X

পিকা অফ এডাল্ট অনসেট

ফেব্রুয়ারী মাসের এক দিনের কথা। ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারী ইউনিট ৩ এ একজন রোগী ভর্তি হয়। তার রোগের খতিয়ান ছিল যে, এপিগ্যাষ্ট্রিক রিজিওনে একটা লাম্প হয়েছে ত্রিশ দিন আগে যেটা দ্রুত বড় হয়েছে। আর তিন দিন আগে থেকে সেখানে প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে।

রোগীর হিস্ট্রি নেয়া হল, ক্লিনিকাল এক্সামিনেশন করা হল। এপিগ্যাষ্ট্রিক রিজিওনে নানা কারনে লাম্প হয়। গ্যাস্ট্রিক আউটলেট অবস্ট্রাকশন থেকে শুরু করে প্যানক্রিয়াটিক সিউডোসিস্ট পর্যন্ত একগাদা ডিফারেনশিয়ালস আছে। অথচ কোন ধাঁচেই রোগীর প্রেজেন্টেশন ফেলা যাচ্ছিল না। স্যারেরা প্রভিশনাল ডায়াগনসিস করলেন কারসিনোমা স্টোমাক। এরপর ইনভেস্টিগেশনে পাঠালেন রোগীকে।

এবডোমেন এর এক্সরে তে অদ্ভৃত একটা চিত্র আসলো। রোগীর গ্যাস্ট্রিক এনট্রামের কাছে লম্বাটে সাদা কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। এক্সপ্লোরেটরী ল্যাপারেটমী এর সিদ্ধান্ত হল।

এবডোমেন খোলার পর দেখা গেল একটা কাঁটা চামচ স্টমাক ভেদ করে অনেকখানি বের হয়ে আছে। তা এন্টেরিয়র এবডিমনাল ওয়ালকেও ইনজুরি করেছে।

এই ইনজুরি কারনে স্টমাকের সাথে এবডমিনাল ওয়ালের এডহেশন হয়েছিল, যার কারনে লাম্প।

তবে কাহিনী শেষ নয়, বরং শুরু।

এরপর তার স্টমাকে সার্চ করা হল। প্রথমে বেরোল দুইটি ব্রাশ, তারপর তিনটি ক্যাপ ছাড়া কলম, এরপর একে একে একটা ক্যাপযুক্ত কলম, দুই টাকার একটি নোট, বোম্বে সুইটস এর চানাচুর এর একটি প্যাকেট, টেস্টি স্যালাইন এর দুটি প্যাকেট। সর্বমোট এগারটি বস্তু।

রোগী খুব তাড়াতাড়ি রিকভার করল। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, সে এসব খেয়েছে কেন?

রোগী বেমালুম সব অস্বীকার করল, তবে স্বীকার করল টুথব্রাশ দুটো গিলেছে। কারন সে মনে করেছিল তাতে তার পেটের ব্যাথা পরিষ্কার হয়ে যাবে!!

এরপর তাকে সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্টে রেফার করা হল। সেখানে বের হল লোকটার একটা বিরল রোগ আছে।

পিকা (Pica) নামের এই রোগে রোগী অখাদ্য বস্তু গিলে ফেলে। এটা ছোট বাচ্চাদের মাঝে খুবই কমন, তবে বড়দের মাঝে হয় ই না বললে চলে। বড়দের হলে সেটাকে বলে ‘পিকা অফ এডাল্ট অনসেট’

আরো জানা গেল, রোগী সিজোফ্রেনিয়াক। তাই তার কিছুই মনে থাকে না। অথচ হিস্ট্রি দেবার সময় ও বোঝা যায়নি কিছু।

সর্বশেষ ডায়াগনসিস দাঁড়ায়, ‘Pica of adult onset due to schizophrenia presented as gastric outlet obstruction due to impacted foreign body’

এই অদ্ভূততম কেসটি আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাপ্তাহিক ক্লিনিকাল সেমিনারে উপস্হাপিত হয়েছে।

কে বলে মেডিকেল লাইফ বোরিং?

লিখেছেন : সিফাত খন্দকার (কে-৬৮, ঢাকা মেডিকেল কলেজ)
পরিমার্জনা: বনফুল

Banaful:

View Comments (8)

Related Post