বখশিশ না পেয়ে অক্সিজেন খুলে নিল ক্লিনার; রোগীর মৃত্যু

সোমবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫

কাগজ-কলমে কোনো অক্সিজেন সংকট নেই খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে। অথচ এ হাসপাতালেই চাহিদা অনুযায়ী বকশিশ না পেয়ে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী (ক্লিনার) অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই শেখ সাইফুল ইসলাম (৩৮) নামে এক মুমূর্ষু রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন মৃত সাইফুলের স্বজনরা। এ নিয়ে রোগীর স্বজন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, শনিবার সকালে ভর্তির পর সন্ধ্যায় সাইফুলের শ্বাসকষ্ট বেড়ে অবস্থার অবনতি হলে স্বজনরা অক্সিজেনের জন্য ডাক্তার, নার্সসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ছোটাছুটি করে ব্যর্থ হন। পরে একজন ওয়ার্ডবয়কে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয় অক্সিজেন। কিন্তু গতকাল সকালে আরেকজন ক্লিনার (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) সেই অক্সিজেন খুলে নিয়ে যায়। এ সময় রোগীর লোকজন বাধা দিলে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে ক্লিনার জব্বার। অক্সিজেন খুলে নেওয়ার ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সাইফুল।

বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘সাইফুলকে কিডনিজনিত সমস্যার কারণে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করি। ভর্তির পর তার অবস্থার আরও অবনতি হয়ে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে অনেক চেষ্টা করেও তাকে অক্সিজেন দিতে ব্যর্থ হই। পরে এলাকার এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে অনেক চেষ্টায় রাত ১টার পর তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। কিন্তু আজ (গতকাল) সকাল ৭টার পর ওয়ার্ড ক্লিনার জব্বার (আউটসোর্সিং) আমার ভাইয়ের অক্সিজেন খুলে নিয়ে পাশের অন্য এক রোগীকে দেওয়ার জন্য নিয়ে যায়।’

মৃত সাইফুল খুলনার খান জাহান আলী থানার যোগিপোল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মৃত শেখ ইসমাইলের ছেলে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কিডনি জটিলতা নিয়ে গত শনিবার সকালে সাইফুলকে খুমেক হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-১-এর ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, সেখানে কোন রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। গতকাল সকাল ৮টায় অক্সিজেন খুলে নেওয়ার পরপরই মৃত্যু হয় সাইফুল ইসলামের।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেডিসিন ইউনিট-১-এর ওয়ার্ড ক্লিনার জব্বার (আউটসোর্সিং) অক্সিজেন খুলে নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি একজন মুমূর্ষু রোগীর জন্য তাদের কাছে থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডারটা নিয়ে যাই।’

 

 

কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোগীর কাছ থেকে অক্সিজেন খুলে নেওয়া বা অন্য রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কি না জানতে চাইলে কোনো উত্তর দিতে পারেন তিনি।

 

 

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে খুমেক হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আক্তারুজ্জামানের চেম্বারে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি বলেন, ওয়ার্ডে জরুরি চিকিৎসাসেবার কাজে ব্যস্ত আছেন।

পরে এ বিষয়ে হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, ‘হসপিটালে অক্সিজেনের কোনো সংকট নেই, পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন আছে। মুমূর্ষু রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া বা খুলে নেওয়া ওয়ার্ড ক্লিনারের কাজ নয়। একজন রোগী কখন অক্সিজেন পাবে এবং কখন অক্সিজেন পাবে না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন ওয়ার্ডের ডাক্তার। যে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া আছে সে রোগীর অক্সিজেন খুলতে হলে ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে খুলতে হবে। ওয়ার্ড ক্লিনার যদি খুলে নিয়ে থাকে তবে তিনি অপরাধ করেছেন। তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্ল্যাটফর্ম/

প্ল্যাটফর্ম কনট্রিবিউটর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভ কর্তৃক চিকিৎসক ভিজিট এবং নৈতিকতাবোধ

Wed Oct 8 , 2025
মানব সভ্যতার ঊষালগ্ন হতে, চিকিৎসা পেশা একটি মানবিক এবং মহৎ পেশা হিসেবে সমাজে স্বীকৃত পেশা। আর তাই দল মত নির্বিশেষে সবাই চিকিৎসা পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীকে সম্মানের চোখে দেখেন। আর সে জন্য চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যসেবার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে উন্নত নৈতিক চরিত্রের এবং  মানবিক গুণ সম্পন্ন […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo