ডা. মোরশেদ আলী পাল্টে দিচ্ছেন উপজেলার কোভিড চিকিৎসা

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৭ জুলাই, ২০২০, সোমবার

কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল – হুইল চেয়ারে মরদেহ, সামনে বসে আছেন তাঁর স্ত্রী। দুটি হাসপাতাল ঘুরেও ভর্তি করাতে পারেন নি তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাঙ্গুনিয়া থেকে আসা আইয়ুব আলীকে। অসহায় স্ত্রী তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে, দ্রুত ভর্তির পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এমন ঘটনা সারা দেশের। সাতকানিয়া উপজেলার রোগী চট্টগ্রাম শহরে যেতে যেতে, হাসপাতালে ভর্তি হতে হতে কিংবা ভর্তি হলেও অন্তিম পর্যায়ে অক্সিজেনের অভাবে কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেন। অক্সিজেন সরবরাহ সক্ষমতার চেয়ে রোগী সংখ্যা অনেক বেশি। সব উপজেলা থেকেই রোগী এসেছেন শহরে। কোভিড হাসপাতাল ছিল মাত্র ২টি।

সেই থেকেই চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সন্তান সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. মোরশেদ আলী পরিকল্পনা নেন সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করার। যাতে উপজেলার রোগী উপজেলায়ই চিকিৎসা পেতে পারেন। উপজেলার রোগীকে যেন শহরে যেতে না হয়। একটা বেডের জন্য, অক্সিজেনের জন্য ঘুরতে ঘুরতে যেন সময় নষ্ট না হয়। কোভিড চিকিৎসায় সঠিক সময়ে অক্সিজেনের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করতে পারলে হাইফ্লো অক্সিজেন ক্যানুলা মেশিনের সাহায্যে রোগীকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের অক্সিজেন দেয়া সম্ভব।

সেই পরিকল্পনা করেই কাজে নেমে পড়লেন তিনি। শুভানুধ্যায়ী, সুহৃদ বন্ধু বান্ধব, এলাকার মুরুব্বিরা জড়িত হলেন। প্রচারণা শুরু করলেন। সাড়া মিললো দ্রুতই। একের পর এক সাহায্য সহযোগিতা আসতে শুরু করলো। ডা. আলী আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলেন। তিনি সামাজিক শক্তির দিকটা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। মানুষ তাঁর উপর আস্থা রেখেছে। দারুণ উদ্যমে এগিয়েছে কাজ। স্বাভাবিক সময়ে যা ৩-৪ মাস লেগে যায়, এই উদ্যোগে তা অবিশ্বাস্য গতি পেয়েছে। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে ১ মাসের মধ্যে আপাত অসম্ভবকে সম্ভব করেছে এই সামাজিক উদ্যোগ। মাত্র ১ মাসে সমস্ত আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতিসহ সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করে উদাহরণ সৃষ্টি করলেন করোনার লড়াকু যোদ্ধারা।

উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার জমা হয়েছে ৪৪টি। এটি উপজেলা পর্যায়ে দেশের সর্ববৃহৎ অক্সিজেন মজুদ। এছাড়াও হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপনের পাশাপাশি ২ টি হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা, ৩৬ টি পালস অক্সিমিটার, ২ টি ইনফ্রারেড থার্মোমিটার, ২ টি কন্টাক্টলেস থার্মোমিটার, একটি হুইলচেয়ার ও ম্যানুয়াল রক্তচাপ নির্ণয় মেশিনসহ গ্লুকোমিটার, নেবুলাইজার এবং সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সব শ্রেণীপেশার মানুষ এগিয়ে এসেছেন। তহবিল গঠনে অর্থ দান, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ যে যেমন পেরেছেন, দিয়েছেন। কেউ পালস অক্সিমিটার, কেউ অক্সিজেন সিলিন্ডার, কেউ হাইফ্লো অক্সিজেন মেশিন দিয়েছেন। সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে উপজেলা পর্যায়ে গড়ে উঠেছে এই আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা।
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থেকে স্কুলের শিক্ষার্থী পর্যন্ত কেউ পিছিয়ে নেই। এমনকি বিদেশে অবস্থানরত সাতকানিয়ার সন্তানেরাও সাড়া দিয়েছেন, অর্থ ও যন্ত্রপাতি পাঠিয়েছেন। যার কিছু নেই তিনি দিয়েছেন শ্রম। সবার পরিশ্রম ও দোয়ায় সফলতা লাভ করেছে আজকের এই উদ্যোগ।

ডা. মোরশেদ আলী জানান,

“আমি আমার ইচ্ছাকে সামাজিক উদ্যোগে পরিণত করতে পেরেছি। আমি চাই সবাই যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসুক। দেশের প্রতিটি উপজেলায় যদি কোভিড রোগী উন্নত চিকিৎসা পায়, তাহলে শহরের হাসপাতালে চাপ কমবে, রোগীর সময় ও অর্থ বাচবে। হয়তো রোগের তীব্রতা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যাবে যদি শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহজলভ্য করা যায়। এক্ষেত্রে অক্সিজেনের অপ্রতুলতা কাটিয়ে ওঠা গেলেই অনেক বড় কাজ হয়। সাতকানিয়াবাসী আমার ইচ্ছা ও পরিকল্পনাকে সম্মান জানিয়ে আমার উপর আস্থা রেখে পুরো আয়োজনকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ।
একইভাবে আমরা কুতুবদিয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন সম্পন্ন করেছি এবং আমরা থামবো না। সাধ্যের মধ্যে আরো কয়েকটি উপজেলায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করতে চাই। সবাইকে অনুরোধ, এগিয়ে আসুন।”

ডা. মোরশেদ আলী বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে (কোভিড ডেডিকেটেড হসপিটাল) ই. এম. ও. (ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার) হিসেবে কর্মরত আছেন। এই মেধাবী তরুণ চিকিৎসক যে উদাহরণ তৈরি করলেন তা ছড়িয়ে পড়ুক প্রতিটি উপজেলায়, জনমনে এটাই প্রত্যাশা।

Sayeda Alam

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯: আরো ৩৭ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ২৭৭২ জন

Mon Jul 27 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০২০ গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ২,৭৭২ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন আরো ৩৭ জন এবং আরোগ্য লাভ করেছেন ১,৮০১ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগী ২,২৬,২২৫ জন, মোট মৃতের সংখ্যা ২,৯৬৫ জন এবং সুস্থ হয়েছেন মোট ১,২৫,৬৮৩ জন। দুপুর ০২.৩০ […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo