ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাক্সিন এবং করোনা

লিখেছেনঃ
ডা সুরেশ তুলসান।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ।

করোনাকালে সাধারণ সর্দি-জ্বর।
ব্যাপারটা অনেকটাই গোয়াল পোড়া গরুর মত।

যে কিনা সিন্দুর রাঙা মেঘ দেখলেই ভাবে গোয়ালে আগুন লেগেছে কিনা।
গণমাধ্যমে এরকমই বেশ কিছু ঘটনার খবর পড়েছি, করোনার ভয়ে সাধারণ সর্দি-জ্বর এর রোগীদের জোরকরে গণপরিবহন থেকে মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দেয়া হয়েছে।

সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতেও দ্বিধা করেছেন অনেকেই।
হাসপাতালে নেওয়ার পর দেখা গেছে তার করোনা নাই।
হাসপাতালে যেতে না পারলে এদের কেউ হয়তো বিনা চিকিৎসায় মারাই যেতেন।

করোনার ভয়ে সন্তানেরা তাদের মাকে রাতে জংগলে ফেলে গেছেন এমন খবরও দেখতে হয়েছে মিডিয়ায়।
ভাগ্যিস অন্য কেউ সেই হতভাগ্য মাকে হাসপাতালে দিয়ে গেছেন।
তা নাহলে হয়তো শেয়াল কুকুরেরা মেরে খেয়ে ফেলতো সেই মাকে।
পরে অবশ্য সেই মায়ের দেহেও করোনা পাওয়া যায়নি।

যেহেতু সাধারণ সর্দি-জ্বর এর অনেক উপসর্গগুলোই করোনার মতো,
তাই এই সময়ে আপনার অনেক নিকটজনও আপনার থেকে দুরে সরে যেতে পারে।
আর সাধারণ সর্দি-জ্বর অবস্থায় অন্য কোন কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা পেতেও অনেক বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হবে আপনাকে এবং মৃত্যু হলে আপনার নাম যাবে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুদের তালিকায়। দাফন বা অন্ত্যষ্টিক্রিয়াতেও হতে পারে সমস্যা। বাড়ি হতে পারে লকডাউন। গুজব যদি তেমন ভাবে ছড়ায় তাহলে পাড়া প্রতিবেশীদের আক্রমণের শিকারও হতে পারে আপনার বাড়িটা।

তাই আমাদের সকলেই উচিৎ করোনার এই সময়ে করোনার মতো উপসর্গ করে এমনতর রোগবালাই থেকে সাবধানে থাকা।
সাধারণ সর্দি-জ্বর বা চিকিৎসা পরিভাষায় আমরা যাকে বলি ইনফ্লুয়েঞ্জা, আমাদের দেশে বহুকাল থেকেই অতি পরিচিত এবং অতি সাধারণ একটা রোগ।

ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে এই রোগ আমাদের অনেকেরই হয় এবং এতে আমরা অভ্যস্ত।
অনেকের এমনিতেই আবার অনেকের সাধারণ চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যায়। প্রাণঘাতী না হওয়ায় এই রোগ নিয়ে আমরা কখনোই তেমন করে ভাবিনি।

অথচ ব্যাক্তিগত হাইজিন এবং টিকার মাধ্যমে এই রোগের প্রতিরোধ সম্ভব।
অনেকদিন আগে থেকেই এই রোগের (ইনফ্লুয়েঞ্জা) টিকা আমাদের দেশে পাওয়া যায়।
ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকার নাম INFULVAX এবং বেশ সহজলভ্য।
অনেকেই হয়তো এই টিকা সম্পর্কে জানেন না অথবা জানলেও তেমন গুরুত্ব দেননি কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রাণঘাতী না।
কিন্তু করোনার এই সময়ে আমাদের উচিৎ করোনার পাশাপাশি ইনফ্লুয়েঞ্জাকেও গুরুত্ব দেয়া।
তা না হলে আপনার সাধারণ সর্দি-জ্বরও আপনার, আপনার পরিবারের এবং আপনার পারিপার্শ্বিক মানুষ জনের ভয়ের এমনকি মৃত্যুরও কারণ হতে পারে।

আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, করোনা প্রতিরোধে উপায় সমুহের মধ্যে বারে বারে হাত ধোয়া এবং নাকে, মুখে, চোখে অপরিস্কার হাত দেয়া থেকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা।

এবার বুঝুন সর্দি-জ্বর হলে আপনাকে দিনে কতবার নাক ঝাড়তে হবে বা নাকে হাত দিতে হবে।
সর্দি-জ্বরে অনেকেই চোখ চুলকায়, সুতরাং চোখে হাত দেয়া থেকেও বিরত থাকা কঠিন।

এবার আসি আরও দুটি বিষয়ে,
এলার্জিক রাইনাইটিস এবং এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস।

এলার্জিক রাইনাটিস হলে আপনার নাকের ভিতরটা সারাক্ষণ চুলকাবে আর নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়তেই থাকবে।
এবার আপনিই বুঝুন, কতবার নাকে হাত দেয়া লাগবে আপনাকে।

আর এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস হলো একধরনের চোখের প্রদাহ, যে রোগে সারাক্ষণ চোখ দুটি, দুই হাত দিয়ে চুলকাতেই থাকো আর চুলকাতেই থাকো।

তাহলে বুঝতেই পারছেন, বারে বারে নাকে, চোখে,মুখমণ্ডলে হাত দেয়ার মানেই হচ্ছে, চারপাশের পরিবেশ থেকে করোনাভাইরাস কুড়িয়ে নিয়ে নিজের শরীরের মধ্যে এর বিজ বপন করা।

মনে করুন উপরের যে কোন একটি কারণে সর্বক্ষণ আপনার নাক দিয়ে পানি পড়ছে, আর আপনি মাস্ক পরিহিত অবস্থায় কর্মক্ষেত্রে আছেন?
আপনি সারাদিনে কতবার মাস্ক বদলাবেন?
এই অবস্থায় মাস্ক আপনাকে কতটা সুরক্ষা দিতে সক্ষম?

করোনা প্রতিরোধে অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ আপনারা ইতিমধ্যেই পেয়েছেন।
আমি বলবো সেই সকল উপদেশ সমুহের পাশাপাশি সাধারণ সর্দি-জ্বর, এলার্জিক রাইনইটিস, এলার্জিক কনজাংটিভাইটিসকেও কিছুটা গুরুত্ব দিয়ে প্রতিরোধ করুন এবং দ্রুত চিকিৎসা করান।

এজন্য করোনা প্রতিরোধের জন্য গৃহীত পদক্ষেপের পাশাপাশি অতিরিক্ত করনীয় সমুহ-

১) ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে জন্য INFLUVAX নামক ভ্যাক্সিন নেয়া।
৩ বছর থেকে বৃদ্ধ একই ডোজ, ০.৫ মিলি মাংসে ১ বার।
তবে ৬ মাস থেকে ৩ বছর বয়স হলে ১ মাস অন্তত ০.৫ মিলি মাংসে ২ টা ডোজ।
২) প্রয়োজন মাফিক এন্টিহিস্টামিন ও অন্যান্য ঔষধ খাওয়া,স্টিম ভাপ নেয়া ইত্যাদি।
৩) কনজাংটিভাইটিস এর জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধের পাশাপাশি চোখের ড্রপ ব্যাবহার করা।
৪) করোনার মত উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া এবং চিকিৎসা গ্রহণ করা।

Source: https://www.radiorockriver.com/2020/02/25/whiteside-health-officials-warn-to-be-more-concerned-with-influenza-than-coronavirus-at-this-time/

Vivek Podder

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

করোনা কেড়ে নিলো আরেকজন চিকিৎসকের প্রাণ

Wed May 27 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, বুধবার, ২৭ মে, ২০২০ করোনা মহামারীতে এবার শহীদ হলেন আরো একজন চিকিৎসক। এবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন প্রফেসর ডা. মোশাররফ হোসেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি র’জিউন) তিনি বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। সেই সাথে NITOR এর অর্থোপেডিক এন্ড ট্রমা […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo