করোনা চিকিৎসায় ‘রেমডেসিভির’ ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের FDA

প্ল্যাটফর্ম নিউজ,
রবিবার, ৩ মে, ২০২০

করোনা চিকিৎসার জরুরি প্রয়োজনে গতকাল শুক্রবার ‘রেমডেসিভির’ নামক এন্টিভাইরাল ড্রাগ ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA)। দেশটিতে এর আগে ওষুধটি পরীক্ষামূলক ব্যবহারে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে।

নিউইয়র্ক পোস্টের এক খবরে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার (১ মে) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওষুধ তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান গিলিয়েড সায়েন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেন ও’ডেকে সঙ্গে নিয়ে এই ঘোষণা দেন। রেমডেসিভিরের অনুমোদন দেওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন,

“আমি হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে এই ওষুধ ব্যবহারের বিষয়ে কথা বলেছি। টাস্কফোর্সের সদস্য অ্যান্টনি ফউসি ও দেবোরাহ ব্রিক্স ছাড়াও এফডিএ প্রধান স্টিফেন হাহন ওষুধ অনুমোদনের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন।”

ও’ডে বলেন,

“হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য আমরা প্রথম পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা নিশ্চিত করতে চাই এই রোগীদের যেনো ঠিকমতো ওষুধটি প্রদান করা হয়।”

ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হিসেবে এই ওষুধের কার্যকারিতার প্রমাণের পর একেবারে আশঙ্কাজনক রোগীদের ক্ষেত্রে রেমডেসিভির ব্যবহৃত হচ্ছিল। তবে FDA’র অনুমোদনের পর যুক্তরাষ্ট্রের ডাক্তাররা এখন থেকে ওষুধটি প্রেসক্রাইব করতে পারবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্থনি এস ফাউসি ইতিবাচক ফলাফলের ব্যাপারে আগে থেকেই আশাবাদী ছিলেন। হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক আলোচনায় ফাউসি গতকাল বলেছেন,

“তথ্য বলছে, করোনা থেকে দ্রুত সেরে ওঠার ক্ষেত্রে রেমডেসিভিরের ইতিবাচক প্রভাব পরিষ্কার।”

করোনা ভাইরাসের পরীক্ষামূলক ওষুধ ‘রেমডেসিভির’ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আশাব্যঞ্জক কথা শোনা গিয়েছিল। গত বুধবার করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরীক্ষামূলক ওষুধ ‘রেমডেসিভির’ নিয়ে আশার কথা বলেছিলেন মার্কিন গবেষকেরাও।

প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, ‘রেমডেসিভির’ প্রয়োগে সেরে ওঠার সময় ১৫ দিন থেকে ১১ দিনে নেমে এসেছে। সাধারণ ফ্লুর ক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ তামিফ্লু যে প্রভাব ফেলেছে, এটি তার অনুরূপ। ওষুধটি নিয়ে একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রোগীদের প্রায় ৩০ শতাংশ দ্রুত সেরে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যায়।

‘রেমডেসিভির’ সম্পর্কে ফাউসি বলেন,

“শতভাগ উন্নতির জায়গায় ৩১ শতাংশ যদিও খুব বেশি নয়, তবু এটা ধারণার খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যে, এটি রোগীর মারা যাওয়ার আশঙ্কা হ্রাস করতে পারে।”

আগে প্রাথমিক পরীক্ষায় সাধারণত ওষুধের কার্যকারিতা সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করা হতো না। তবে ফাউসি বলেন,

“ওষুধ যেহেতু কাজ করছে বলে পরিষ্কার প্রমাণ মিলেছে, তখন তা দ্রুত মানুষকে জানানো নৈতিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে।”

নেচারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ সৃষ্টির জন্য দায়ী নোভেল করোনা ভাইরাস SARS-CoV-2 কে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা হিসেবে পরীক্ষাগারে চিহ্নিত প্রথম ওষুধগুলোর মধ্যে ‘রেমডেসিভির’ একটি। এটি বর্তমানে মহামারির জন্য দায়ী SARS-CoV-2 ভাইরাসসহ কিছু ভাইরাসের প্রতিরূপ তৈরিতে হস্তক্ষেপ করে।

ফাউসি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন,

“ওষুধটি গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য যত্নের এক নতুন মান হয়ে উঠবে। এটি এর আগে হালকা অসুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়নি। বর্তমানে একটি হাসপাতালে ইনজেকশনের (IV) মাধ্যমে এন্টিভাইরাল এই ড্রাগটি দেওয়া হয়।”

দুদিন আগে ইউকে’র ডেইলী টেলিগ্রাফ পত্রিকা মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটের বরাতে জানিয়েছে চীনে রেমডেসিভির ২৩৭ জন পেশেন্টের উপর ট্রায়াল দিয়ে প্লাসিবোর চাইতে কার্যকরী প্রমাণিত হয়নি। অথচ আমেরিকায় এটা কাজ করছে। অর্থাৎ এটাতে বুঝা যায়, চীনে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ যখন আমেরিকায় পৌঁছেছে তখন এটা নিজেকে জেনিটিক্যালি মিউটেট করে বেশ ভালোভাবেই পাল্টে নিয়েছে।

গিলিয়েড সায়েন্সেস এর তৈরি করা ওষুধ ‘রেমডেসিভির’ এর আগে ইবোলা চিকিৎসায় প্রয়োগ করে কিছুটা সাফল্য এসেছিল। তবে কোভিড-১৯ রোগের কারণ যে করোনা ভাইরাস, সেই গোত্রের ভাইরাস প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় এটি এর আগে ভালো সাফল্য দেখিয়েছে। বিশেষত অন্য প্রাণীর শরীরে ওষুধটির প্রয়োগ করে বিজ্ঞানীরা উল্লেখযোগ্য সাফল্য পান। গত ফেব্রুয়ারিতে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ‘রেমডেসিভির’কে সম্ভাব্য ওষুধ হিসেবে উল্লেখ করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও।

ওষুধ প্রস্তুতকারক গিলিয়েডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এই পদক্ষেপকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং ‘রেমডেসিভির’র ১৫ লাখ ভায়াল দান করবেন বলে ইতিমধ্যে জানিয়েছেন।

করোনা মহামারীর এই পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য সংকট চলাকালে রোগীদের জন‌্য দ্রুত পরীক্ষামূলক ওষুধ, পরীক্ষা ও অন্য চিকিৎসাগত পণ্যগুলোকে দ্রুত উৎপাদনে FDA’র জরুরি ক্ষমতার অধীনে ওষুধটিকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সাধারণ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ওষুধের অনুমোদন পেতে সুরক্ষা এবং কার্যকারিতার যথেষ্ট প্রমাণ প্রয়োজন হয়।

জরুরি প্রয়োজনে অনুমোদিত ‘রেমডেসিভির’ শুধুমাত্র বয়স্কদের, বাচ্চাদের (যাদের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে বা সন্দেহভাজন) এবং মারাত্নক রোগে (যেসব ক্ষেত্রে রুমের নরমাল এয়ার কন্ডিশনে SpO2 অর্থাৎ পেরিফেরাল ক্যাপিলারি অক্সিজেন স্যাচুরেশন ≤ ৯৪%, যেখানে যান্ত্রিক পরিপূরক অক্সিজেন, যান্ত্রিক বায়ুচলাচল এবং বহির্মুখী ঝিল্লি বা এক্সট্রাকরপোরিয়েল মেমব্রেন অক্সিজিনেশনের (ECMO) প্রয়োজন হয়) আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে।

প্রসঙ্গত, করোনার চিকিৎসার জন্য এখনো কোনো ওষুধ অনুমোদিত নয়। তাই রেমডেসিভিরেরও আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের প্রয়োজন হবে তা বলা বাহুল্য।

নিজস্ব প্রতিবেদক/ অংকন বনিক জয়

অংকন বনিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট এর সাবেক পরিচালক আর নেই

Sun May 3 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, রবিবার, ৩ মে, ২০২০ জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট এর সাবেক পরিচালক স্বনামধন্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবু জাফর ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।) তিনি ব্যক্তিজীবনে নীতিবান এবং অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। বাংলাদেশের অন্যতম বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞকে হারিয়ে চিকিৎসক সমাজ শোকার্ত। তাঁর মৃত্যুতে প্ল্যাটফর্ম পরিবার শোকাহত এবং […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo