বিষণ্ণতা: কথা বলুন

Depression : Let’s talk

অনেক বড় বিষয় ৷
সামান্য কথাতেই শেষ করি ৷

মন খারাপ, অবসাদ, বিষাদ, বিষন্নতা – এক কথা নয়, সব শরীর ও মনের সাথে সম্পর্কযুক্ত প্রধানত মনের সাথে ৷
একবিংশ শতাব্দীর এই চরম গতিশীল যন্ত্রযুগে ” মন “বলতে কিছু আছে এটা ঠাহর করাইতো কষ্টের ৷ পাশ্চাত্য যখন শারীরিক রোগ নিয়ে, ভেন্টিলেটর ও ব্রেন ডেথ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে তখন তাদের চোখে পড়লো অতি নীরবে নিশ্চুপে কর্মচঞ্চল প্রফুল্লমনের লোকগুলো লজ্জাবতী লতার মতো ঝিমিয়ে যাচ্ছে, নিস্প্রান মৃতবদ তাদের দৈনন্দিন জীবন ৷ এটাই বা কম কিসে ! এই ঝিমিয়ে যাওয়া লোকগুলো আগের তৃপ্তিদায়ক কাজকর্মে তার আর তেমন তৃপ্তি আসে না ৷ না মেহমান খাইয়ে ভাল লাগে – না লাগে স্কুলে ক্লাস নিয়ে ৷ বৈশাখী আয়োজন তাকে নাড়া দেয় না, বই মেলায় যাবার জন্য ব্যস্ত স্বামীর পিছনে ঘুর ঘুর
করে না আর ৷ সাজে না, মার্কেটে যায় না, টাকা খরচ করে না ৷
সন্তানের গোল্ডেন GPA 5 তাকে উত্তেজনায় ফেলে না ৷ কোনকিছুতেই বাড়তি আগ্রহ তাকে পেয়ে বসে না ৷

একইভাবে অতীতকে নিয়ে সে পস্তায়, অপরাধপ্রবণতা তাকে কামড়ায় ৷ পুরানো কোন যৎসামান্য ভুলের জন্য অপরাধী সেজে নিজেকে শাস্তি দেয় ৷ এটা distorded cognition ৷ Osteoporesis হলে হাঁড়ের যে অবস্থা হয় বিষন্নতায় সুস্থ Cognition র সে রূপ ধারণ করে ৷
” পারবো না, আমাকে দিয়ে হবে না “- বলতে বলতে আসলেই সেই পারদর্শী লোকটাকে দিয়ে আর হয় না ৷ যে আগামী নিয়ে সবাই থাকে স্বপ্নে বিভোর, কল্পনার জাল বুনে বুনে যেখানে সবাই মহাসাগর পাড়ি দেয় – শূন্যে রঙিন ফানুস উড়ায় সেখানে এই বিষাদগ্রস্থ মানব মানবীদের হাতির পায়ের মতো ভারী পা নিয়ে আর দিন চলে না ৷ জীবন অর্থহীন, বিবর্ণ, পাংশু মনে হয় ৷ বেঁচে থাকা কষ্টের, যন্ত্রণার ৷ যন্ত্রনাময় জীবন থেকে পরিত্রানের জন্য একটা পথ খুঁজে বের করা চাই ৷
স্বেচ্ছায় সাগ্রহে পরিবার, সমাজ থেকে তথা এই অপূর্ব সুন্দর ধরণী থেকে বিদায়ের সিদ্ধান্তটা যেদিন প্রথম মাথায় আসে সেদিন থেকেই চেষ্টা করতে থাকে ৷ আত্মহননের চিন্তা মাথায় এলেও পরিবারের আদুরে- সম্মান- শ্রদ্ধার মুখগুলো, সামাজিক নিয়মকানুন, ধর্মীয় নিষেধের কথা বিবেচনায় এনে অনেকেই এ কাজটা করে না ৷ কিন্তু এক বিশেষ শ্রেণীর বিমর্ষ রোগীরা পুনঃপুন চেষ্টা করে অবশেষে এই ধরিত্রীর কর্মে যবনিকা টানেন ৷

Depression কে যদি বিষন্নতা বলি তবে এর একাডেমিক শ্রেণীবিন্যাস পুরোটা না হলেও অল্প করে জানা দরকার ৷ শারীরিক রোগ থেকে বিষন্নতা নামে ৷ এইডস, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে দীর্ঘস্থায়ী সব শারীরিক রোগীই কোন একসময় বিষন্নতার আশ্রয় গ্রহণ করে ৷ শারীরিকরোগহীন বিষন্নতাকে mild, moderate and severe এই তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে ৷
অল্প বিষন্নতায়কোন ওষুধের দরকার হয় না ৷ কাউন্সেলিং ও সাইকোথেরাপি যথেষ্ট ৷ মধ্যম মানের ও তীব্র বিষন্নতায় যারা ভোগেন তাদের নিউরোট্রান্সমিটার সেরোটোনিন, এপিনেফরিন- নর এপিনেফরিন কম থাকে বিধায় বাইর থেকে এই নিউরোট্রান্সমিটার সরবরাহ করলে রোগী ভাল হয় ৷

বিষন্নতা এক প্রকার মুড ডিসর্ডার ৷
“মুড” হচ্ছে মনের এমন এক অবস্থা যা ব্যক্তির নিজের, তার পাশের লোকদের ও পরিবেশের উপর বেশ কিছুসময় প্রভাব বজায় রাখে ৷ তাই কারও মুড খারাপ হলে তার রুমমেটদেরও মন খারাপ থাকে আর তার প্রভাব গিয়ে ক্যান্টিন বয়ের উপর পড়ে ৷ বাস দুর্ঘটনায় বাবা মা ভাই হারিয়ে এক ভাইয়া মন খারাপ নিয়ে আছে আট দশ দিন বাকহীন ৷ এতে ডুকরে মরছে রুমের সহপাঠী ও জুনিয়র দুই অনুসঙ্গী ৷ তারা বিষাদময় ভাঙা মন নিয়ে ক্যান্টিনে খেতে গেলে বিষাদের কালো ধোয়া ছড়িয়ে পড়ে সবখানে আর পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে ৷

যে কোন ধরণের ক্ষতি, অপ্রাপ্তি, লস, বিয়োগান্তক ঘটনা মনে দাগ ফেলে ৷ মনের আস্তর বা গড়নের উপর নির্ভর করে কখন কতটুকু আঘাতে মন কাতর হবে, কখন মন বিষাদময় হবে, আর কখন তা ভেঙে চূড়মার হয়ে যাবে যার ফলশ্রূতিতে হঠাৎ
বেছে নেবে আত্মহত্যার পথ ৷ সন্দেহ নেই বিষন্নতার অন্যতম প্রধান কারণ
” ব্যর্থতা ” ৷ কিন্তু ব্যর্থতা এলেই তারা ডিপ্রেশন এ ভুগবেন এমনটা নয় ৷
বহু ব্যর্থ ব্যক্তি ব্যর্থতার পিঠের উপর দাঁড়িয়ে সফলতার মুকুট পড়তে অভ্যস্থ ৷

যারা দ্রুত বিষন্ন হন এবং আত্মহত্যার মতো অনাকাঙ্খিত কাজটি করেন বা করতে উদ্দত হন – তাদের গাল মন্দ করে কোন লাভ নেই ৷ পুরোবিষয়টা হয়তো তার নিয়ন্ত্রনেই থাকে না ৷ প্রচুর স্ট্রেস নিয়ে অনেক লোককে কাজ করতে দেখা যায়, অনেকে এসব সময় চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন ৷ দু:খ , কষ্ট ,যন্ত্রনা, ব্যর্থতা যদি এতোই হতাশাকে কাছে টানবে বা বিষন্নতার গর্তে ফেলবে তবে কাজী নজরুল ইসলাম এতো প্রফুল্ল মনে কিভাবে সীমাহীন সৃষ্টিকর্ম উপহার দিলেন ? এর জবাব হচ্ছে তার মানসিক প্রকৃতি ওসবে পাত্তা দেয়নি , কাবু হবার বদলে পেয়েছে গতি ৷
ওষুধের পাশাপাশি মনোচিকিৎসা ও সামাজিক চিকিৎসা খুবই দরকার যা রোগীর আরোগ্যলাভে চমৎকার ভূমিকা রাখে ৷

” আসুন কথা বলি” – শ্লোগান এখানে এলো কেন ?
ডিপ্রেশনের রোগীরা কম কথা বলে, নিচ মাথায় চলাফেরা করে ৷ প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে চায় না, দিলে কম শব্দে লো ভলিউমে উত্তর দেয় ৷ একসময় কথা বলা বন্ধ করে দেয় যাকে ” ডিপ্রেসিভ মিউটিজম ” বলে ৷ যে নানাভাই এতশত গল্প বলে বাড়ির উঠোন চাঁদনী রাতে মাতিয়ে রাখতেন আজ তার বোবামুখের এতিম চাহুনি ভেতরে একপ্রকার হাহাকারের সৃষ্টি করে বৈকি !
তাই নানাভাইকে কথা বলানোর জন্যই এই শ্লোগান ” Let us talk – আসুন কথা বলি ” ৷

লিখেছেন:
অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াহাব,
আদ-দ্বীন উইমেনস মেডিকেল কলেজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

মানসিক চাপ ও স্বাস্থ্য

Fri Apr 7 , 2017
স্ট্রেস হলো এক কালপ্রিটের নাম, আমাদের শরীরে এমন কোন অঙ্গ নাই যেখানে স্ট্রেসের ক্ষতিকর প্রভাব নাই। অল্প বয়সে বুড়িয়ে যাওয়া, চুল পেকে যাওয়া, চুল পরে যাওয়া, হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক সহ প্রায় সব কিছুর উপর স্ট্রেসের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে …মেডিটেশন বা বুড্ডিস্ট টেকনিক শুধু মাত্র স্ট্রেস কমানোর জন্যই হাজার বছর ধরে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo