গর্ভের ৩য় ৩ মাসের গর্ভকালীন সময়ে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও পরামর্শ

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৩ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার

অধ্যাপক ডা. ফাতেমা আশরাফ
বিভাগীয় প্রধান (অবস্ ও গাইনী)
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

গর্ভের ৩য় ৩ মাসের গর্ভকালীন স্বাভাবিক সমস্যা গুলো কি কি?

১. এ সময় শরীর ভারী হয়ে পড়ে। চলা ফেরায় অস্বস্তি তৈরি হয়। হাঁটা-উঠা-বসাতে কোমরের দিকে কিছু ব্যথা অনুভূত হতে পারে। অনেক সময় শোয়া অবস্থায় কাত ফিরাতে সমস্যা হতে পারে।

২. শ্বাস প্রশ্বাসের উঠানামা ও হৃদস্পন্দন কিছুটা বাড়তে পারে। কখনো কখনো শ্বাস প্রশ্বাসে অস্বস্তি অনুভব হতে পারে।

৩. পেটের ভেতর বাচ্চার নড়াচড়া মা বেশি অনুভব করেন এবং সজোরে ধাক্কা দিলে মা ব্যথা অনুভব করতে পারেন।

৪. পায়ে কিছুটা পানি আসতে পারে, বিশেষ করে পা অনেকক্ষণ ঝুলিয়ে বসে থাকলে পা ফুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৫. খাবার পর পেটে অনেক বেশি ভরা লাগতে পারে এবং অনেকক্ষণ পর্যন্ত এই অনুভূতি থাকে। হরমোন জনিত বিষয়ে পেটের নাড়ীর নড়াচড়া কমে আসার কারণে এমন টা হতে পারে।

৬. কখনও কখনও শেষ দিকে বমির সমস্যাটি দেখা দিতে পারে।

৭. এই সময়ে কিছুটা মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। সহজে ক্লান্ত হওয়া, মেজাজ খিটিমিটি ইত্যাদি হতে পারে।

৮. এ সময়ে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হতে পারে। বাচ্চার মাথা নিচে নেমে আসার কারণে এমনটি হয়ে থাকে।

৯. কারো কারো ক্ষেত্রে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়।

১০. গর্ভের একদম শেষদিকে অর্থাৎ ডেলিভারির প্রত্যাশিত তারিখের ৩-৪ সপ্তাহ পূর্ব থেকে মাঝে মাঝে অনিয়মিত ভাবে পেট শক্ত হয়ে যেতে পারে। এটি প্রসব পূর্বে জরায়ুমুখের প্রস্তুতি হিসেবে মেনে নিতে হবে।

৩য় ৩ মাসের স্বাভাবিক সমস্যাগুলোর জন্য করণীয়ঃ

১. সাধারণ সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে এবং মেনে নিতে হবে।

২. পেট শক্ত হলে বা হালকা ব্যথা হলে, বাম কাত হয়ে শুয়ে থাকতে হবে। পানি বা পানি জাতীয় জিনিস বেশি পান করতে হবে।

৩. পায়খানা নরম রাখতে হবে এবং নিয়মিত শৌচকার্য করতে হবে।

শাক-সবজি, ফল-মূল, পানি বা পানি জাতীয় জিনিস বেশি খেতে হবে।

৪. ঘুমের অসুবিধা থাকলে ঘুম না হওয়ার কি কারণ, যেমনঃ গরম লাগা, পানি স্বল্পতা, মানসিক চাপ ইত্যাদি বিষয়ে যত্ন নিতে হবে। ঘুমের সময়ে পছন্দের গান শোনা যেতে পারে অথবা ঘুমের জন্য কিছু মানসিক চর্চা বা ব্যায়াম করা যেতে পারে।

৩য় ৩ মাসে (3rd trimester) মা কি কি জটিলতার শিকার হতে পারেন?

৩য় ৩ মাস গর্ভধারণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ে কিছু  কিছু জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, যা হয়ত আগের সমস্যার ধারাবাহিকতায় হচ্ছে বা নতুন করে সৃষ্টি হতে পারে।

১. পেটে ব্যথাঃ কোমর থেকে শুরু করে পেটের নিচের দিকে ব্যথা হওয়া, যা কি না নির্দিষ্ট সময় পর পর হতে থাকে এবং উরুর দিকে আসতে পারে। এই ব্যথার সঙ্গে পেট ও থেমে থেমে শক্ত হয়। সেই সঙ্গে রক্তমিশ্রিত পিচ্ছিল তরল মাসিকের রাস্তায় আসতে পারে- এ রকম হলে মনে করতে হবে, মায়ের প্রসব ব্যথা শুরু হয়েছে। মায়ের প্রসব বেদনা যদি তার প্রত্যাশিত ডেলিভারী তারিখের কাছকাছি হয়, তাহলে ভয়ের কিছু নাই, কিন্তু তারিখ থেকে যদি ৩ সপ্তাহ বা ততোধিক পূর্বে প্রসবের ব্যথা শুরু হয়, তাহলে এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। সে ক্ষেত্রে বাচ্চা কম পোক্ত থাকে (premature), যা কিনা বাচ্চার জন্য অনেক ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে। এই সব বাচ্চা স্বাভাবিক বা সিজারিয়ান যেভাবেই ডেলিভারি হোক না কেন, জন্মের সময় যেমন তারা ঝুঁকিতে থাকে, তেমনি জন্মের পরে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যথেষ্ট পরিমানে কমে যাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় ইনফেকশন হওয়া, শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখার ক্ষমতা ও দূর্বল থাকে। তাদের ব্রেইন এর পূর্ণতা (Maturity) ও কম থাকলে ভবিষ্যতে সুস্থ দেহে বেড়ে ওঠা বা সঠিক মেধাসম্পন্ন হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। তাই প্রত্যাশিত ডেলিভারির তারিখের বেশী আগে প্রসব বেদনা উঠলে তাকে শুরুতেই কমানোর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে অথবা হাসপাতালে আসতে হবে।

২. বাচ্চার নড়াচড়া কমে যাওয়া- কখনও পেটে বাচ্চার নড়াচড়া কম অনুভূত হতে পারে। মায়ের পেটের বাচ্চা খারাপের দিকে যাচ্ছে কি না, তা মা ই প্রথম বুঝতে পারবেন। বাচ্চার নড়াচড়া সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ১২ ঘন্টায় কমপক্ষে ১০ বার নড়তে হবে। তার চাইতে কম নড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে নড়াচড়া লক্ষণীয় ভাবে কমে যাবার পর ধীরে ধীরে নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। গর্ভের একদম শেষের দিকে অযাচিতভাবে বাচ্চা পেটের ভেতর মারা যাওয়ার ঘটনা বা intrauterine foetal death (IUFD) এর ঘটনা বিরল নয়। তাই বাচ্চা কম নড়তেই সতর্ক হোন।

৩. শরীর ফুলে যাওয়া ও উচ্চরক্তচাপ- গর্ভকালের শেষ দিকে কারো কারো আস্তে আস্তে পায়ে পানি আসে। শরীর ও মুখ ফুলে যায়। এরপর রক্তচাপও বাড়তে থাকে। প্রথমে যদি রক্তচাপ ১৪০/৯০ মি. মি. অব মারকারি থাকে, তবে একবার মেপে আমরা তাকে উচ্চরক্তচাপ বলবো না। কমপক্ষে ৬ ঘন্টা পর, কিছুটা বিশ্রামে থেকেও যদি রক্তচাপ ১৪০/৯০ মি. মি. অব মারকারি বা তার বেশী আসে, তবে তাকে আমরা গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ বলব। এই রক্তচাপ যদি আরো বেশি হয় অর্থাৎ ১৬০/১১০ মি. মি. অব মারকারি বা এর বেশী হয়, তবে তা অবশ্যই বড় ধরণের ঝুঁকি এবং তাতক্ষণিক হাসপাতালে ভর্তি প্রয়োজন। রক্তচাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি কিছু লক্ষণ, যেমনঃ মাথা ব্যথা, বমি, চোখে ঝাপসা দেখা বা সর্ষের ফুল দেখা, পেটের ডান দিকের উপরিভাগে ব্যথা ইত্যাদি থাকে, তবে মনে রাখতে হবে যে, কোন সময় খিঁচুনি শুরু হতে পারে। একবার খিঁচুনি শুরু হলে তা মা এবং গর্ভস্থ শিশুর জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে।

