার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি। তা এখন প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদনে জেরিনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছি। বিদেশ নেওয়া সম্ভব না হলেও প্রধানমন্ত্রী অন্য কোনো বিশেষ সহায়তা যদি দেন, সে আশায় আছি।’ বিএসএমএমইউর অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন,‘ চিকিৎসক জেরিনের অবস্থার কতটুকু উন্নতি হবে তা বলা সম্ভব না। তিনি এখনো অচেতন। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।’

ঘটনার পর মুগদা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে মামলা করেছেন মুনতাহিদ। থানা থেকে সন্দেহভাজন ধরে মুনতাহিদকে ফোন দেওয়া হয়। মুনতাহিদ বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি শুধু একটি হাত দেখেছি। তা দেখে তো আর কাউকে দোষী বলা যায় না।’ মুনতাহিদ ও জেরিন দুজনের পরিবারই মধ্যবিত্ত। এই দম্পতি পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। তাঁরা ছিলেন একই ব্যাচের শিক্ষার্থী। জেরিনের বাবার স্বপ্ন ছিল একটাই, তা হলো জেরিন চিকিৎসক হয়ে মানুষকে সেবা করবেন। জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় ভালো ফল করা জেরিনের বাবার সেই আশা পূরণ করতে চলেছিলেন। কিন্তু শুধু একটি ঘটনায় সব শেষ হতে চলেছে।

জেরিনের সহায়তায় কেউ এগিয়ে আসতে চাইলে মোহাম্মদ মুনতাহিদ আহসান ভূঞা, ব্র্যাক ব্যাংক, মতিঝিল শাখা, হিসাব নম্বর-১৫১৩২০২৫০৬৬৮১০০১ এই ঠিকানায় আর্থিক সহায়তা করতে পারেন।

প্ল্যাটফর্ম ওয়েব

One thought on “চিকিৎসক সানজানা জেরিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

শের-ই-বাংলা মেডিকেল ক্যাম্পাস নিউজ

Wed Mar 18 , 2015
– প্রতিবেদকঃ ধূসর আসিফ। টানা ৩৫ দিন যাবত শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ থমকে আছে। বন্ধ হয়ে আছে শিক্ষাকার্যক্রম। শুধুমাত্র প্রফ পরীক্ষা এর আওতামুক্ত আছে। সকল ছাত্রছাত্রীর মনে গভীর উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা কাজ করছে। কয়েকবার ক্লাস শুরুর ঘোষনা দিয়েও ক্লাস শুরু করা সম্ভব হয় নি। আগামী শনিবার থেকে আবারো ক্লাশ শুরুর ঘোষনা […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo