বুধবার, ২১ মে, ২০২৫
এইচএসসি পাশ করেই করছেন চেম্বার, নেই এমবিবিএস কিংবা বিডিএস ডিগ্রি। কিন্তু দেন সকল রোগের চিকিৎসা! তার অপচিকিৎসা নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে নিজেকে পরিচয় দেন সাংবাদিক হিসেবে। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে যাচ্ছে লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধায়। এই প্রতারকের নাম মোঃ রবিউল ইসলাম।

স্থানীয়দের ভাষ্য, তিনি প্রতিদিন ৫০ জনের অধিক রোগীর অপচিকিৎসা করেন। রোগীদের থেকে ভিজিট নেন ১০০ টাকা করে। গত ৩ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এভাবে বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের অপচিকিৎসা করে যাচ্ছেন। তার অপচিকিৎসার বিষয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হলেও রহস্যজনক কারণে ভুয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ বলে অভিযোগও করেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের দইখাওয়া বাজারে মায়ের দোয়া চিকিৎসালয়ে চেম্বারের নামে প্রতারণার আখড়া জমিয়েছে প্রতারক মো: রবিউল ইসলাম। তিনি তার নামের পূর্বে ‘ডাক্তার’ ব্যবহার করেন এবং শেষে ব্যবহার করেন ডিএমএফ (রংপুর), বিটিএফ, এলএমএএফ, ডিএমপিসি, জেনারেল ফিজিশিয়ান এন্ড কনসালটেন্ট।
যদিও এসব ডিগ্রির পূর্ণরূপ জিগ্যেস করলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এমনকি তার ব্যবস্থাপত্র ও চেম্বারে লিখা বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন নম্বর- ডি-৩০২২০৯ (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট), এলএমএফ রেজিস্ট্রেশন নম্বর-০৯৫২ লেখা রয়েছে। তবে বিএমডিসি ওয়েবসাইটে তা অন্যজনের নামে নিবন্ধিত! এতে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আপনি ভুল ওয়েবসাইটে সার্চ করেছেন’। সঠিক ওয়েবাসাইটের বিষয়ে জানতে চাইলেও তিনি সদুত্তর দিতে অপারগ ছিলেন।
তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস করেন স্থানীয় কলেজ থেকে।
স্থানীয়দের অনেকে তাকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে চিনে। আবার শিক্ষিত অনেকে বলে ডিএমএফ। মায়ের দোয়া চিকিৎসালয়েই নিজের প্রেসক্রিপশন প্যাডে জটিল রোগের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। সরেজমিনে প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদক একাধিক প্রেসক্রিপশনে উচ্চমানের অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি দেখে তা এসব ওষুধ দেয়ার কারণ জিগ্যেস করেন। এতে প্রতারক তার উপর ক্ষেপে যায়। এমনকি তার আখড়ার বাইরে নামি-বোনামি বেশ কিছু ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিও বেশ লক্ষণীয়।
এমন প্রতারণার বিষয়ে জিগ্যেস করলে রবিউল ইসলাম বলেন, “অনেক পল্লী চিকিৎসক তাদের নামের আগে ডাক্তার লেখেন, তাই আমিও লিখছি। এছাড়াও আমি এফটিএফ থেকে ডিএমএফ কোর্স সম্পন্ন করেছ।” কিন্তু নিজের অপচিকিৎসাকে তিনি সুচিকিৎসাই বলছেন এবং তার ভুল হয়েছে মানতে নারাজ ছিলেন! একপর্যায়ে কৌশলে চেম্বার থেকে সটকে পড়েন।
স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই রবিউল আবার এলাকায় বড় সাংবাদিক পরিচয় দেয়। সে তার অপকর্ম ঢাকার জন্য টাকা দিয়ে সংগ্রহ করেছেন একটি দৈনিকের আইডি কার্ড। কেউ অপচিকিৎসার বিষয়ে অভিযোগ করলে জাতীয় দৈনিকে খবর ছাপিয়ে হেনস্তা করারও হুমকি দেন।
গোতামারী ইউনিয়নের মোনাব্বেরুল হক মোনা বলেন, তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: আনোয়ারুল হক বলেন, এমবিবিএস না হলে নামের আগে ডা. লেখা এবং রোগীকে ব্যবস্থাপত্র লেখার কোনো সুযোগ নেই। যেসব পল্লী চিকিৎসক নিজেদের ডাক্তার পরিচয় দিয়ে ও অন্যের রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার ব্যবহার রোগীকে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। অভিযোগ পেয়ে প্রতারক রবিউল ইসলামের চেম্বারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। টের পেয়ে রবিউল চেম্বারের সাইনবোর্ড সরিয়ে তালা দিয়ে পালিয়ে যান।
প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস