পিটার সাই: N95 মাস্ক পুনঃব্যবহার উপযোগী করার নেপথ্য নায়ক

প্ল্যাটফর্ম নিউজ
বুধবার, ১৩ মে, ২০২০।

যখন এই বিশ্ব N95 মাস্কের স্বল্পতায় ভুগছিল, তাইওয়ানে জন্মগ্রহণকারী ৬৮ বছর বয়সী পিটার সাই দুশ্চিন্তায় ঘুমোতে পারতেন না। যদিও বিজ্ঞানী পিটার হিসেবে গত বছরই অবসরে গিয়েছিলেন তবুও কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের শেষ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা N95 মাস্কের কান্ডারি হিসেবে তিনিই এখন বিশ্ববিখ্যাত।

মূলত এ বছরের জানুয়ারি থেকেই তাঁর কাছে অজস্র ফোন কল এবং ইমেইল আসতে থাকে; মোটামুটি সবগুলোরই সারকথা ছিল এই যে – ‘তিনি কি এমন কোন উপায় বলতে পারেন যা এই N95 মাস্ককে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তুলবে?’ কেননা হাসপাতালের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে এই মাস্ক শুধু একবারই (তখন পর্যন্ত) ব্যবহার করা যায। একবার ব্যবহার শেষেই এর ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বিনষ্ট হয়। করোনার এই ক্রান্তিকালীন সময়ে তাই বিশ্ব আবার তার কাছে সহায়তা চায়।

সকল পরিস্থিতি বিবেচনা সাপেক্ষে সাই অবসর থেকে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন।

সাই বলেন, ” ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হলেও সত্য ১৯৯২ সালে N95 মাস্ককে ভাইরাস প্রতিরোধী করতে আমি যে চার্জিং প্রযুক্তির ব্যবহার করেছিলাম তার নাম ছিল ‘করোনা চার্জিং’।”
মূলত, ১৯৯২ সালে তিনি যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিলেন, তা ছিল মাস্কের সূক্ষ্ম তন্তুগুলোতে স্থির তাড়িতকরণ করা; যাতে মাস্কের ফিল্টারিং করার ক্ষমতা ১০ গুন বৃদ্ধি পায় এবং তা মাইক্রনের চেয়েও ক্ষুদ্র আকারের অণুজীবকে সহজেই আটকে দিতে পারে।

“যখন ফোন কল আর মেইলগুলো আসতে শুরু করে, আমি আর ঘুমোতে পারিনি। প্রকৃতপক্ষে আমি বিগত দুই মাসে বেশি একটা ঘুমাইনি, কিন্তু আমার মনে হয় এখন আমি একটু আয়েশ করতে পারি”, বলেন সাই। ” এখন পর্যন্ত আমি যা পেয়েছি তার মধ্যে উত্তাপনই সর্বোত্তম সমাধান। মাস্ককে ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৬০ মিনিট উত্তপ্ত করলে ভাইরাস ধ্বংস হবে এবং পুনরায় ব্যবহারযোগ্য হবে। বাষ্পীভূতকরণের মত আরো কিছু উপায় থাকলেও এক্ষেত্রে উত্তাপনের কার্যকারিতাই সবচেয়ে আশাবাদী করে। আমেরিকার ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (FDA) এবং অন্যান্যরা এটা নিয়েই ভাবছে। অনেকেই অতিবেগুণী রশ্মির কথা বলেছিল। কিন্তু আমার আশঙ্কা এটি মাস্কে থাকা পলিপ্রোপাইলিনকে নষ্ট করে দিতে পারে।”

সাই হয়তো অল্প সময়ে একটি সমাধানে আসতে পারতেন কিন্তু ১৯৯২ তেই এটা অনেক লম্বা সময় নিয়েছিল, “সুদীর্ঘ পাঁচ বছর। আমরা জানতাম এটা মাস্কের সূক্ষ্ম তন্তুগুলোর চার্জিং সম্পর্কিত এবং আমরা সবকিছুই চেষ্টা করে দেখছিলাম।”

ব্যক্তিগত জীবনে সাই সর্বদাই সংকট থেকে উত্তরণে কোন না কোন রাস্তা খুঁজে পেয়েছেন। একজন দরিদ্র কৃষকের সন্তান হিসেবে লক্ষ্য পূরণের জন্য তাঁকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। “স্নাতক শেষ করার পর আমি তাইওয়ানে পাঁচ বছর কাজ করেছি। সেটা ১৯৭৫ সালের কথা। আমাদের কাছে বেশি টাকা ছিল না। আমেরিকা গিয়ে পড়াশোনা করার জন্য আমাকে সঞ্চয় করতে হতো। আমি তখন পোশাকশিল্পে কাজ করতাম যখন কিনা আমি অনুভব করলাম আমাদের দেশ গবেষণা এবং উন্নয়ন কাজে বেশ খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে। আমরা যা করতাম তা ছিল শুধুই উৎপাদন; প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতি আসতো জাপান, আমেরিকা অথবা ইউরোপ থেকে। এরপর আমি পড়াশোনা করার জন্য কানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটিতে যাই।”

পরবর্তীতে সেখানে তিনি ৫০০ ক্রেডিটের কোর্সে যোগদান করে সবাইকে অবাক করে দেন, কারণ একজন পিএইচডি শিক্ষার্থীর স্নাতকের জন্য মাত্র ৯০ ক্রেডিট প্রয়োজন। তিনি বিভিন্ন ধারার কোর্স নেন, যেমন: যন্ত্রপ্রকৌশল, উপাদান প্রকৌশল, রাসায়নিক প্রকৌশল, তড়িৎ প্রকৌশল, পদার্থবিদ্যা এবং গণিত। “আমি গণিতে ভালো দখল চেয়েছিলাম এবং পরবর্তীতে একজন টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে উঠি।”

এই বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি আগ্রহই তাকে পরবর্তী সময়ে তাঁর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে।

” আমি n95 মাস্ক উদ্ভাবন করি নি। শুধু ফিল্টারের কার্যকারিতা বৃদ্ধিকারী চার্জিং পদ্ধতিটি আমার অবদান। আমি দুইটি পদ্ধতি- মেল্ট ব্লোয়িং এবং স্থির তাড়িতকরণ কাজে লাগিয়ে ফেব্রিকের একটি স্তর তৈরি করেছি যা এই রেসপিরেটর মাস্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”

মেল্ট ব্লোয়িং সুতাকে খুবই সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত ফেব্রিকে পরিণত করে। স্থির তাড়িতকরণ সুতায় বৈদ্যুতিক চার্জ তৈরি করে যা ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া কে আটকে দেয়। “আমার প্রাথমিক রেস্পিরেটর রাজমিস্ত্রি এবং রংমিস্ত্রিদের জন্য ছিল। পরবর্তীতে এটি স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য ব্যবহৃত হয়।”

এটিই বর্তমান কোভিড আক্রান্ত বিশ্বের আত্মরক্ষার প্রধান সামগ্রী। ২০১৮ সালে তিনি বাতাস বিশুদ্ধকরণের জন্য হাইড্রো ট্রাইবো ইলেক্ট্রিফিকেশন পদ্ধতি নিয়ে আসেন। একই পদ্ধতি N95 মাস্কে ব্যবহার করে এর উপাদান অর্ধেকে নামিয়ে আনা যায় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে এটি মাস্কের কার্যকারিতা ১০ গুন বৃদ্ধি করে।

সাই বর্তমানে মেডিকেল বিশ্বের কাছে একজন নায়ক। তিনি বলেন, “আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আমার উদ্ভাবন মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করছে। আমার কিছু অধ্যাপক হাসির ছলে বলেন যে, আমার নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত। তুমি জানো আমি তাদেরকে কি বলি? বিগত দুই মাস যাবত নিদ্রাহীন পরিশ্রম করতে করতে আমার পেট যেভাবে শুকিয়ে গেছে, তাতে আমার আসলে ‘NoBelly’ পুরস্কার পাওয়া উচিত।”

অনুবাদঃ “দ্যি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস” অবলম্বনে

নিজস্ব প্রতিবেদক
অভিষেক কর্মকার জয়

হৃদিতা রোশনী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে চালু হচ্ছে করোনার নমুনা সংগ্রহের ৮টি বুথ

Wed May 13 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ ১৩ই মে, বুধবার, ২০২০ আজ ১৩ই মে, বুধবার দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। ডিএনসিসি নগর ভবনে সীমিত পরিসরে আয়োজিত সে অনুষ্ঠানে তিনি জানান, “শীঘ্রই সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদিত মোট আটটি স্থানে বুথ স্থাপন করবে (ডিএনসিসি)।” এ বিষয়ে ঢাকা […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo