এবার রেমডেসিভির উৎপাদনের অনুমতি দিলো বাংলাদেশ

প্ল্যাটফর্ম নিউজ,
মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০

করোনা চিকিৎসার জরুরি প্রয়োজনে গত শুক্রবার (১ মে) ‘রেমডেসিভির’ নামক এন্টিভাইরাল ড্রাগ ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA)। দেশটিতে এর আগে ওষুধটি পরীক্ষামূলক ব্যবহারে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে।

নিউইয়র্ক পোস্টের এক খবরে জানা যায়, গত শুক্রবার (১ মে) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওষুধ তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান গিলিয়েড সায়েন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেন ও’ডেকে সঙ্গে নিয়ে এই ঘোষণা দেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পথ ধরে করোনা ভাইরাসের ওষুধ হিসেবে এবার রেমডেসিভির উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন,

“প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের ৬টি ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিকে করোনার জরুরি ঔষধ হিসেবে রেমডেসিভির উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে দুইটি কোম্পানি চলতি মাসের ২য় সপ্তাহে ‘রেমডেসিভির’ বাজারে আনবে।”

‘রেমডেসিভির’ উৎপাদনের অনুমতি পাওয়া ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি ৬টি হচ্ছে: বেক্সিমকো, SK+F, ইনসেপটা, স্কয়ার, হেলথ কেয়ার এবং বিকন। এদের মধ্যে বেক্সিমকো এবং SK+F চলতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যেই ঔষধটি বাজারজাত করবে বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের পরীক্ষামূলক ওষুধ  ‘রেমডেসিভির’ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আশাব্যঞ্জক কথা শোনা গিয়েছিল। গত সপ্তাহে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরীক্ষামূলক ওষুধ ‘রেমডেসিভির’ নিয়ে আশার কথা বলেছিলেন মার্কিন গবেষকেরাও। প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, ‘রেমডেসিভির’ প্রয়োগে সেরে ওঠার সময় ১৫ দিন থেকে ১১ দিনে নেমে এসেছে। সাধারণ ফ্লুর ক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ তামিফ্লু যে প্রভাব ফেলেছে, এটি তার অনুরূপ। ওষুধটি নিয়ে একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রোগীদের প্রায় ৩০ শতাংশ দ্রুত সেরে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যায়।

‘রেমডেসিভির’ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্থনি এস ফাউসি বলেন,

“শতভাগ উন্নতির জায়গায় ৩১ শতাংশ যদিও খুব বেশি নয়, তবু এটা ধারণার খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যে, এটি রোগীর মারা যাওয়ার আশঙ্কা হ্রাস করতে পারে।”

গিলিয়েড সায়েন্সেস এর তৈরি করা ওষুধ ‘রেমডেসিভির’ এর আগে ইবোলা চিকিৎসায় প্রয়োগ করে কিছুটা সাফল্য নিয়ে এসেছিলো। তবে কোভিড-১৯ রোগের কারণ যে করোনা ভাইরাস, সেই গোত্রের ভাইরাস প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় এটি এর আগে ভালো সাফল্য দেখিয়েছে। বিশেষত অন্য প্রাণীর শরীরে ওষুধটির প্রয়োগ করে বিজ্ঞানীরা উল্লেখযোগ্য সাফল্য পান। গত ফেব্রুয়ারিতে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ‘রেমডেসিভির’কে সম্ভাব্য ওষুধ হিসেবে উল্লেখ করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও।

আমেরিকায় US-FDA ‘রেমডেসিভির’ জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের যে অনুমতি দিয়ে তাতে বলা হয়েছে, ‘রেমডেসিভির’ শুধুমাত্র বাচ্চা ও পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি যাদের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে বা যারা সন্দেহভাজন তাদের যদি রোগটি মারাত্নক অবস্থায় থাকে তাহলে ব্যবহার করা যাবে। মারাত্মক রোগের বৈশিষ্ট্য হিসাবে বলা হয়েছে যে রুমের সাধারণ বাতাসে যদি প্রান্তিক রক্তনালীর রক্তে অক্সিজেনের আংশিক চাপ ৯৪% এর সমান বা কম হয়, যদি রোগীকে কৃত্তিম অক্সিজেন দেবার প্রয়োজন হয়, বা যান্ত্রিক রেসপিরেটরি সাপোর্ট (Mechanical Ventilation) অথবা এক্সট্রাকরপোরিয়েল মেমব্রেন অক্সিজিনেশনের (ECMO) প্রয়োজন হয় তবে তাকে মারাত্মক রোগী হিসাবে চিহ্নিত করা যাবে।

বাংলাদেশের করোনার চিকিৎসার জাতীয় গাইডলাইনে ‘রেমডিসিভির’ কি ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে তা উল্লেখ নেই। আশা করা যাচ্ছে পরবর্তী সংস্করণে তা যুক্ত হবে। সারা বিশ্ববাসীর মনে আশা জাগানিয়া রেমডেসিভিরের প্রয়োগ বাংলাদেশের করোনা চিকিৎসায় আশাতীত সাফল্য এনে দিবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।

নিজস্ব প্রতিবেদক/ অংকন বনিক জয়

অংকন বনিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

করোনার দিনগুলোয়- ৬ ।। লকডাউন না ক্লাস্টার লকডাউন?

Tue May 5 , 2020
মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০ লকডাউন না ক্লাস্টার লকডাউন? লকডাউন শুরু করার আগেই একটি ছবি ফেসবুকে ভাসছিলো যেখানে দেখা যায় একটি লাল গেট তালাবদ্ধ। তার আশেপাশে জমিজমা। ক্যাপশন “বাংলার লকডাউন”। অর্থাৎ চারদিকে সব খোলা শুধু গেইটটা তালাবদ্ধ। মজার ছলে এটি কেউ তৈরী করে থাকলে ও তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য মানুষজন আগেই অনুমান […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo