X

কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) কেন প্রয়োজন?

কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) পদ্ধতির প্রথম আবিস্কার হয় ১৯৫০-১৯৬০ সালের মধ্যে। James O. Elam এবং Peter Safar প্রথম ১৯৫৮ সালে জরুরী অবস্থায় মুখ দিয়ে ভেন্টিলেশন করার পদ্ধতি ও উপকারী দিক নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে বর্ণনা করেন। Kouwenhoven, Knickerbocker এবং Jude পরবর্তীতে এর সাথে বাইরে থেকে বুকে চাপ দিয়ে ভেন্টিলেশন করার পদ্ধতি বর্ণনা করেন। মুখ থেকে মুখে শ্বাস প্রদান করার সাথে সমন্বয় করে বুকে চাপ দেবার মাধ্যমে প্রাথমিক লাইফ সাপোর্ট দেবার পদ্ধতিই সিপিআরের ভিত্তি।

কোন রোগ, হার্ট এট্যাক বা যেকোন কারণে হৃৎপিন্ড বন্ধ বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা প্রতি সেকেন্ডেই কমতে থাকে। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের নিচে নেমে গেলে অক্সিজেনের অভাবে কোষের মৃত্যু ঘটে। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া যখন বন্ধ হয়ে যায় অক্সিজেনযুক্ত রক্তের অভাবে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে মস্তিস্কের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। আট থেকে দশ মিনিটের মধ্যে মস্তিষ্কের ক্ষতি এমন অবস্থায় চলে যায় যে তখন অন্যান্য অঙ্গ কাজ করা শুরু করলেও মস্তিষ্কের কোষ আর নিজের কাজ করতে পারে না, ফলে ব্যক্তি মারা যায়।

এমতাবস্থায় দেহের অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ তথা মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখা, হৃৎপিন্ডের স্পন্দন ফেরত আনা এবং শ্বাস-প্রশ্বাস পুনরুদ্ধার করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো সিপিআর। হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা এধরনের পরিস্থিতিতে কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) একটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত জরুরি ‘জীবন রক্ষাকারী কৌশল’। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সুপারিশ করে যে “এরকম পরিস্থিতিতে প্রত্যেক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যক্তি অথবা চিকিৎসক কর্মীরা – বুকের সংকোচনের সাথে সিপিআর শুরু করবেন”।

তাৎক্ষনিক সঠিকভাবে সিপিআর প্রয়োগ করতে পারলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পরেও একজন ব্যক্তি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বা তিনগুন বাড়িয়ে দিতে পারে। সিপিআর প্রয়োগ যে শুধুমাত্র চিকিৎসক বা নার্স করতে পারবেন বিষয়টি এমন নয়। সিপিআর ট্রেনিং প্রাপ্ত যে কোন সুস্থ মানুষই সিপিআর প্রয়োগ করতে পারবেন। সিপিআরের সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। সাধারণত নির্দিষ্ট ছন্দ বজায় রেখে নির্দিষ্ট ক্রমে বুকে নির্দিষ্ট মাত্রায় চাপ প্রয়োগ করতে হয়। পরিস্থিতি ও বয়স অনুপাতে এটা সামান্য পরিবর্তিত হয়। বাংলাদেশের অনেক চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বিভিন্ন সময়ে সিপিআর শেখার জন্য প্রশিক্ষনের আয়োজন করে থাকে।

আমাদের দেশে সাধারণ জনগনের মাঝে সিপিআর দেবার নিয়ম ও প্রক্রিয়া প্রচলিত না হওয়ায় এবং জনসাধারণের মাঝে এই জীবন রক্ষাকারী কৌশল বিষয়ে প্রকৃত তথ্যের অভাবে অনেক সময় ভ্রান্ত ধারনারও সৃষ্টি হয়। মৃত্যু পথযাত্রী রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা হিসাবে দেওয়া সিপিআর অনেকের কাছে “চিকিৎসক কতৃক বুকে চাপ দিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা’ হয়ে যায়। বাংলাদেশে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রতি বছর শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে ৪৭৫০০০ মানুষ মারা যায়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে সেই সংখ্যাটি শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব।

নিজে সি পি আর সম্পর্কে জানুন, অন্যকে সি পি আর সম্পর্কে জানান এবং বিপদের সময় সিপিআরের প্রয়োগ জানা ব্যক্তিকে সিপিআর দিতে উৎসাহ ও সাহস দিন।

লেখা/ওয়াসিফ হোসেন

Platform:
Related Post