কাউন্সেলিং টেবিলের গল্প  || পর্ব : ১১

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৬ নভেম্বর ২০২০, সোমবার 

অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
চিকিৎসক, কাউন্সিলর,
সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার,
ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, বাংলাদেশ।

মেয়েটির পড়াশুনার প্রতি দুর্দান্ত আগ্রহ। মধ্যবিত্ত গন্ডিতে বেড়ে ওঠায় ছোট বেলা থেকেই নানা রকম নারীশিক্ষা বিরোধী প্রথার বৃত্তবন্দি কথা শুনেছে। শৈশবে, কৈশোরে, তারুণ্যে সেই সব একপেশে কথা মেয়েটির মনকে রক্তাক্ত করেছে বহুবার। অসহায়ত্বের বেদনায়, কিছু বলতে না পারার অক্ষমতার ক্রোধে নিজেই জর্জরিত হয়েছে।

মেয়েটি বলে, এখন এসব শুনতে শুনতে কান পচে গেছে কিন্তু আব্বু আম্মুকে নিয়েই পড়ি বিপদে। আদি সমাজ প্রথায় অভ্যস্ত তারা, আমার কিছু বলা মানে হলো আমি অবাধ্য সন্তান। সাথে আছে প্রতিবেশীদের অতি প্রয়োজনীয় পরামর্শ-
১. মেয়ে মানুষ সেই তো বিয়ে করে সংসার করতে হবে কি দরকার ডাক্তারি পড়ানোর?
২. বেসরকারি মেডিকেলের ডাক্তারি সাটির্ফিকেট এর দাম নাই, শুধু শুধু এত টাকা খরচ করছেন।
৩. পাশ করতে পারবেনা, বিয়ে দিয়ে দেন। এত চিন্তা করে কি করবেন?
৪. BCS দেয়নি? ছিঃ ছিঃ। সব BCS ডাক্তার নিয়ে নিলো এবার, পরে আর ডাক্তার নিবেনা।
৫. বিয়ে হয়ে গেলো এখনও বাচ্চা নেয়না কেনো? নাকি কোন সমস্যা আছে? সমস্যা থাকলে ডাক্তার দেখাইতে বলেন।
৬. সিজারিয়ান করতে পারে আপনার মেয়ে? না পারলে কিসের ডাক্তারি পড়লো?
৭. এখনও নিজের কোন Chamber নাই! কি করে তাহলে?!

তারপর সেই একই কাউন্সেলিং টেবিলের গল্প-

ছবি : কাউন্সেলিং টেবিলের গল্প

 

মেয়েটির সাথে ক্রমাগত দূরত্ব বাড়ে তার মা বাবার। যেই মানুষ দুটি ছিল আশ্রয় ও প্রশ্রয়ের একমাত্র অবলম্বন সেই ছায়া হারিয়ে যায়। জীবনের ধূসর মরুভূমিতে এর মাশুল দেয় মেয়েটা, হয়তো ভুল সম্পর্কে আশ্রয় খুঁজে বা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে হতাশার সাগরে ডুবে।

মা বাবা এতো দিন ধরে এতো কিছু করবার পরেও কেন এভাবে হাত ছেড়ে দেয়? এটা প্যারেন্টদের Limitations of Thoughts। সমাজ যেভাবে ভাবতে শিখিয়েছে উনারা সেভাবেই ভাবেন তার মানে কিন্তু এই না যে উনারা সন্তানকে কম ভালোবসেন, তার মানে এই যে এভাবে ভাবা ছাড়াও যে অন্য ভাবে ভাবা যায় সেই বিকল্প ভাবনার জায়গাটাই কখনো তৈরী হতে দেয়া হয় নাই। এখানে বলে রাখা ভালো সব প্যারেন্ট কিন্তু এমন না। এখানে শুধু রক্ষণশীল মানসিকতাসম্পন্ন প্যারেন্টদের কথাই বলছি।

কিছু মানুষের অভ্যাসই থাকে অন্যের বাড়িতে ফুচকি মারা, নিজের খুঁত লুকিয়ে অন্যের দিকে আঙ্গুল তাক করতে এরা আজীবন পারদর্শী। এরা কখনো বদলাবে না। কাজেই এদের কথার রেসপন্স করে নিজের সময় ও এনার্জি দুটোই নষ্ট করবার কোন প্রয়োজন নাই। নিজের চারপাশে অদৃশ্য মনস্তাত্ত্বিক বাউন্ডারি দিন যাতে এই সব ছাগল আপনার বৃত্তে ঢুকতে না পারে। বাবা-মাকে বলুন,

“I don’t care কে কি বললো। আমি শুধু তোমার কেয়ার করি, কারণ তুমি সব সময় আমাকে ভালো রাখবার জন্য কষ্ট করেছো, আমি দিনের পর দিন ফিল করেছি তোমার সেই কষ্ট, এতদিন সেটা বলে ওঠা হয় নি। ওরাতো আমার জন্য কিছু করে নাই। আমাকে উন্নত জীবন দেবার জন্য তোমার করা এই জীবন যুদ্ধে কখনোই বাইরের কেউ সামান্যতম সাহায্য করে নাই, তাই বাইরের মানুষ কি বললো কি ভাবলো তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। ওরা আমার Out of Syllabus। কিন্তু তুমি কষ্ট পেলে আমি কষ্ট পাই, কেনো আমরা আমাদের দুইজনের মাঝে এই আগাছা খাওয়া ছাগল গুলিকে ঢুকতে দেবো?”

মা-বাবা কে জড়িয়ে ধরে রাখুন অন্তত ৩০ সেকেন্ড দেখুন কি ম্যাজিক্যাল চেঞ্জ হয়। ফলাফল জানাতে ভুলবেন না আমাকে।

যাঁরা অন্যকে গায়ে পড়ে উপদেশ দেন না তাঁদের জন্য অনেক ভালোবাসা।

Firdaus Alam

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯ || গত ২৪ ঘন্টায় ২১ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ২১৩৯ জন

Mon Nov 16 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৬ নভেম্বর ২০২০, সোমবার  দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করোনা রোগী শনাক্ত সংখ্যা বেড়েছে। নতুন করে ২ হাজার ১৩৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। একই সময়ে করোনায় আরও ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৬০৪ জন। আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত প্রেস রিলিজ থেকে এসব […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo