X

নিয়মিতভাবে দেশেই হচ্ছে যকৃত প্রতিস্থাপন

২২শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ

সারা বিশ্বেই ব্যয়বহুল এক চিকিৎসা পদ্ধতি লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা যকৃত প্রতিস্থাপন৷ কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো যকৃত প্রতিস্থাপনের এ কাজটি এখন সফলভাবেই সম্পন্ন হচ্ছে বাংলাদেশে৷ আর এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি বারডেম হাসপাতালে সম্পন্ন হয়ে গেল তৃতীয় বারের মত সফল যকৃত প্রতিস্থাপন৷ বারডেম বাদে বিএসএমএমইউ তেও হয় লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট৷

বাংলাদেশে যকৃত প্রতিস্থাপনের পথিকৃৎ হলেন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী৷ ১৯৯৭ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের যকৃত প্রতিস্থাপন কেন্দ্র থেকে ফেলোশীপ পান৷ বর্তমানে তিনি বারডেম হাসপাতালের হেপাটো-বিলিয়ারি, প্যানক্রিয়াটিক অ্যান্ড লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন ও ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক পদে কর্মরত আছেন৷

বারডেমে প্রথম যকৃত প্রতিস্থাপন শুরু হয় ৩রা জুন, ২০১০ সালে৷ প্রথম সফল যকৃত প্রতিস্থাপন করা ব্যক্তি ৫ বছর বেঁচে ছিলেন৷ পরবর্তীতে তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা যান৷ দ্বিতীয় সফল ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয় ২রা আগস্ট,২০১১ সালে৷ দ্বিতীয় ব্যক্তি হচ্ছেন বরিশালের রিয়াজুল ইসলাম৷ যকৃত প্রতিস্থাপনের পর এখন পর্যন্ত তিনি সুস্থ আছেন৷ বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়াতে পি এইচ ডি করছেন৷ তৃতীয়বার যকৃত প্রতিস্থাপনে ৩০ সদস্যের একটি মেডিকেল টীম কাজ করেছে৷ এ তিনটি অপারেশনই বিনামূল্যে করা হয় এবং যাবতীয় খরচ বহন করে বারডেম কর্তৃপক্ষ৷

দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪-৭ ভাগ লোক হেপাটাইটিস বি এবং শতকরা ১ ভাগ লোক হেপাটাইটিস সি তে আক্রান্ত৷ এই আক্রান্তদেরই একটি অংশ পরে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের শিকার হয়৷ প্রায় ১ কোটি মানুষ নানা ধরনের লিভার রোগে আক্রান্ত৷ এর মধ্যে শতকরা ১৫-২০ ভাগেরই লিভার সিরোসিস হতে পারে৷ এই পর্যায় থেকেই মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত বা লিভারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে মারা যায়৷ কিন্তু এসময় যদি রোগাক্রান্ত বা অকার্যকর লিভার সম্পূর্ণ অপসারণ করে, সেই স্থানে দাতা ব্যক্তির সম্পূর্ণ বা আংশিক সুস্থ লিভার প্রতিস্থাপন করা যায়, তবে তার জীবন দীর্ঘায়িত করা সম্ভব৷

দুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ অপারেশন থিয়েটারে দুই দল অভিজ্ঞ লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন কাজ করেন, একদল চিকিৎসক রোগাক্রান্ত লিভারের অংশ অপসারণ করেন৷ এসময় রক্ত সরবরাহ যন্ত্রের সাহায্যে লিভারের রক্ত দেহের অন্যান্য অঙ্গে প্রবাহিত করা হয়৷ চিকিৎসকদের অন্য দলটি দাতার দেহ থেকে সুস্থ লিভারের অংশবিশেষ অপসারণ করে তা প্রতিস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করে থাকে৷ এরপর দান করা লিভারের অংশ রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়৷ রোগীর রক্তনালীগুলো ও পিত্তনালী পুনঃসংযোগ করে পুরো লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন করতে সময় লাগে সাধারণত ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা৷

জীবিত ব্যক্তির দেহ থেকে সফলভাবে যকৃত প্রতিস্থাপনের পর একজন গ্রহীতার এক বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৮৫ শতাংশ, পাঁচ বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৬৯ শতাংশ এবং ১০ বছর বাঁচার সম্ভাবনা ৬১ শতাংশ৷ আর এই সাফল্য বয়স্কদের চেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে আরো বেশি৷

নিজস্ব প্রতিবেদক/সজীব কুমার

Urby Saraf Anika:
Related Post