বাংলাদেশে অধ্যয়নরত নেপালী শিক্ষার্থীদের নিয়ে অশোভন মন্তব্য অতঃপর পদত্যাগ মন্ত্রীর।

বাংলাদেশে অধ্যয়নরত নেপালী শিক্ষার্থীদের নিয়ে অশোভন মন্তব্য অতঃপর পদত্যাগ মন্ত্রীর।নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়তে আসা নেপালি নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার পর চাপের মুখে পদত্যাগ করেছেন নেপালের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী শের বাহাদুর তামাং, নারীদের ব্যাপারে খুব স্পর্শকাতর বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেছিলেন এবং তার এই মন্তব্যের ফলে যারা ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষমা ও চান।

গত ২০শে জুলাই এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী শের বাহাদুর তামাং বলেছিলেন, “মেডিকেলের উপর যারা বাংলাদেশে লেখাপড়া করতে যায়, সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্যে তাদেরকে সেখানে নিজেদেরকে বিক্রি করতে হয়।”

তার এই মন্তব্য তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করে নেপালে। বিশেষ করে বাংলাদেশে পড়তে আসা নেপালি শিক্ষার্থীরা মন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে।

নেপালি শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, কোন ধরনের তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই মন্ত্রী তাদের ব্যাপারে মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন।

“তিনি কি কখনো বাংলাদেশে পড়তে যাওয়া নারী শিক্ষার্থীদের কাছে এব্যাপারে খোঁজ নিয়েছিলেন? আমরা সেখানে কতো কষ্ট করে লেখাপড়া করি তার তিনি কিছুই জানেন না,” বলেন ড. রোজি মানান্ধার, যিনি বাংলাদেশ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে সম্প্রতি নেপালে ফিরে গেছেন।

”কোন ধরনের প্রমাণ ছাড়াই তিনি একথা বলেছেন। কঠোর পরিশ্রম করেই আমি আমার সার্টিফিকেট পেয়েছি,” তিনি বলেন।

ওই অনুষ্ঠানেই মন্ত্রী তামাং বলেছিলেন জোর দিয়ে বলেন বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসা কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তিনি এধরনের অভিযোগের কথা শুনেছেন। তবে তিনি এও বলেছেন যে এসব অভিযোগের সত্যতা তিনি নিজে কখনো যাচাই করে দেখেন নি।
এরপর তীব্র আপত্তি ও অনাস্থা শুরু হলেও প্রথমদিকে পদত্যাগ করতে চান নি, তবে তার নিজ দল ক্ষমতাসীন কমিউনিষ্ট পার্টি অফ নেপালের ভিতরেই তীব্র অসন্তোষ এর সৃষ্টি হয় এবং পদত্যাগে চাপ দেওয়া হয় পরে তিনি বাধ্য হন।
মন্ত্রী তামাং এর বিরুদ্ধে লিঙ্গ বৈষম্যোর অভিযোগ করে নেপালের সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে এবং তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলে নেপালের সাধারন জনগন।

পরে বিবিসির নেপালি বিভাগকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী তার এই মন্তব্যের জন্যে ক্ষমাও চেয়েছেন।

সিরাজগঞ্জ এর নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজের ৪র্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বিষ্ণু বলেছেন “বাংলাদেশে পড়তে আসা নেপালী নারী শিক্ষার্থীরা কোন ধরনের চাপের মধ্যে নেই।  এটা একটি ভিত্তিহীন কথা এবং মন্ত্রীর বক্তব্যের কারনে পরিবার থেকে এখানকার পরিস্থিতি জানতে চেয়েছেন কিন্তু এখানে এরকম কোন অবস্থাও হয় নি এবং আমরা নিরাপদেই আছি।”

এদিকে বাংলাদেশে ডাক্তার সমাজ ও দায়িত্বশীল মন্ত্রীর এরকম মন্তব্যে নিজেদের সম্মানহানী মনে করছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ বলছেন এটা কোন ষড়যন্ত্রের ই অংশ বাংলাদেশে নেপালী শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন এর জন্য আসছে স্বাধীনতার পর থেকে তবে শেষ কয়েকবছরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, মুলত বেসরকারী মেডিকেল কলেজগুলোতে এ ভর্তি হচ্ছে এ উল্লেখযোগ্যন সংখ্যক শিক্ষার্থী। নেপালী শিক্ষার্থী ছাড়াও এদেশে এমবিবিএস এবং বিডিএস ডিগ্রী অর্জন করার জন্য ভারতের তেলেগু, কাশ্মীর, কোলকাতা, ইরান সহ বেশকিছু দেশের শিক্ষার্থী পড়তে আসছে প্রতিবছর এবং তাদের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক চিকিৎসক শিক্ষক এবং বাঙালী শিক্ষার্থীরা। আর বেসরকারী মেডিকেল কলেজগুলোতে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ ভাগ কোটা ও বিদ্যমান।

ডাঃ আতিকুজ্জামান ফিলিপ বলেন “এই মিথ্যা অভিযোগ শুধু আমাদের চিকিৎসক শিক্ষকদের প্রতি নয়, এই মিথ্যা অভিযোগ আমার প্রিয় বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই।”

এবং এদেশ থেকে পাশ করে যাওয়া এবং বর্তমানে এদেশে চিকিৎসা শিক্ষারত নেপালী ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকেও তাদের মন্ত্রী কর্তৃক এহেন ন্যাক্কারজনক মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানানোর পরামর্শ দেন সাথে সাথে বিএসএমএমইউ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মন্ত্রনালয়, বিএমএ এর কাছে অনুরোধ করেন মন্ত্রী তামাং এর অশোভন মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদলিপি দেওয়ার জন্য।

তথ্যসূত্রঃ বিবিসি
লিখেছেনঃ
শেখ লুৎফুর রহমান তুষার
শিক্ষার্থী ৪র্থ বর্ষ,
খাজাঁ ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে চালু হল Therapeutic Plasma Exchange এবং Stem Cell Collection(Non hematological use) সেন্টার

Thu Jul 26 , 2018
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে চালু হল Therapeutic Plasma Exchange এবং Stem Cell Collection(Non hematological use) সেন্টার।মাননীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী জনাব নাসিম এমপি আজ আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উদ্ভোদন করেন।সরকারী পর্যায়ে এটিই প্রথম।NINS এ Therapeutic Plasma Exchange চালু থাকলেও সেটি নিউরোলজিকেল কেস সংশ্লিষ্ট রোগগুলোর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হওয়ায় সবার […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo