X

করোনা মোকাবিলায় চীনা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে মত বিনিময়

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০২০

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সহায়তা করতে ১০ জন সদস্যের চিকিৎসক, নার্স এবং প্রযুক্তিবিদদের সমন্বয়ে গঠিত চীনা মেডিকেল টিম ঢাকায় এসে পৌঁছেছে গত ৮ জুন। গতকাল (১০ জুন) করোনা মোকাবিলায় সফল চীনা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের এক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত সভায় আলোচিত বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করেছেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে কর্মরত এনেস্থেসিওলজির কনসালটেন্ট ডা. আহাদ। চীন থেকে আগত দলের কাছে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন তাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যুর হার বিষয়ে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, তারা উত্তরে বলেছেন শূন্য! এমনকি তারা কেউ কোভিড-১৯ এ আক্রান্তই হন নি। তবে এর পেছনে কারণ সম্ভবত, তারা চিনের যেই প্রদেশ থেকে এসেছেন, সেখানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উহানের মতো ভয়াবহ ছিল না।

চীনা দল কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায় তাদের বেশ কিছু অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। সেগুলো হল

হাসপাতাল ব্যাবস্থাপনাঃ

হাসপাতালে চীনা চিকিৎসকেরা ট্রায়াজ সিস্টেমে চিকিৎসা দেন। এটা আমাদের দেশেও অনেক জায়গায় দেয়া হচ্ছে, তবে তাদের মত সুগঠিত নয়। তারা ট্রায়াজ অনুযায়ী রোগীকে লাল, হলুদ ও সবুজ জোনের মাধ্যমে আলাদা করে চিকিৎসা দিচ্ছে। এক অংশ থেকে আরেক অংশের মধ্যে দৃশ্যত যোগাযোগ নেই। স্বল্প ও মধ্যম লক্ষনের রোগীদের বাসায় চিকিৎসা দিয়েছেন টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে।

তাদের যথেষ্ট পরিমানে পিপিই সরবরাহ রয়েছে, যে কারনে তারা একটি পিপিই সেট তারা একবারই ব্যবহার করেন। তাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত না হওয়ার পেছনে এটা একটা কারণ। তারা ঝুঁকিপূর্ণ বা লাল এলাকায় পূর্ণ প্রস্তুতি পিপিই ও এর উপর প্লাস্টিক গাউন পরে শিল্ড ব্যবহার করে সেবা দিচ্ছেন। প্রত্যেকটি বেডের মাথার কাছে নেগেটিভ প্রেশারের হোস সংযুক্ত থাকে। এটা তাদের সেফটির একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।

মাস্কঃ
মাস্কের  রি-ইউজের ব্যাপারে তাদের অভিমত হল, যদি সরবরাহ ভালো থাকে, তাহলে একবার ব্যবহার করলেই ভালো। তবে কোন ক্রমেই ঝুকিপূর্ণ এলাকায় এন ৯৫ মাস্ক একবারের অধিক ব্যবহার করা যাবে না। উল্লেখ্য, চীনা এই চিকিৎসকগণ প্রত্যেকেই এন ৯৫ মাস্ক পরিধান করেছিলেন এই সেমিনারে। এমনকি সেমিনারে প্রদত্ত নাস্তাও তারা এই মাস্ক খুলতে হবে বলে গ্রহণ করেন নি। তাদের হাতে গ্লাভস ছিল না, তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার হিসাবে এলকোহল প্যাড ব্যবহার করেন তারা, যা সাধারণত ক্যানুলা করার সময় লোকাল এন্টিসেপটিক হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

পরিবেশ এর নিরাপত্তাঃ
এই জায়গায় চীনের সাথে বাংলাদেশের বিস্তর ফারাক। চীনে পরিবেশ নিরাপদ রাখার জন্য নানা রকমের স্প্রে ব্যবহার করা হয়। সেখানে আমাদের দেশে দৃশ্যত কিছুই করা হচ্ছে না এই ব্যাপারে।

চিকিৎসা ব্যবস্থাঃ
কোন ভ্যাক্সিন ব্যবহার করছে কিনা এর উত্তরে চীনের চিকিৎসকগণ জানালেন, এখনো কোন ভ্যাক্সিন আবিস্কার হয় নি এবং তারা এ ব্যাপারে কিছু দিচ্ছেও না। ঔষধের ব্যাপারে তেমন কোন ধারনা তারা দেয় নি। তবে স্বল্প ও মধ্যম লক্ষনের রোগীদের ক্ষেত্রে চীনা সনাতন ঔষধ ভালো ভূমিকা রাখছে। সম্ভবত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজে লাগে এধরণের ঔষধ। সেক্ষেত্রে আমরা যে আদা-চা ও বিভিন্ন রকম চা খাই, সেটা একটা বিকল্প হতে পারে।

রোগীদের মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য চীন বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যেমন, তারা রোগীদের নিয়ে দিনের একটি সময় সকল স্টাফসহ নাচের সেশন করেন। মূলত, এগুলো নৃত্য না, বরং সুরের তালে তালে শরীর ও শরীরের সন্ধিসমূহের নড়াচড়া, যা একদিকে আনন্দ দেয়, অন্যদিকে শরীর সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে।

চীনের কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায় বেশ বড় ভূমিকা রেখেছে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক এবং তাদের সাথে রোগীদের ভালো সম্পর্ক। এই জায়গায় অনেকটাই পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজয়ানুল করিম শামীম জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরে চীনা চিকিৎসক প্রতিনিধি দলের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল,তাদের দেশে তারা আরটি-পিসিআর এর পাশাপাশি এন্টিজেন বা এন্টিবডি কোন টেস্ট করেন কিনা?
উত্তরে তারা জানান, আরটি-পিসিআর এর পাশাপাশি পরিপূরক হিসাবে তারা এন্টিবডি টেস্ট করেন। এর কয়েকটি কারণ তারা তুলে ধরেছেন –

১। সারভিল্যান্স এর জন্যে
২। কোন নির্দিষ্ট এলাকায় রোগের অবস্থা বা ঘনত্ব বুঝতে বিকল্প হিসেবে
৩। আরটি-পিসিআর এ ফলস নেগেটিভ কিন্তু উপসর্গ থাকলে
8। কনভালেসেনট প্লাজমা চিকিৎসার প্রয়োজনে

তারা আরও জানিয়েছেন, তাদের এন্টিবডি টেস্ট ৯০% এর বেশি সেন্সিটিভ ও স্পেসিফিক। কোথাও কোথাও পরীক্ষামূলক ভাবে এন্টিজেন টেস্টও করা হয়, তবে সেটা তাদের নরমাল প্র্যাকটিস না।

Sarif Sahriar:
Related Post