ঢাকা মহানগরীতে সফলভাবে পালিত হলো ১২ হাজার চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীর এডিস মশা নিধন অভিযান

19224770_10203142307035062_8084198978341499859_n

 


আজ ঢাকা মহানগরীতে সফলভাবে পালিত হলো ১২ হাজার চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীর এডিস মশা নিধন অভিযান

-স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে

 

 

 

১৭ জুন ২০১৭। ঢাকা মহানগরীর সাম্প্রতিক চিকুনগুনিয়া রোগের প্রেক্ষাপটে এই রোগের বাহক এডিস মশা নিধনে আজ নগরীজুড়ে সফলভাবে একটি অভূতপূর্ব অভিযান পালিত হয়। মহানগরীর ৭১টি সরকারী ও বেসরকারী মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ, মেডিকেল এসিস্টেন্ট ট্রেইনিং স্কুল, ইনস্টিটিউট অফ হেলথ টেকনোলজি, নার্সিং ইন্সটিটিউট ও নিপসম-এর প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষক ও চিকিৎসকগণের নেতৃত্বে ২০৫টি দলে বিভক্ত হয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯২টি ওয়ার্ডের ৭৫০টি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। কর্মসূচীর উদ্যোক্তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের পক্ষে সার্বিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। সহযোগিতা করে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষনা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক ফেসবুক সোস্যাল মিডিয়া গ্রুপ প্লাটফর্ম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচী তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় করেন।

অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কর্মসূচীর শুরুতে একটি করে র‍্যালি করে। এরপর ২০ থেকে ৩০ জনের ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচী পালন করে। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল ৭৫০টি এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে এবং বাড়িগুলোর আশেপাশে এডিস মশার বংশবৃদ্ধির স্থান সনাক্ত ও ধ্বংস করা এবং পরিত্যক্ত কৌটা, ডাবের খোসা, ভাংগা হাড়িপাতিল ও জমানো পানি অপসারণ করা। এ সময় জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয় এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা দেয়া হয়। কোথাও কোথাও পথসভা করা হয়। এছাড়াও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে সম্ভাব্য চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীর সম্পর্কে তথ্য নেয়া হয়। সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা এ সময় মশা ও মশার লার্ভা মেরে ফেলার জন্য ফগিং ও  স্প্রে করে। এই কর্মসূচী উপলক্ষ্যে গত রাতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন প্রতিটি ওয়ার্ডে অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ করে বিভিন্ন সড়ক ও স্থান পরিষ্কার করে।

 

19225742_1594066687305432_3949399230369411216_n

 

৭১ টি চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংগৃহিত তথ্যের মধ্যে ২৮টি কর্তৃক সংগৃহিত ১৪০টি এলাকার ১,৪৮০টি বাড়ি থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষন করা হয়েছে। এসব বাড়ি থেকে সম্ভাব্য চিকুনগুনিয়ার ২,৯৫৬ জন রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জরীপের পূর্ণাংগ তথ্য বিশ্লেষণ শেষ হওয়ার পর গণমাধ্যমকে তা জানানো হবে।

 

 

কর্মসূচী চলাকালে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনাব মোহাম্মদ নাসিম, এমপি ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দি মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ও পপুলার মেডিকেল কলেজ কর্তৃক যথাক্রমে আজিমপুর, গণভবনের পার্শ্ববর্তি এলাকা, ধানমন্ডি ১৫ নম্বর রাস্তা সন্নিহিত এবং ধানমন্ডি ৩ নম্বর রাস্তা সন্নিহিত এলাকায় পরিচালিত কর্মসূচী পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা সচিব জনাব সিরাজুল হক খান, স্বাস্থ্য অধিপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, বিশিষ্ট সমাজ গবেষক ও কলামিষ্ট জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদ, পরিচালক, রোগ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাপক ডাঃ সানিয়া তহমিনা, আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ সাব্রিনা ফ্লোরা, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাগণ এবং সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজগুলোর অধ্যক্ষগণ।

 

 

বিপুল সংখ্যক গণমাধ্যম কর্মীর উপস্থিতিতে মাননীয় মন্ত্রী এ সময় বলেন, “চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের এই অংশগ্রহণ প্রতীকী। তারা একদিনে ঢাকা মহানগরীর সকল এডিস মশা মেরে ফেলতে পারবে না। তবে আশা করি, নাগরিক-সাধারণ স্ব স্ব বাসা বাড়ি এবং বাড়ির আশপাশের মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করবেন। তাহলেই এই নগরীকে এডিস ও ডেঙ্গুমুক্ত রাখা যাবে।”

