দীর্ঘ কোভিড – এক অজানা আতঙ্কের নাম

প্লাটফর্ম নিউজ, ২০ আগস্ট, ২০২০, বৃহস্পতিবার 

ডা. ফাহমিদা রশীদ স্বাতি
সহকারী অধ্যাপক
গাইনি
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

“দীর্ঘ কোভিড” হল, যারা কোভিড থেকে সেরে উঠেছে কিন্তু এখনো তাদের কিছু সমস্যা থেকে গেছে বা কোভিডের উপসর্গ স্বাভাবিকের চেয়ে (কয়েক সপ্তাহ, মাসব্যাপী) বেশি দিন ধরে আছে।

শুরতে কোভিড নিয়ে জনমনে একটা ধারণা ছিল- “কোভিড হয় মারবে, নয় খারাপ ধরনের জ্বর শেষে ভালো হয়ে যাবে।”

বিশ্ব চরাচরে কোভিড আসার প্রায় আট মাস পর যেন সব হিসেব উলট-পালট হয়ে গেছে। এখন মনে হচ্ছে কোভিড এক গোলকধাঁধা। এর মোড় কোন দিকে ঘুরবে তা বুঝে উঠা খুব কঠিন। এই ভাইরাস যার শরীরে একবার বাসা বেঁধেছে তাকে অনেক দিন নাকানিচুবানি খাইয়ে তবেই ছাড়ছে। এই নাকানিচুবানির নাম দেয়া হয়েছে – দীর্ঘ কোভিড। ডাক্তার থেকে শুরু করে অনেক রোগী সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের এ কষ্টের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে এটিকে “ভয়ংকর ও দীর্ঘ” বলছেন। কোভিড রোগীর অভিজ্ঞতা যেন রোলারকোস্টার জার্নি। অনেকের হয়তো এ দীর্ঘ সময় হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়না, কিন্তু কষ্ট পেতে হচ্ছে বাসায় থেকেই। নানা রকম উপসর্গ সপ্তাহের পর সপ্তাহ থেকে যাচ্ছে তাদের। ফলশ্রুতিতে সম্পূর্ণ সেরে উঠেও কর্মক্ষম হতে পারছে না অনেকেই।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞের রুমে “দীর্ঘ কোভিড” রোগীর ভীড় বেড়ে গেছে এখন। শুধু শারীরিক সমস্যা নয়, মানসিক, নিউরোলজিক্যাল সমস্যাও এর মাঝে অন্তর্ভুক্ত। তাই এ গ্রুপের রোগীদের কীভাবে চিকিৎসা করতে হবে বা কি কাউন্সেলিং করা লাগবে তার জন্য সঠিক গাইডলাইন জরুরি এবং তা বের করার চেষ্টাও চলছে।

এখনো দীর্ঘ কোভিডের উপর গবেষণালব্ধ ফলাফল কম। ইটালির এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়া প্রতি ১০ জনের ৯ জনই কোভিড থেকে সেরে উঠার পরও কমপক্ষে একটা উপসর্গে ভুগছে (ধরা পড়ার ৬০ দিন পরও)। সমীক্ষায় ৩২% এর এক/ দুইটা আর ৫৫% এর তিন/তার অধিক উপসর্গ ছিল। যদিও কারো জ্বর বা জরুরি কোন উপসর্গ ছিল না। উপসর্গের মাঝে ছিল-

  • ক্লান্তি,
  • শ্বাসকষ্ট,
  • জয়েন্ট ব্যথা, বুকে ব্যথা , মাংস পেশীর ব্যথা,
  • ঝাপসা চিন্তা (ব্রেন ফগ), স্মৃতি ভ্রম, মনোযোগের অভাব, ডিপ্রেশন, মানসিক সমস্যা,
  • চুল পড়া ইত্যাদি।

দুই পঞ্চমাংশের মতে তাদের জীবনযাত্রার মান আগের চেয়ে পরিবর্তন বা অবনতি হয়েছে।

লন্ডনে ৪ মিলিয়ন লোকের উপর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি ১০ জনের ১ জন কোভিড রোগীর ৩ সপ্তাহ বা তার চেয়ে বেশী দিন উপসর্গ ছিল, যদিও বেশীর ভাগই দু’সপ্তাহের মাঝেই ভাল হয়ে যায়। কোভিড সার্ভাইভারদের থেকে যাওয়া সমস্যা গুলো হলো-

  • শ্বাসের সমস্যা,
  • অতিরিক্ত দুর্বলতা, মাংসপেশির শিথিলতা,
  • নিত্যদিনের কাজ-কর্ম করতে সমস্যা,
  • মানসিক সমস্যা পিটিএসডি (পোস্ট ট্রাউমাটিক স্ট্রেস ডিসর্ডার), উদ্বিগ্ন থাকা, ডিপ্রেশন।

এইতো, ক’দিন আগে আমারই এক পরিচিত রোগী কোভিড থেকে ভাল হয়ে বাসায় ফেরার কিছুদিন পর হঠাৎ করে আত্মহত্যা করে বসলো।

একটা ব্যাপারে সব গবেষকেরাই একমত, সেটা হলো- “কোভিড এখনো অজানা”। কেন? কি সমস্যা হচ্ছে? কি করণীয়? তা নিয়ে রাত দিন গবেষণা চলছে। কি দিয়ে এর চিকিৎসা করা যাবে তা এখনো পরিস্কার নয়। তবে যারা দীর্ঘ কোভিডে ভুগছে তাদের ডাক্তার, নার্স, ফিজিওথেরাপি, মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দরকার হতে পারে এবং সবার সমন্বিত চেষ্টা দিয়েই রোগী উপকৃত হবে বা হচ্ছে। রোগীর করণীয়ঃ

  • ব্যায়াম,
  • পারস্পরিক যোগাযোগ,
  • মানসিক সাপোর্ট তাদের তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলছে।
  • এছাড়া বিশ্রাম, নিজেকে কোন কিছু করার জন্য অতিরিক্ত চাপ না দেয়া,
  • ভালো খাওয়া দাওয়া করা, প্রচুর পানি পান করা ইত্যাদিও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

কোভিডের আদ্যোপান্ত বুঝে উঠার জন্য দরকার সময় এবং গবেষকরা সময় নিয়ে সবরকম নিরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া কোভিড রোগীকে আরো এক বছর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের চিন্তা চলছে। তা থেকে হয়তো ভবিষ্যৎ চিকিৎসা পদ্ধতি বের করা হবে।

পৃথিবী আবার সুস্থ হবে। হয়তো একদিন পৃথিবী থেকে এ রোগ চলে যাবে। কিন্তু যারা ভুক্তভোগী তাদের শরীর ও মনে এটি কেমন ছাপ রেখে যাবে তা সময় বলে দিবে। বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মতোই এই ভাইরাসের ভয়াবহতার ছাপ হয়তো শত শত বছর মানুষের স্মৃতিতে থেকে যাবে।

Nusrat Jahan Kheyam

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

অদৃশ্য হীরোরা

Thu Aug 20 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২০ আগষ্ট, ২০২০, বৃহস্পতিবার  ডা. বি এম আতিকুজ্জামান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, ২৮ তম প্রজন্ম অনেকদিন পর এমিলিকে দেখলাম আজ। আমাদের সার্জারী সেন্টারে কাজের ফাঁঁকে এককাপ চা নিয়ে অবসর নেবার জায়গায় বসতেই তাকে চোখে পড়লো। এমিলি তার ভ্যান থেকে নেমে নিজেই কয়েকটা বাক্স পুলিতে তুলে আমাদের সেন্টারের দিকে আসছে। […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo