কোভিড-১৯ এর ভবিষ্যৎ এবং কিছু সম্ভাবনা


প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২১ মে ২০২০, বৃহস্পতিবার

ডা. জাহিদুর রহমান
ভাইরোলজিস্ট ও সহকারী অধ্যাপক,
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

আমাদের প্রথমেই একটি কথা মেনে নিতে হবে, কোভিড-১৯ ২০২২ সালের আগে পৃথিবী থেকে যাবে না। এর কারণ মূলত দুটি,

প্রথমত, এর বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হওয়ার সম্ভাবনা কম। আবিস্কার হলেও সেটি আমাদের হাতে পৌঁছাতে এবং ব্যবহার করার পর ফলাফল পেতে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে।

দ্বিতীয়ত, বর্তমানে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫% কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ হার এবং হার্ড ইমিউনিটির সূত্র অনুযায়ী সারা পৃথিবীর কমপক্ষে ৬০-৭০% মানুষকে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে হবে যা দুই বছরের আগে সম্ভব না। তাহলে আগামী দুই বছর কী কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে?

সম্ভাবনা-১
প্রথম ধাক্কায় অনেক মানুষ আক্রান্ত হবে। কয়েকজন থেকে শুরু করে কয়েক হাজার, কয়েক লাখ মানুষ আক্রান্ত হবে। বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কারণে এক সময় সেই সংখ্যা আবার কমতে শুরু করবে। কিছু সময় পর ছোট ছোট আকারের আউটব্রেক দেখা দিতে পারে। স্থানীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী হলে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এভাবেই ২০২২ সাল পর্যন্ত চলবে। উল্লেখ্য, চীন, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে এবং পরবর্তীতে যে ছোটখাটো আউটব্রেকগুলো হবে, সেগুলোর জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সম্ভাবনা-২
প্ৰথম ধাক্কায় বেশ কিছু মানুষ আক্রান্ত হবে। একটি পর্যায়ে আক্রান্তের হার কমেও আসবে। কিন্তু কোন কারণে যদি স্থানীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে তাহলে দ্বিতীয় ধাক্কায় প্রথমবারের চাইতেও কয়েকগুন মানুষ আক্রান্ত হবে। এরপর এক পর্যায়ে আক্রান্তের হার কমে আসবে এবং দেড় থেকে দুই বছর ছোটখাটো আউটব্রেক হতে থাকবে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে ঈদের কয়েকদিন পর এরকম একটি পরিস্থিতি হওয়ার মারাত্মক আশংকা আছে। কারণ এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ঢাকা বিভাগে, তার মধ্যে আবার ঢাকা শহরে। লাখ লাখ লক্ষণ বিহীন আক্রান্ত মানুষ গত কয়েকদিন আগে থেকে ঢাকা ত্যাগ করছে। যেহেতু টেস্ট বেশি করা হয় ঢাকা শহরে, সেহেতু ঈদের আগে পরে কয়েকদিন বর্তমানে শনাক্ত এবং মৃতের যে ঊর্ধমুখী হার, সেটি হয়ত আর বাড়বে না বা সামান্য কমে যাবে। কিন্তু ঈদের পর সারা দেশের মানুষকে সংক্রমিত করার কাজটি শেষ করে ঢাকাবাসী আবার যখন ফিরে আসবে, তার কয়েকদিনের মধ্যে একই সাথে ঢাকার কোন এলাকার বিশাল সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে, যেটি প্রথম দিকের কয়েকগুন হবে। এরকম হওয়ার সম্ভাবনা আছে আরেকটি কারণে। বিভিন্ন হাসপাতাল এবং ল্যাবে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা কিন্তু একটানা কাজ করে যাচ্ছে। তারা স্বাভাবিকভাবেই অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ক্লান্ত হয়ে পড়বে। অন্য দিকে মূল পয়েন্টে মনোযোগ না দিলে পিপিই, পিসিআর কিটসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের সংকট দেখা যেতে পারে। ঠিক এরকম একটা মুহূর্তে যদি প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হয়, তাহলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে পারে। সুতরাং কেউ যদি মনে করেন ঈদের মধ্যে শনাক্ত সংখ্যা কমে এসেছে, ঈদের পরে লকডাউন তুলে নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকা যাবে। তাহলে তারা পুরোপুরি অজ্ঞতা আর বিভ্রান্তির মধ্যে বসবাস করছেন। একই ঘটনা ভারত, পাকিস্তান, ইরান, আফ্রিকার দেশগুলোর ক্ষেত্রে ঘটতে পারে।

সম্ভাবনা-৩
প্রথম দিকে বেশ
কিছু মানুষ আক্রান্ত হবে, এক পর্যায়ে সংক্রমণ কিছুটা কমে আসবে। কিন্তু সব সময়ই কম বেশি আক্রান্ত হতে থাকবে, অথবা নিয়মিত বিরতিতে আগামী দেড় দুই বছর সময় ধরে মাঝারি রকমের আউটব্রেক হতে থাকবে। কী পরিমাণ আক্রান্ত হবে, সেটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে সেই দেশের প্রস্তুতি এবং সক্ষমতার উপর। অর্থাৎ এক সাথে অনেক বেশি মানুষ আক্রান্ত বা মারা যাবে না। কিন্তু দীর্ঘ সময় যাবৎ অনেকে আক্রান্ত হবে এবং মারা যাবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এরকম হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

উপরের কথাগুলো কোন মিডিয়া জার্নালের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ভীতিকর করে লেখা না। প্রতিটি বাক্যের পিছনে বিজ্ঞান আছে। এই পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ৫-৭ টি ভাইরাল প্যান্ডেমিকের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা এই কথাগুলো বলছেন। নীতি নির্ধারক এবং সচেতন নাগরিক, দুই পক্ষকেই এই মুহূর্তে দ্বিতীয় সম্ভাবনা নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক হতে হবে। এটি ঠেকাতে যা যা করা প্রয়োজন, তাই করতে হবে।

সোজা কথা আরো অনেকদিন করোনাকে সাথে নিয়ে চলতে হবে, এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। যে শক্তি এবং বুদ্ধি বেশি প্রয়োগ করবে, সেই টিকে থাকবে।

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

লাইফ ইন লকডাউন, ডে ফোর্টি ফোর

Thu May 21 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২১ মে ২০২০, বৃহস্পতিবার ডা. শুভদীপ চন্দ আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। যখন জাগলাম দেখি পাশের বেডের লোক মারা গেছেন কিছুক্ষণ হয়। কেমন যেন মিশ্র অনুভূতি হচ্ছিল। উনার জন্য খারাপ লাগছিল, ভয় লাগছিল, হতাশ লাগছিল। কিন্তু সাথে মনে হচ্ছিলো ‘আমি তো মরি নি’। কি হতো যদি উনার বদলে আমিই মারা […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo