শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন নিশ্চিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) পাঁচ ধরনের পরীক্ষা করার সুপারিশ করে। তবে বাংলাদেশসহ নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ২৪ শতাংশ রক্ত পরিসঞ্চালনে এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। এতে উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে রক্তগ্রহীতার জীবন। এমন পরিস্থিতি উত্তরণে রক্তদানে গুণগত মান নিশ্চিতে জাতীয় কর্মসূচি নেওয়া জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এমন প্রেক্ষাপটেই শনিবার (১৪ জুন) বিশ্ব রক্তদাতা দিবস পালিত হচ্ছে। ডব্লিউএইচওর নীতিনির্ধারণী ফোরাম ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেমব্লি ২০০৫ সালে ১৪ জুনকে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি
দেয়। এর পর থেকে দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য– ‘রক্ত দিন, আশার আলো দিন, এক সাথে আমরা জীবন বাঁচাই’।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্ত পরীক্ষায় মান নিয়ন্ত্রণ, প্রশিক্ষিত জনবল এবং উন্নত যন্ত্রপাতির অভাবে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্রগুলোতে নেই পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা বা সঠিকভাবে মানসম্মত পরীক্ষা করার সুযোগ।
ডব্লিউএইচওর ২০২২ সালের জুনে প্রকাশিত গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট ও ব্লাড সেফটি অ্যান্ড অ্যাভেইলেবিলিটি শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঝুঁকি এড়াতে রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে গ্রুপ নির্ণয়, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, এইচআইভি ও সিফিলিসের ভাইরাস পরীক্ষা করতে হয়। সরকারিভাবে এ পরীক্ষায় বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ৭৬ দশমিক ২ শতাংশ রক্তদানের সময় পরীক্ষা করা হয়। বাকি ২৩ দশমিক ৮০ শতাংশ রক্ত পরিসঞ্চালনে মান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আসাদুল ইসলাম বলেন, জাতীয় কর্মসূচির মাধ্যমে নজরদারি বাড়িয়ে রক্ত নেওয়ার আগে আইন করে পাঁচ ধরনের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। দেশব্যাপী ব্লাড ব্যাগ, কিটস এবং রি-এজেন্ট সরকারি ব্যবস্থাপনায় দিতে হবে। তা না হলে নিরাপদ রক্তদান বাড়ানো যাবে না। এ ছাড়া বিদেশের মতো কেন্দ্রীয়ভাবে রক্ত সংগ্রহ করে ব্লাড ব্যাংকে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বে সব দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন একটি অত্যাবশ্যকীয় সেবা। নিরাপদ রক্তের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হলে প্রতিটি দেশকে অবশ্যই স্বেচ্ছায় নিয়মিত রক্তদানের একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে। দেশগুলোতে সন্তান ধারণের উপযুক্ত বয়সী নারী ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরাই সবচেয়ে বেশি রক্ত গ্রহণ করে। সরকার এবং স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে স্বেচ্ছাসেবী, রক্তদাতার সংখ্যা বাড়ানো এবং সবার জন্য নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সেফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন অ্যান্ড থ্যালাসেমিয়া ম্যানেজমেন্ট শাখার তথ্যমতে, দেশে অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ৯ লাখ ব্যাগ রক্ত লাগে। এ রক্ত আমরা দু’ভাবে পেয়ে থাকি। আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে ৬৬ শতাংশ। স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতার মাধ্যমে ৩৪ শতাংশ। রক্তদাতাদের মধ্যে ৯৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৬ শতাংশ নারী। সারাদেশে সরকারিভাবে ২২৩টি ব্লাড ব্যাংক বা রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র রয়েছে। এর বাইরে নিবন্ধন ছাড়া অনেক ব্লাড ব্যাংক রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের তদারকির দায়িত্বে রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে জনবল সংকটে তাদের দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে না।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, অধিদপ্তরের সেফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন অ্যান্ড থ্যালাসেমিয়া ম্যানেজমেন্ট কর্মসূচি রয়েছে। রক্তদানের আগে পাঁচ পরীক্ষা করতে সরকারি হাসপাতালে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
চাহিদা বাড়ছে রক্তের!
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, দিনে দিনে রক্তের চাহিদা যে হারে বাড়ছে, সে হারে পেশাদার বা স্বেচ্ছা রক্তদাতার সংখ্যা বাড়ছে না। স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের যে সংখ্যা, তা চাহিদার তুলনায় কম। ফলে রক্তের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এ জন্য স্বেচ্ছায় রক্তদানে আরও বেশি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের সবচেয়ে পুরোনো স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা সংগঠন সন্ধানী। তাদের হিসাবে, দেশে বছরে ৬ লাখ ব্যাগের মতো রক্তের চাহিদা রয়েছে। যার মধ্যে ১২ শতাংশ পূরণ করছেন বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত স্বেচ্ছায় রক্তদাতারা। প্রায় ৬০ শতাংশের মতো আসে পেশাদার রক্তদাতাদের কাছ থেকে। বাকিটা স্বজন, বন্ধু ও পরিচিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে দেওয়া হয়। রক্তদাতাদের বেশির ভাগ তরুণ ও শিক্ষার্থী।
প্ল্যাটফর্ম/