সকাল ৯টায় সকল চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসুচী উদ্বোধন করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ প্রিভেন্টিভ এন্ড সোশাল মেডিসিন (নিপসম) অডিটোরিয়ামে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ জনাব মোঃ সিরাজুল হক খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব মোঃ ফয়েজ আহমেদ। অধ্যাপক ডাঃ বায়েজিদ খুরশিদ রিয়াজ, পরিচালক, নিপসম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। কর্মসূচী ব্যাখ্যা করেন নিপসমের প্যারাসাইটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ বেনজির আহমেদ।

 

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ অডিটোরিয়ামে। প্রধান অতিথি ছিলেন সচিব, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ জনাব সিরাজুল ইসলাম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য ও বিশ্ব স্বাস্থ্য) রোকসানা কাদের, পরিচালক (প্রশাসন), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডাঃ সমীর কান্তি সরকার এবং ঢামেক-এর অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ খান আবুল কালাম আজাদ।

এদিকে মানিকগঞ্জ শহরে অনুরূপ একটি কর্মসূচী পরিচালনা করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক, এমপি।

 

19146011_1197203997092634_8504358647717758049_n

 

ঈদুর ফিতরের ছুটির আগে দ্রুততম সময়ে এই কর্মসূচীর প্রস্তুতি সম্পন্ন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিগত ৪ দিন ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা সাপ্তাহিক ছুটি না নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে এই কর্মসূচীকে সফল করে। এ ছাড়া চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের প্রায় ৭০ হাজার সদস্যের সোশাল মিডিয়া গ্রুপ প্ল্যাটফর্মের প্রায় একশত স্বেচ্ছাসেবী পরিকল্পনা পর্যায় থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে উপস্থিত থেকে আয়োজনের সফলতা নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করে। জনসাধারণকে এ বিষয়ে অবহিত করার জন্য মোবাইল মেসেজ দেয়া হয় এবং সোস্যাল মিডিয়া এবং গণমাধ্যমে প্রচার চালানো হয়। অভিযান চলাকালীন সময়েও ফেসবুক লাইভ ও ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে প্রচার চালানো হয়।

অভিযানে নানা ধরনের পরিত্যক্ত কনটেইনার পাওয়া যায় যেগুলোর অনেকগুলোতেই পানি জমে ছিলো এবং কিছু ক্ষেত্রে মশার লার্ভাও পাওয়া যায়। নিপসমের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ ধারণা করছেন, এই ঢাকা মহানগরীতেই এ ধরনের পরিত্যক্ত কনটেইনারের সংখ্যা কয়েক কোটির উপর হতে পারে। কাজেই এডিস মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করে চিকুনগুনিয়া ও এডিস মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ করা কোন একক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য সম্মিলিত উদ্যোগ ও জনসচেতনতা প্রয়োজন। “সপ্তাহে একদিন, জমে থাকা পানি ফেলে দিন” এই স্লোগানকে সামনে রেখে প্রতিটি মানুষ যদি সপ্তাহে একদিন তার বাড়ি ও বাড়ির আশেপাশের জমে থাকা পানি ফেলে দেয় তাহলেই এই রোগের প্রকোপ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। অন্যথায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না।

 

 

 

 

আশা করা যায় এই কার্যক্রমের ফলে ঢাকা শহরের জনগণ নিজেদের বাড়ি এবং আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখবেন এবং ঢাকা শহরকে এডিস এবং এডিসবাহিত রোগ (চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু) থেকে মুক্ত রাখতে উদ্বুদ্ধ হবেন।

অভিযানকে সার্বিকভাবে সফল করার জন্য অংশগ্রহণকারী চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ, চিকিৎসক ও শিক্ষার্থী, দুই সিটি কর্পোরেশন, গণমাধ্যম ও জনসাধারণের স্বতঃস্ফুর্ত সহযোগিতার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে।

লাইভ ভিডিও লিঙ্ক ঃ https://www.facebook.com/Platform.med.org/videos/818433928307471/

Ishrat Jahan Mouri

Institution : University dental college Working as feature writer bdnews24.com Memeber at DOridro charity foundation

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

৩৮তম বিসিএস সার্কুলার মঙ্গলবার

Sun Jun 18 , 2017
মঙ্গলবার ৩৮ তম বিসিএসের সার্কুলার জারি করতে যাচ্ছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক আজ জানিয়েছেন , আগামী পরশু অর্থাৎ মঙ্গলবার ৩৮তম বিসিএসের সার্কুলার জারির বিষয়ে বৈঠক রয়েছে। ওই দিন সার্কুলার জারি করা হতে পারে। এছাড়া তিনি আরো জানান বিভিন্ন ক্যাডারের শূন্য পদে ২১শ জনকে এ বিসিএস […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo