X

ডেন্টাল চিকিৎসা,কোয়াক উৎপাত এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের ভবিষ্যতঃ দুটি কথা

 

ডাঃ তৌহিদুর রহমান তৌহিদ

 

 

শহর নগর উপশহর বাজার ঘাট এমন কোন জায়গা নেই যেখানে প্রাইভেট ক্লিনিক গড়ে ওঠেনি।মানুষের যাবতীয় ব্যাথার সরকারী আশ্রয়স্থলের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে এসব সেবাকেন্দ্র।এসব জায়গায় মানুষ চিকিৎসার পাশাপাশি অনেক ব্যাপারে স্বাস্থ্য সচেতন হচ্ছে।ঝাড়-ফুক কবিরাজদের মুলোৎপাটনে এসব গড়ে ওঠা ক্লিনিকে ভূমিকা অনস্বীকার্য।পেট ব্যাথায় যারা একসময় কেরোসিন তেল খেত তারাও আজ ‘আলট্রাসনোগ্রাম’ করতে চলে আসে ডাক্তার দেখানোর আগেই।

 

সব ব্যাথার জন্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘ক্লিনিক/হাসপাতাল’ গড়ে উঠলেও ‘দাঁত ব্যথার’ জন্য কিছু উন্নত চিকিৎসা করা ডেন্টাল চেম্বারের বিপরীতে এন্টিবায়োটিক সর্বস্ব কোয়াক চেম্বার গড়ে উঠেছে মাত্র।এর বাইরে সাধারণ মানুষকে সুচিকিৎসা দেবার মত কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি কিংবা গড়ে তোলার মত উদ্যোক্তাও পাওয়া যায়নি।সাধারণ মানুষ বলতে দিনমজুর থেকে শুরু করে কর্মজীবী এবং অন্যান্য নিম্ন আয়ের মানুষ বুঝাচ্ছি যারা ২০ টাকায় কোয়াক দেখিয়ে দিনের রোজগেরে টাকা এন্টিবায়োটিক কেনার পেছনে খরচ করে।আর ভিজিট কম হওয়া আমাদের গ্রামীন মনস্তত্ত্ব সেদিকেই ছুটছে বারেবার।

 

কোয়াকে আজ যার দাঁতে ভুল ফিলিং করে দিচ্ছ,সে দু মাস পরে ব্যথা নিয়ে তার কাছেই যাচ্ছে,সেখানে ভুল রুট ক্যানাল ট্রিটিমেন্ট দিচ্ছে,ছয়মাস পরে আবার ব্যথায় তার কাছেই গেলে দাঁত ফেলে দিচ্ছে।এভাবে ‘দাঁতের দুষ্টচক্র’ তে পড়ে ডিম বেচা মুরগী বেচা সব টাকাই খোয়াচ্ছে নিম্নবিত্তরা।

 

কোয়াক বিরোধী আন্দোলন চলছে।এটা খুব ভাল উদ্যোগ।কোয়াকরা মূলত এসবসব রোগীদের কথার ফাঁদে ফেলে আস্তে আস্তে সব হাতিয়ে নেবার পাশাপাশি ভুল ম্যাসেজ দেয় প্রতিনিয়ত।কোয়াক উচ্ছেদের পাশাপাশি গ্রামীন এসব জনগোষ্ঠী কীভাবে নূন্যতম ডেন্টাল সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা জরুরী।নইলে জনগণই তাদের প্রয়োজনে কোয়াক বানিয়ে নিবে।

 

 

এক্ষেত্রে সমস্যা নিরসনে প্রাইভেট ডেন্টাল প্রাক্টিসকে ‘ডেন্টাল হাসপাতাল/ক্লিনিকে’ উপজেলা/জেলা পর্যায়ে রূপদান করতে হবে।যেখানে ইউনিট থাকবে তিনের অধিক,এক্সরে ব্যবস্থা থাকবে,পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসা তথা মাইনর সার্জারী,অন্যান্য স্কিল্ড সেবা দেবার জন্য যন্ত্রপাতি এবং ইউনিটের ব্যবস্থাও থাকবে। যেখানে স্বল্প মূল্যে দাঁত তোলা,টেম্পোরারি ফিলিং দেয়া,সারারণ স্কেলিং,কিউরেটেজ,অপারকুলেক্টমি,সর্বোপরি কম টাকায় পরামর্শ দেবার ব্যবস্থা থাকবে।দাঁতের সমস্যায় ভুগেননি এমন কাউকে আতশী কাঁচ দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়না।গ্রামীন জনপদে এটি আরোরো প্রকট ওরাল হাইজিন খারাপ থাকার কারনে।

 

কথা হচ্ছে ডেন্টাল ক্লিনিক একটি ব্যয়বহুল।চাইলেও দিয়ে ফেলা যায়না।অনেক লগ্নি।এসব ক্লিনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে জুনিয়রদের প্রাইভেট চাকুরির কর্মসংস্থান ক্ষেত্র তৈরী হবে।যেটি এখন ক্রাইং নিড।এভাবে শুধু কোয়াক উচ্ছেদের ধোঁয়া তুলে আমরা পেশাকে বেশিদূর নিতে পারব বলে মনে হয়না।

বিপুল এই জনগোষ্ঠী ব্যাতিরেখে প্রাণকেন্দ্রে বসে অতি আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ঘটিয়ে বিশ্বমানের চিকিৎসা দিব ঠিকই কিন্ত ডেন্টিস্ট্রি তার আতুড়ঘরেই পড়ে রবে।

আমাদের সরকারী কর্মসংস্থান এর পাশাপাশি বেসরকারী কর্মসংস্থান নিয়েও ভাবতে হবে।

 

নইলে অতি আধুনিক সব হ্যান্ড অন করে এসে উপজেলা জেলা লেভেলে এসে বসে ‘নুরু কোয়য়াকে’ এত রুগী কেন ভাবতে ভাবতে দিন চলে যাবে।

 

এসব অতি আধুনিক হ্যান্ড অনের মাধ্যেমে যে মগজ বুঁদ হয়ে যাচ্ছে সে মগজ সাধারণ চিকিৎসা দিতে গিয়ে বারবার দ্বন্দে ভুগবে।এ দ্বন্দের বেড়াজাল ভাঙ্গা কঠিন।একটা মেধাবী প্রজন্ম শেষ হয়ে যাবে এই দ্বন্দের বেড়াজাল ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে।

ছড়িয়ে দিতে হবে,নয়তো গুটিয়ে নিতে হবে।

 

 

[অনেক আলোচনা চলতে পারে,এটা আমার একটা মতামতের সামান্য আলোকপাত।আরো অনেক মতামত আলোকপাত হবার জায়গা খোলা আছে।]

লেখক ঃ ডাঃ তৌহিদুর রহমান তৌহিদ, Assistant Dental Surgeon (33rd BCS) , Bangladesh Civil Service। 

Ishrat Jahan Mouri: Institution : University dental college Working as feature writer bdnews24.com Memeber at DOridro charity foundation
Related Post