লাইফ ইন লকডাউন, ডে থার্টি এইট

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৫ মে ২০২০, শুক্রবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

বাবা মা এখানে এসে আছে কয়েকদিন। করোনার জন্য বেরুতে পারেন না। সামান্য কিছু করলে যে কী খুশি হয়! ছোট ছোট দেশী মাছ বা এক হাঁড়ি দই- সেটুকুও তো করা হয় নি কখনো। তাদের খুশিতে আমাদের অনভ্যাস ও অপটুতা আরো বেশি করে ধরা পড়ে। শিশু যখন প্রথম হাঁটতে শিখে- বারবার হোঁচট খেলেও বাবা মা’র যেমন আনন্দের সীমা থাকে না- তেমন লাগে।

কোভিড উনিশের দূরে থাকার গল্প অনেক, কাছে থাকার গল্পও কিন্তু কম নেই। মা এসেই ডিটেকটিভ গিরি শুরু করেছে। জবাবদিহিতা থাকলে স্বাধীনতা থাকে না। সে বড়ই বিচি ফেলানো হোক বা বাজার খরচ। এ জিনিস তাকে বোঝানো যাচ্ছে না। স্বাধীনতা সবসময় জেতার স্বাধীনতা নয়, ঠকারও স্বাধীনতা। প্রায়ই মা বোনে লেগে যাচ্ছে। আমি জানালা দিয়ে মানুষ দেখি। পাশের বাসায় দুন্দুমার কাজ হচ্ছে। ছাদ ঢালাই। একটানা গড়ড় গড়ড় শব্দ। শ্রমিকরা তোশকের উপর ঘুমায়, একসাথে বসে খায়, দূরে গিয়ে মোবাইলে গল্প করে, আড়ালে আবডালে বিড়ি ফুঁকে- সব দেখি। ওরা দুপুরের লাঞ্চ অনেক আগেভাগে করে। আজ আমার কোয়ারেন্টাইনের শেষ দিন। অফিসিয়ালি কাল থেকে আমি মুক্ত। কোভিড শুন্য। অবশ্য বিধিনিষেধের প্রায় কিছুই মানি নি।

এখন আর খবর দেখি না, টক শো শুনি না, আন্তর্জাতিক পত্রিকা খুলে পড়তে বসি না। বৃষ্টির প্রথম দিককার ফোটা যখন গায়ে লাগে হিসেব থাকে। পরে ঝরঝর ধারায় আর কেউ গুনতে যায় না। আজও একজনের পজিটিভ এসেছে আমার উপজেলায়। তাকে দেখা ডাক্তার এখন জ্বরে আক্রান্ত। আমাদের ছোট ছাতায় কতক্ষণ মাথা বাঁচবে কেউ জানে না। বিশেষত এমন বৃষ্টি- দিগবিদিক শুন্য, থামার লক্ষনহীন।

এখন সবচেয়ে বেশি শুনতে হয় কনফিউশান ক্লিয়ারেন্সের প্রশ্ন। আমরা কী সমস্যা ওভার ইস্টিমেট করছি না আন্ডার ইস্টিমেট? এ দুর্যোগ থামবে কবে? আমরা কী ভেসে যাব আমেরিকা ব্রিটেন স্পেন ইতালি রাশিয়ার মতো? বলি- যা শক্ত তা ভাঙ্গা সহজ, নরম ভাঙ্গা খুব কঠিন। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা এতোই নরম যে সহজে ভাঙ্গবে না, ভাঙ্গলেও টের পাওয়া যাবে না। তবে কী আমি ভয়ে নেই? অবশ্যই আছি! স্ট্রিট লাইটের আলোর যত অন্ধ ভিক্ষুকই ভিক্ষা করুক, সে দিয়ে বই পড়া চলে না। তবে দেখুন এক ঘোষণায় দুই হাজার নবীন- কোয়ালিফাইড- ক্যাডার সার্ভিস পরীক্ষা পাশ করা ডাক্তার, পৃথিবীর আর কোন দেশ পেয়েছে?

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মারা গেলেন। গতকাল মারা গেলেন ডা. আবুল মুকারিম। তার কিছুদিন আগে মারা গেছেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। করোনার আকাশে তারা দের জন্য আর কোনো সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং রইলো না।

এ নিয়মিত লেখা ছেড়ে দিব শুনে কেউ কেউ চালিয়ে যেতে বলছেন। অনেকেই সুন্দর সুন্দর সাজেশন দিয়েছেন। এক বড়ভাই বললেন ‘সমস্যার সাথে সমাধানের দিকেও ইঙ্গিত করা দরকার’। এক ফ্রেন্ড বললো- ‘বেকারই তো আছো- লিখবে না কেন?’ একজন বললেন- ‘আরো যাচাই বাছাই করে লেখা উচিত’। এক ফ্রেন্ড বললো- ‘তুই গু লিখলে, গু-ইই পড়বো’! গু-ই তো লিখছি!!

সে সময়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকারীদের শাস্তি দিয়ে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে পাঠানো হতো। সেখানে দেশপ্রেমিক অনেক মেধাবী কয়েদি ছিলেন। কই কোথাও তো দেখি নি- সে নিয়ে কেউ ভ্রমণ কাহিনী লিখে গেছেন! ‘আন্দামানের পথে পথে’!! নির্বাসনের সময় এটি। যা দেখছি যা শুনছি তাই লিখছি। ভাঙ্গা মন আর ভাঙ্গা কলম। অত কাব্য নেই, অত মেধাও নেই।

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯: আরো ১৫ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ১২০২ জন

Fri May 15 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০ গত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১২০২ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন আরো ১৫ জন ও আরোগ্য লাভ করেছেন ২৭৯ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগী ২০,০৬৫ জন, মোট মৃতের সংখ্যা ২৯৮ জন এবং সুস্থ হয়েছেন মোট ৩,৮৮২ জন। দুপুর ০২.৩০ […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo