X

৭ই এপ্রিল,বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস । এবারের প্রতিপাদ্য -Depression: Let’s talk

আজ ৭ই এপ্রিল, ২০১৭, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস । এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হল–Depression: Let’s talk
আসুন বিষণ্ণতা নিয়ে কথা বলি

আপনি জানেন কি, আপনার আমার আশে পাশের অনেক মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগছেন ? আমাদের বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে খোঁজ করলে অনেক বিষণ্ণ মানুষ পাওয়া যাবে । বিশ্বের শতকরা ২০ ভাগ মানুষ কোন না কোন মাত্রার বিষণ্ণতায় ভুগছেন । শতকরা ৫ জন মানুষ মারাত্মক বিষণ্ণতায় (Major Depressive disorder) আক্রান্ত । আমাদের দেশে শতকরা হিসাবে বিষণ্ণতায় আক্রান্তের সংখ্যাটা একই হবে ।

বিষণ্ণতা কি ?
একনাগাড়ে পনের দিন বা এর চেয়ে বেশী সময় ধরে মন খারাপ থাকা, মনে অশান্তি থাকা, কোনকিছুতেই ভাল না-লাগা– একে আমরা বিষণ্ণতা বলি । বিষণ্ণতার খারাপ প্রভাব পড়ে সারা দেহে, প্রতিটি অঙ্গে ।
কেউ না হয় বিষণ্ণ হলই । এতে সমস্যা কি ?
বিষণ্ণতা একটি মনের রোগ হলেও এর প্রভাব পড়ে সারা দেহে ।
শরীরের এমন কোন অঙ্গ নেই, বিষণ্ণতা যাকে আক্রান্ত করে না ।

#বিষণ্ণ হলে মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়, তখন বিষণ্ণতায় আক্রান্ত মানুষ অকারণেই ঝগড়ায় লিপ্ত হয় । এর ফলে পারিবারিক এবং সামাজিক অশান্তি তৈরি হয় ।
#কোনকিছুই ভাল না লাগা । সাধারণ কাজ, বিনোদন– যা আগে ভাল লাগত– তা আর ভাল লাগে না ।
#অকারণে ক্লান্তি বোধ হয় । কাজে কর্মে অনীহা দেখা দেয় । কর্মক্ষমতা এবং কর্মদক্ষতা হ্রাস পায় ।
#বার বার ঘুম ভেঙ্গে যায়, ঘুম খুবই কম হয়, অথবা অকারণে অতিরিক্ত ঘুম হয় ।
#খাবার খেতে ইচ্ছে করে না– এমনকি তা সুস্বাদু হলেও, অথবা অতিরিক্ত ভোজন করতে ইচ্ছে হয় । অতি ভজনে তিনি বিষণ্ণতার নিরাময় খুঁজে পান ।
#পড়াশোনায় মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়া, সাধারণ বিষয় ভুলে যাওয়া ।
# বার বার নিজের মৃত্যুর কথা ভাবা ( কিন্তু মৃত্যুর পরের দিনগুলোতে জবাবদিহিতার জন্য কোন প্রস্তুতি না-নেওয়া )
#আত্মহত্যার কথা চিন্তা করা ।

বিষণ্ণতার আরও কিছু লক্ষণ
#মাথা ব্যথা, মাথাটা সারাক্ষণ ভনভন করা, মাথা গরম হয়ে যাওয়া, মাথা জ্বালা পোড়া করা ।
#হাত পা শরীর জ্বালা পোড়া করা
#শরীর ঝিম ঝিম করা, অবশ লাগা
#বুকটা বেশ ভারী মনে হওয়া, শ্বাসকষ্ট, দম বন্ধ দম বন্ধ লাগা ।
# অন্যকে অসহ্য মনে হওয়া ।

বিষণ্ণতার কিছু কারণঃ
১) প্রিয়জনের মৃত্যু । পিতা মাতা বা সন্তানের মৃত্যুতে আমি অনেক মানুষকে দীর্ঘদিন বিষণ্ণ থাকতে দেখেছি ।
ইরাক, সিরিয়া এবং আফগানিস্তানে বিষণ্ণ রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে– এ তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিয়েছে ।
২) দারিদ্র, বেকারত্ব, কর্মহীনতা, চাকুরী চলে যাওয়া । ( “হে দারিদ্র, তুমি মোরে করেছ মহান, তুমি মোরে দানিয়াছ খৃস্তের সম্মান– এ কথা শুধু কবিয়ার শোভা পায়; বাস্তব জীবনে নয় । )
৩) বিবাহ বিচ্ছেদ । অনেকেই তার স্বামী বা স্ত্রী-র সাথে বনিবনা না-হলে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান । কারো কারো ধারণা, তার স্পাউসের আয় উপার্জন যথেষ্ট নয়, তাই তার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে হয়ত আরও উত্তম কারো সাথে জীবন জুড়ে দেয়া যাবে । এক সময় দেখা যায়, মিথ্যে আশা কুহকিনী । বিষণ্ণতা এদের সারাজীবনের ললাট লিখন হয়ে দাঁড়ায় ।
৪) সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়া । ইদানিং এ কারণটি অনেক বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে

৫) চাকুরীর ক্ষেত্রে অতৃপ্তি, দাম্পত্য কলহ ।
৬) দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যেমন, ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ, কার্ডিয়াক ফেইলুর, কিডনি ফেইলুর, এজমা বা হাপানী, আরথ্রাইটিস। উচ্চ রক্ত চাপ, ডায়াবেটিস
৭) একাকীত্ব, প্রবাস জীবন, আর্থিক ক্ষতি ।

মাত্রা অনুযায়ী বিষণ্ণতাকে তিনভাগে ভাগ করা যায় ।
# মৃদু মাত্রার বিষণ্ণতা– এতে ঔষধের তেমন প্রয়োজন নেই । খোলা মনে তার সাথে আলাপ করে, তার সমস্যা বুঝে সাইকোথেরাপী দিলেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যায়
# মাঝারি মাত্রার বিষণ্ণতা । এ ক্ষেত্রে ঔষধের প্রয়োজন হয় ।
# মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ঔষধের প্রয়োজন । তা না-হলে তার জীবনের ছন্দ হারিয়ে যায়, স্বাভাবিক জীবনের কর্মচাঞ্চল্য থেমে যায়, অসুখে ভোগা মানুষটি আত্মহননে প্রবৃত্ত হয় ।

অনেকেই হয়ত ভাবছেন উপরের লক্ষণগুলোর সাথে কারো স্বভাব মিলে গেলে তাকে বিষণ্ণদের তালিকায় উঠাবেন এবং তার চিকিৎসা শুরু করবেন । বিষয়টি মোটেও এত সহজ নয় । কারো জীবন নিয়ে বা মন নিয়ে এত হালকা খেলা খেলা যায় না । এত সহজই যদি হত, তাহলে এমবিবিএস পাশ করার পর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য আরও চার পাঁচ বছর পড়াশোনা করে এফসিপিএস বা এমডি ডিগ্রি নেবার প্রয়োজন হত না ।

তাহলে উপায় ?
আপনার আশে পাশে কারো মধ্যে যদি বিষণ্ণতার কোন লক্ষণ পাওয়া যায় তাহলে তার সাথে মন খুলে কথা বলুন, তার সমস্যা জানতে চান, তাকে আশা দিন, আকাঙ্ক্ষা দিন, উৎসাহ দিন, তাঁর সমস্যা সমাধানের কোন উপায় আপনার জানা থাকলে, সমস্যার সমাধান করে দিন । তাকে সুষম খাবার খেতে বলুন, একাকী থাকতে নিরুৎসাহিত করুন । কোন ক্রমেই তাকে ধূমপানে বা মাদকে আসক্ত হতে দিবেন না । এতে কোন কাজ না হলে তাকে কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান ।

….
লিখেছেন:
Dr. Zainal Abedin Tito.

drferdous:

View Comments (1)

Related Post