কোভিড-১৯ এবং ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা

মঙ্গলবার, ৪ মে, ২০২১

ক্রনিক ডিজিজ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত অসুখ টার নাম সম্ভবত ব্রনকিয়াল অ্যাজমা- হোক রোগী চিকিৎসক বা অচিকিৎসক! নিজের ইচ্ছামতো ইনহেলার ব্যবহার আর বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন সময়ে মন্টিলুকাস্ট খেয়ে যাওয়া অনেকটাই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে!

যেহেতু অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ ভালো না থাকলে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত অবস্থায় জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেহেতু কিছু ব্যাপারে সতর্ক হওয়া জরুরি!

⭕ মাস্কের ব্যবহারঃ

দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘসময় মাস্ক পরাটা তুলনামূলক কষ্টসাধ্য! সে কারণে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে রাখা, ব্রিদিং এক্সারসাইজ করা, বাসাতেই বিভিন্ন সময় ধরে মাস্ক পরে অভ্যাস করা এবং খুব প্রয়োজনে বাইরে গেলেও জনসমাগম পরিহার করে অল্প সময়ে ফিরে আসার চেষ্টা করা

⭕ করোনার ভ্যাক্সিন গ্রহণঃ

যাদের অ্যাজমা আছে তাদের অনেকাংশেরই এলার্জির মাত্রা এবং যেকোনো এলার্জেন এ সংবেদনশীলতা বেশি,কিন্তু তার মানে এটি ভ্যাক্সিন নেওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা নয়! ভ্যাক্সিনের উপাদানে যে কারো সংবেদনশীলতা বেশি হয়ে এলার্জিক যেকোনো পরিস্থিতি তৈরি হতেই পারে,যার প্রিভ্যালেন্স এবং সিভিয়ারিটি এখন পর্যন্ত খুব কম! একারণে অ্যাজমাতে ভোগা ব্যক্তির উচিত নির্ভয়ে ভ্যাক্সিন নেওয়া এবং কোনো বিরুপ প্রতিক্রিয়া হলে নিয়মিত যে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকেন, তার পরামর্শ নেওয়া।

⭕ অ্যাজমা একশন প্ল্যানঃ

✓যেকোনো জিনিস যা শ্বাসকষ্ট বাড়াতে পারে(যেমন-ধোঁয়া,ধূলো,ধূমপান,পোষা পাখি বা প্রানী,আরশোলা, কার্পেট বা ম্যাট্রেস,স্যাতসেতে পরিবেশ,অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা আবেগ-উত্তেজনা ইত্যাদি) তার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা

✓চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধের ব্যবহার এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অপ্টিমাইজেশন(ডায়াবেটিস রোগিদের যেমন ইনসুলিনের ডোজ এডজাস্টমেন্ট এ কিছু স্বাধীনতা আছে,অ্যাজমা রোগিদেরও তেমনি জরুরি অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহারের ফ্রিকোয়েন্সীতে স্বাধীনতা আছে)

✓ঔষধ নিয়মিত চালিয়ে যাওয়া এবং ইচ্ছেমতো পরিবর্তন বা বন্ধ না রাখা

✓যেকোনো এটাক বা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিয়মিত যে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকেন তার সাথে অনলাইন কন্সাল্টেন্সি করা

✓অন্তত ৩০ দিনের নিয়মিত ঔষধের উপস্থিতি বাসায় নিশ্চিত করা যাতে সেল্ফ আইসসোলেশন অথবা কোয়ারান্টাইন চলাকালীন হঠাৎ অপ্রাপ্যতা না হয়!

✓মিটারড ডোজ ইনহেলারের গায়ে পাফ সংখ্যা লেখা থাকে,সাধারণত ব্লু ইনহেলারে ২০০ পাফ আর পার্পল ইনহেলারে ১২০ পাফ থাকে যা দেখে সহজে হিসাব করে নেওয়া যায় এটি কতদিন ব্যবহার করা যাবে! কনভেনশনাল ড্রাই পাউডার ইনহেলারে ক্যাপ্সুলের সংখ্যা যে কোনো মুখে খাওয়া ঔষধের হিসেবে কিনে রাখা যায়! একুহেলারে পাফ সংখ্যা কতটি আছে তাই প্রতি বার ব্যবহারের পর উঠে থাকে!

✓যাদের ঘনঘন অ্যাজমা এটাক হয় এবং হসপিটালাইজেশনের প্রয়োজন হয় তাদের সম্ভব হলে বাসায় নেবুলাইজার মেশিন ব্যবস্থা করে নেওয়া এবং তাতে ব্যবহার্য ঔষধ ও মেশিনের ব্যবহার শিখে নেওয়া!

⭕ ক্লিনিং এজেন্ট এবং ডিসইনফেক্টেন্টঃ

✓বিভিন্ন সার্ফেস যেমন জামা কাপড়, দরজার হাতল, টেবিল চেয়ার, প্লেট বাটি ইত্যাদিতে ভাইরাসের উপস্থিতি এবং সেখান থেকে অন্য মানুষে ছড়ানোর পক্ষে প্রমাণ কম। তাই সার্ফেস ক্লিনিং এ এখন আগের চেয়ে কম জোর দেওয়া হচ্ছে

✓যার অ্যাজমা আছে তিনি তার রুম পরিষ্কার করবেন না বা রুমে কোনো ডিসইনকেকেন্ট স্প্রে বা সামগ্রি ব্যবহার করবেন না-কারণ এগুলো অ্যাজমা এটাক ত্বরান্বিত করে

✓রুম পরিষ্কারের সময় রোগি অন্য রুমে অবস্থান করবেন এবং রুমে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন নিশ্চিত করতে হবে

✓একাধিক ক্যামিকেল একসাথে মেশানো যাবে না

✓সাবান-পানি এবং ইথাইল এলকোহল যুক্ত লিকুইড ই রুম পরিষ্কারের জন্যে নিরাপদ

✓কোনোভাবেই অ্যাজমা রোগির রুমে ব্লিচ ব্যবহার করা যাবে না

⭕ এক্টিভিটি এবং নিউট্রিশনঃ

বাসায় দীর্ঘসময় শুয়ে বসে না কাটিয়ে হালকা শারীরিক কর্মব্যস্ততায় থাকা,স্ট্রেস রিলিভিং যেকোনো এক্টিভিটি দৈনন্দিন কর্মপরিকল্পনায় রাখা এবং স্বাস্থ্যকর সুষম খাবার গ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমেই কেবলমাত্র অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ এ সার্বিক সাফল্য অর্জন সম্ভব

ডা. মুশফিক নেওয়াজ আহমেদ
রেসিডেন্ট, পালমোনোলজি
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল,              মহাখালী, ঢাকা

অংকন বনিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯ এবং পার্সড লিপ ব্রিদিং

Tue May 4 , 2021
মঙ্গলবার, ৪ মে, ২০২১ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত অথবা সেরে ওঠার পর যে কেউ খুব অল্প পরিশ্রমেই দূর্বলতা বা হালকা শ্বাসকষ্ট অনুভব করতে পারেন যদিও হয়তো সেই সময় রক্তে অক্সিজেনের ঘনমাত্রা স্বাভাবিক এবং বুকের সিটি স্ক্যানে ফুসফুসের সামান্য বা কোনো ইনভলভমেন্ট নাও থাকতে পারে!এটি যেমন দুশ্চিন্তা জনিত কারণে হতে পারে ঠিক […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo