বুধবার, ২৮ মে ২০২৫।
একসময় এনজিও কর্মী ছিলেন মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক।বর্তমানে রাজশাহীর লোকনাথ স্কুল মার্কেটে অহনা ফার্মেসি নামে একটি ফার্মেসি পরিচালনা করেছেন তিনি। ফার্মেসির এক কোণায় প্রতারণার আখড়া হিসেবে বসিয়েছেন নিজস্ব চেম্বার। সম্প্রতি কালবেলার বরাতে জানা গেছে এমন অভিনব প্রতারণার বিস্তারিত।

কোন ধরণের চিকিৎসকের কোনো সনদ না থাকা সত্ত্বেও প্রতারণার মাধ্যমে ফার্মেসির ভিতরেই রোগী দেখেন এই প্রতারক। এছাড়াও ক্ষত সেলাই, সুন্নতে খাতনা, এমনকি অপারেশন এর মতো ঝুকিপূর্ণ কাজও করেছেন তিনি। যার অপচিকিৎসার শিকার হয়ে পঙ্গু হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুবরণ করেছেন অনেকে!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিজেকে সব রোগের বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচয় দেন প্রতারক আতিক। প্রতিদিন গড়ে আড়াইশ থেকে তিনশত রোগীকে অপচিকিৎসা দিচ্ছে এই প্রতারক। ভুল চিকিৎসায় একাধিক রোগীর শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি মৃত্যুও হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর ১৯ নাম্বার ওয়ার্ড এর হাজরাপুকুর কলোনির বাসিন্দা হালিমা বেগম (ওরফে হজবা) তার ডান পায়ের বুড়ো আঙুল সংক্রমনজনিত সমস্যার কারণে গেল ৭ মার্চ আতিকের ফার্মেসীতে যান। আতিক তখন নখ কেটে সেখানে পুঁজ বের করে দেন এবং কিছু ঔষধ দেন। দুদিন পর তিনি ফলোআপ এ গেলে আঙুল এ পোকার ডিম রয়েছে বলে জানান এবং তার তারপিন নামক একটি ক্ষতিকর তরল ইনজেকশন এর মাধ্যমে আঙুল এর তিনটি স্থানে পুস করে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। সেই রাতেই হালিমা বেগম এর পায়ের পাতা অস্বাভাবিক ফুলে লাল হয়ে যায় এবং প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়। পরদিন আবার আতিক এর কাছে গেলে তিনি কিছু এন্টিবায়োটিক দিয়ে ফেরত পাঠান। কয়েকদিন পর রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হলে তিনি আবার ফার্মেসিতে যান তখন আতিক জানান চিন্তার কিছু নেই এবং দুটি ট্যাবলেট খাওয়ার পর ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ঔষধ খাওয়ার পর রোগীর অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। পরে পরিবার এর সদস্যরা তাকে রাজশাহী এর ডলফিন ক্লিনিক এ নিয়ে গেলে সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এনামুল হক জানান,”দেরি না করে দ্রুত আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলতে হবে। তা না হলে সংক্রমন সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়বে।”
পরে সেদিনই অস্ত্রোপচার করে পায়ের আঙুল সহ সামনের অংশ কেটে ফেলা হয়। এমন ভুল চিকিৎসায় আর কেউ যেনো অঙ্গহানি না করে সেজন্য এই ভুয়া চিকিৎসক এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানান হজোবার ছেলে মোহাম্মদ খোকন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রমজানের শুরুতে এক রোগী আতিকের দোকানে চিকিৎসা নিতে যান,আতিক তাকে ইনজেকশন দিয়ে ফার্মেসীতে বসিয়ে রেখে পাশের দোকানে চা খেতে যান, কিছুক্ষণের মধ্যেই ফার্মেসির সামনেই রোগীটি মারা যান। পরে মরদেহ দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন।
হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীকে মৃত ঘোষণা করেন।
এসব বিষয়ে জিগ্যেস করা হলে আতিক জানান, আর আগেও এমন রোগী এসেছিলো তারপিন দিয়ে ভালো হয়েছিলো! হজোবার ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হয়েছে!
এক রোগী মারা যাওয়ার ঘটনায় তিনি বলেন রোগী খারাপ অবস্থা নিয়ে এসেছিলেন,হাসপাতালে যেতে বলেন পরে সেখানে তিনি মারা যান!
এবিষয়ে রাজশাহীর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা.মাহবুবা খাতুন জানান, ” চিকিৎসক না হয়েও চিকিৎসা দেয়াটা আইনগত অপরাধ। এটি শহরের মধ্যে ঘটছে যা খুবই উদ্বেগজনক! কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে! পাশাপাশি একাধিকবার বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরেও কোন ধরনের ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকঃ মেহরুবা আক্তার।