৪. বাচ্চার ওজন ও বাচ্চার অবস্থান জনিত সমস্যা- গর্ভের শেষের দিকে বাচ্চার ওজন ও মায়ের পেটে বাচ্চার অবস্থান ঠিক না থাকলে এগুলিও মা ও বাচ্চার জন্য ঝুঁকি বয়ে আনে। তাই প্রসব বেদনার ওঠার আগেই এগুলো জেনে নিতে হবে।

৫. পেটের ভেতর রক্তক্ষরণ- পেট শক্ত হয়ে চাপ ধরে থাকা এবং একইসাথে পেটে অনেক ব্যথা অনুভব হয়। বাচ্চার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই সাথে মায়ের অবসন্ন লাগা ইত্যাদি মারাত্মক জটিলতার লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে যদি মায়ের গর্ভাবস্থায় উচ্চরক্তচাপ থেকে থাকে। এই ধরণের সমস্যার সংগে হ্রদস্পন্দন দ্রুত গতিতে হওয়া, অবসন্নতা, অজ্ঞানের মত অনুভূত হওয়া ইত্যাদি হতে পারে। সেক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে হবে। দ্রুততার সাথে রক্ত দেবার মত মানুষ ও জোগাড় করতে হবে।

৬. মাসিকের রাস্তায় রক্তক্ষরণ- গর্ভের শেষ দিকে গর্ভফুল নীচে থাকায় মাসিকের রাস্তায় রক্ত দেখা দিতে পারে। অল্প অল্প রক্ত কিছু দিন পর পর আসে, এছাড়া মায়ের শরীরে অন্য কোন সমস্যা থাকে না। মা বাচ্চার নড়াচড়া ও ভালো বুঝতে পারেন এবং পেট নরম থাকে। মনে রাখতে হবে এ ধরণের রক্তক্ষরণ এক ধরণের আগাম সতর্কতা। যে কোন সময় তার একটি বড় ধরণের বাধ ভাংগা রক্তের প্রবাহ হতে পারে এবং মায়ের জীবনের আশংকা দ্রখা দিতে পারে।

৭. বেশি মাত্রার রক্তশূন্যতা- রক্তের Hb% 7-8 gm/dl থাকলে তা মধ্যম ঝুকি এবং ৭ এর নীচে থাকলে মারাত্মক ঝুঁকির পর্যায়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে কেন এতটা রক্তস্বল্পতা হয়েছে একদিকে যেমন তার কারণ খুজতে হবে অন্যদিকে তাতক্ষণিক রক্তশূন্যতা দূর করার চিকিৎসাও দিতে হবে। কোন পর্যায়ে শরীরে সরাসরি রক্ত দিতে হবে তা চিকিৎসকই ঠিক করবেন। দীর্ঘদিন অতিরিক্ত রক্তশূণ্যতা থাকলে তা গর্ভস্থ শিশুর বেড়ে ওঠায় ব্যত্যয় সৃষ্টি করবে। শিশু ওজনে কমও হতে পারে বা পেটের ভেতরে মারা যেতে পারে।

৮. গর্ভস্থ পর্দা ফুটা হয়ে যাওয়া- হঠাৎ করে গর্ভস্থ পর্দা ফুটা হয়ে বা ছিড়ে গিয়ে গর্ভস্থ পানি বেরিয়ে আসতে পারে যাকে গর্ভস্থ সময়ে ‘পানি ভাংগা’ বলা হয়ে থাকে। এই সময় হাটাহাটি না করে শুয়ে থাকতে হবে এবং দ্রুত হাসপাতালে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে পানি ভেংগে গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চা এবং মা সুস্থ থাকেন।

৯. শরীরে তীব্র চুলকানি- গর্ভাবস্থায় শেষ দিকে মায়ের শরীরে বিশেষ করে পেটে, চামড়ার কোন ইনফেকশন যেমন দাদ বা খুজলি-পাচড়া ছাড়াই যদি অনেক বেশি চুলকায় তাহলে এটি cholestatic jaundice নামক এক ধরণের অসুস্থতার জন্য হয়ে থাকতে পারে। এই ধরণের Jaundice শুধুমাত্র গর্ভকালীন সময়েই হয় এবং এক্ষেত্রে Jaundice এর মাত্রা সাধারণত এত অল্প থাকে যে চোখ বা প্রস্রাবের রং হলুদ হয় না। বমি বা খাবারের অরুচিও প্রকট হয় না। গর্ভের শেষ ২ সপ্তাহে মায়ের পেটে যেসব কারণে সন্তানের মৃত্যু ঘটে cholestatic jaundice এর অন্যতম  কারণ। তাই এই ধরণের চুলকানিকে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে এটা কেন হচ্ছে এবং যদি cholestatic jaundice ধরা পড়ে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।

৩য় ৩ মাসে কি কি পরীক্ষা করা প্রয়োজন?

✍ এই সময়ে পুনরায়-

Hb%

Urine R/E দেখতে হবে

✍ উচ্চ রক্তচাপ থেকে থাকলে

Urin for Albumint, যদি Albumin বেশী মাত্রায় প্রস্রাবে ধরা পড়ে তাহলে 24 hours Urine Albumin Ges S. Albumin Level Test করতে হবে।

– S. uric acid

শরীরের চুলকানির জন্য সম্ভাব্য চামড়ার ইনফেকশন না থাকলে –

Liver Function Test যথাঃ

– S. Bilirubin

–  SGOT

–  SGPT

Alkaline Phosphate Test করে দেখতে হবে।

♦ USG- শেষ দিকে অনেকসময় আলট্রাসনোগ্রাম করে মাতৃগর্ভে শিশুর অবস্থান, গর্ভ-ফুলের অবস্থান, পানির পরিমাণ, শিশুর ওজন ইত্যাদি নিরুপন করা হয়। শেষ দিকে আলট্রাসনোগ্রাম থেকে আমরা কখনই প্রত্যাশিত ডেলিভারির তারিখ জানার চেষ্টা করি না, কারন প্রত্যাশিত তারিখের বিষয়ে এটি ভুল তথ্য দিয়ে থাকে।

অন্যান্য পরীক্ষা প্রয়োজন মত চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসারে করতে হবে।

গর্ভকালে ৩য় ৩ মাসের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধঃ

১. সাধারণত ২য় ৩ মাসে যে আয়রন ও ক্যালসিয়াম ঔষধ খাওয়া হয়; ৩য় ৩ মাসেও অনুরূপ ঔষধ চলতে থাকবে ডেলিভারীর সময় পর্যন্ত।

২. অন্যান্য ঔষধ পত্র প্রয়োজন সাপেক্ষে চিকিৎসক এর পরামর্শ মোতাবেক।

গর্ভবতী মায়েদের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের বইটি ডাউনলোড করে নিনঃ

https://drive.google.com/file/d/1W9iMB3HlsdUvO_2POWIib6WlGtY_jVua/view?usp=drivesdk

সাজ্জাদ আল ওয়াহেদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

শীতকালে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা

Tue Oct 13 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৩ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার  বাংলায় আশ্বিনের শেষ প্রায়, শীত যেন কড়া নাড়ছে বাংলায় দরজায়। এই ক্রান্তিকালে উত্তরে হাওয়া বাংলাদেশে এসে পড়বার আগেই বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছেন করোনা ভাইরাস নিয়ে সতর্কবার্তা।বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, শীতে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ নতুন করে বাড়তে পারে। সংক্রমণের সম্ভাব্য ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ বিষয়টি আছে আলোচনার শীর্ষে। কিন্তু বাংলাদেশে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo