বাংলাদেশে উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থার উদ্দেশ্যে ডাক্তারখানা বা জেনারেল ফিজিশিয়ান ব্যবস্থা

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৫ জুলাই ২০২০, বুধবার

সম্প্রতি “ডাক্তারখানা”র প্রতিষ্ঠাতা ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রতীন্দ্র নাথ মন্ডল ‘প্ল্যাটফর্ম মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটির’ অনলাইন গ্রুপে ‘ডাক্তারখানা‘ প্রসঙ্গে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি বলেন, “প্ল্যাটফর্ম আমাদের দেশের মেডিকেল সেক্টরের সব চেয়ে বড় অনলাইন কমিউনিটি। এই গ্রুপের মাধ্যমে আমাদের মেডিকেল কমিউনিটির সকল সিনিয়র, জুনিয়র এবং ছাত্র- ছাত্রীদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমরা গত ২ বছর যাবত জিপি প্র্যাকটিস, রেফারেল সিস্টেম ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছি। আমাদের জেনারেল ফিজিশিয়ান মডেলের নাম “ডাক্তারখানা”। এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৭৪ টি “ডাক্তারখানা”র শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

‘ডাক্তারখানা’ নামে আমাদের একটি পাবলিক গ্রুপ, ফেসবুক পেজ আছে এবং ‘ডাক্তারখানা’ নামে একটি পেইড টেলিমেডিসিন এপস খুব শীঘ্রই চালু হবে। আমাদের এই “ডাক্তারখানা”র সকল কার্যক্রম যেমন- ডাক্তারখানা নাম, লোগো, আমাদের জিপিওসি, লোগো ইত্যাদি এর কপি রাইট নেয়া আছে। আমি সকলের কাছে অনুরোধ করছি আপনারা কেউ অনুগ্রহ করে ডাক্তারখানা নামে কোন ফেসবুক পেজ, গ্রুপ খুলবেন না অথবা এমন পেজ বা গ্রুপ কেউ খুলেছে তাদের সাথে যুক্ত হবেন না এবং অনুগ্রহ করে কেউ খুলে থাকলে আমাদেরকে জানাবেন।

২০১৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি রংপুর তাঁতিবাজার এলাকায় বাংলাদেশের প্রথম জিপি (জেনারেল ফিজিশিয়ান) সেন্টার “ডাক্তারখানা” প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে সারাদেশে ৭৪টি শাখার ৯৫ জনের বেশি চিকিৎসকের মাধ্যমে জিপি প্র্যাকটিস ও রেফেরেল সিস্টেম চালুর জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
ডাক্তারখানার সেবা নিতে সরাসরি বা মোবাইলে সিরিয়াল নিয়ে, নির্ধারিত সময়ে ডাক্তারখানার সেবা নিতে পারবেন যে কেউ। এখানে চিকিৎসকের ফি (ভিজিট) মাত্র ১০০/২০০ টাকা। তবে প্রথমবার অতিরিক্ত ২০/৩০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে একটি চিকিৎসার বই নিতে হবে। ডাক্তারখানায় সাধারণত নবজাতক, শিশু, গর্ভবতী মা, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তি, ডায়াবেটিস রোগীরা চিকিৎসা নিতে পারেন। এছাড়াও চিকিৎসকেরা হার্ট ও কিডনি রোগীর চিকিৎসার ফলো আপও করে থাকেন। সাধারণ রোগের চিকিৎসা ছাড়াও করোনা মহামারিতে ডাক্তারখানার প্রতিটি শাখাই বিনামূল্যে টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

ডাক্তারখানার  প্রতিষ্ঠাতা ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রতীন্দ্র নাথ মন্ডল জানান, উন্নত বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই একটি নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের জন্য একটি করে জিপি সেন্টার থাকে, যেখানে ওই এলাকার সব মানুষের চিকিৎসা হয়। কেউ চাইলেই এই জিপি সেন্টারের বাইরে চিকিৎসা নিতে পারেন না, যদি না সেখানকার ডাক্তাররা তাদের কোন বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করেন অথবা সেখানকার ডাক্তাররা কোন রোগীর রোগ নির্ণয়ে ব্যর্থ হোন। এটি খুবই যুগোপযোগী পদ্ধতি কেননা আমাদের দেশের মানুষ যেসব সাধারণ রোগে ভোগে, তারা বেশিরভাগের চিকিৎসার জন্য একজন এমবিবিএস চিকিৎসকই যথেষ্ট। আর এই বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা বাংলাদেশেও এই মডেলটি দাঁড় করাতে চেয়েছি যাতে করে আমাদের দেশের রোগীদের একটি বিরাট অংশ যারা সাধারণ রোগের চিকিৎসায় হাসপাতালে কিংবা বিশেষজ্ঞের কাছে ভিড় করেন, তারা যেন এই ডাক্তারখানায় চিকিৎসা নিতে পারেন। আর এতে করে আমাদের রোগীরা সময় ও অর্থ দুইই বাঁচাতে পারবেন। ঠিক একইভাবে, আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ওপর অযাচিত চাপও কমবে এবং বিশেষজ্ঞরা হাসপাতালে জরুরি রোগীদের চিকিৎসায় বেশি মনোযোগ দিতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যেহেতু জেনারেল ফিজিশিয়ানদের জন্য কোনো স্পেশালিস্ট ফিল্ড নেই এবং প্রতি বছর অনেক তরুণ চিকিৎসক উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তায় ভোগেন, “ডাক্তারখানা” এই তরুণ চিকিৎসকদের কর্মসংস্থান তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এমবিবিএস পাশ করা যে কেউ, যারা বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলে চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধিত, তারা জেনারেল ফিজিশিয়ান সোসাইটি আয়োজিত চার দিনের একটি ট্রেনিং কোর্স (জেনারেল প্র্যাকটিস অরিয়েন্টেশন কোর্স) সম্পন্ন করে অনুমতিসাপেক্ষে ডাক্তারখানার একটি শাখা খুলতে পারেন। এই ট্রেনিং-এ মূলত সাধারণ রোগের প্রাক্টিক্যাল ম্যানেজমেন্ট ও কাউন্সেলিং শেখানো হয়। বিশেষ করে, প্রত্যেককে একজন রোগীর বিবরণ শোনার জন্য ন্যূনতম ১৫ মিনিট সময় দিতে নির্দেশ করা হয়। এ পর্যন্ত ১৫ টি ট্রেনিং-এ অংশ নিয়েছেন ৩২৫০ জন চিকিৎসক।

তিনি আরও বলেন, “যদি বাংলাদেশে প্রতি ২০ হাজার মানুষের জন্য একটি করে ডাক্তারখানার শাখা খোলা যায়, তাহলে মাত্র ১৫-২০ ভাগ রোগীকে চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।”

Silvia Mim

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

করোনায় চোখের যত্নে করণীয়

Wed Jul 15 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৫ জুলাই ২০২০, বুধবার করোনা ভাইরাস নাক, মুখ ও চোখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। তাই নাক ও মুখের পাশাপাশি নিতে হবে চোখের যত্ন। করোনাভাইরাস আপনার চোখকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? ১) যখন কারোনা ভাইরাসযুক্ত কারো কাছ থেকে হাঁচি, কাশির মাধ্যমে বা কথা বলার সময় ভাইরাসের কণা তাদের মুখ […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo