বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ। তবে কর্তৃপক্ষ নয়, এ ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।
প্ল্যাটফর্মের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৬ মে দুপুরে বহু দিনের পুরনো ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) অ্যানাটমি মিউজিয়ামের ছাদের পলেস্তারা ব্যাপকভাবে ধসে পড়ে। তবে কলেজের ‘স্পোর্টস উইকের’ কারণে সেদিন কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে না আসায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, ঢামেকের অ্যানাটমির মিউজিয়ামে নিয়মিত কে-৮১ এর নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থীর নিয়মিত ক্লাস হয়। বহু দিন ধরেই ভবনের পলেস্তারা ধসে পড়ার ঘটনা চলমান ছিল। তবে গত ২৬ মে দুপুর একটার দিকে ব্যাপক আকারে ধসের ঘটনা ঘটে। তবে সে দিন কলেজে স্পোর্টস উইক চলমান থাকায় কোনো ক্লাস ছিল না। ফলে কোনো শিক্ষার্থী সেখানে যাননি। এর সুবাদে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছেন তারা। শিক্ষার্থী থাকাকালীন এমন ২০-৩০ কেজি ওজনের একেকটি পলেস্তরার টুকরো ধসে পড়ার ঘটনা ঘটলে শিক্ষার্থীর অঙ্গহানী বা প্রাণহানি পর্যন্ত হতে পারত!
জানা গেছে, এর দুই সপ্তাহ আগে একইভাবে মিউজিয়ামের মাঝখান থেকে ছাদের পলেস্তারা ধসে পড়ে। সপ্তাহ খানেক আগে অ্যানাটমি বিভাগে শিক্ষকদের বসার স্থানেও একইভাবে পলেস্তারা ধসে পড়ে। কিন্তু প্রতিবারই সৌভাগ্যবশত কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, গত সোমবার যদি ক্লাস খোলা থাকতো, তাহলে আমাদেরকে কবর অথবা হাসপাতালে থাকতে হতো। বিগত বছরগুলো দেশের প্রায় প্রতিটি মেডিকেল কলেজে কোনো না কোনো সংস্কার কাজ হয়েছে। অথচ ঢাকা মেডিকেল কলেজের সুপ্রাচীন ভবনের কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমনকি আমাদের মেডিকেল কলেজ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর ১০-১১ বারের মতো চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও মেরামতের উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সমস্যা এখানেই শেষ নয়। বর্ষা মৌসুমে অল্প বৃষ্টিতেই মিউজিয়াম প্লাবিত হয়ে যায়।
জানা গেছে, পলেস্তারা ধসের পরদিন (২৭ মে) ঢামেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. কামরুল আলম কলেজের নিযুক্ত প্রকৌশলীদেরকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা সম্পূর্ণ বিষয় পর্যবেক্ষণ করে মত দেন যে, এই ভবনের বয়স প্রায় ৮০-৯০ বছর হয়ে যাওয়ায় শুধুমাত্র মেরামত করে কখনোই ১০০% ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব নয়। হিসেব মতে এ ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করার কথা। তবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে অ্যানাটমির ক্লাসের বিকল্প জায়গাও নেই।
তবে তারা আপাতত প্রয়োজনীয় মেরামত করে ‘এই ভবন আর মেরামতযোগ্য নয়’—এই মর্মে লিখিত দিবেন বলে জানা গেছে
শিক্ষার্থীরা বলেন, যেহেতু শতভাগ নিরাপদ নয়। সেহেতু অ্যানাটমি মিউজিয়াম ও ডিসেকশন হলে কোনো ক্লাসে করতে তারা রাজি নন। জীবন ও ক্লাসের প্রশ্নে তারা অবশ্যই জীবনকে প্রাধান্য দেবেন। মৃত্যুপুরীতে ক্লাস করতে যাবেন না। এজন্যই তারা কলেজ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন।
প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস