X

হাসপাতালে ঢুকে কর্তব্যরত চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করলো উপজেলা চেয়ারম্যানের আত্নীয়-স্বজনেরা!

১২ এপ্রিল, ২০২০। রবিবার

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে কর্তব্যরত অবস্থায় এক ডাক্তারকে লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স; দিরাই, সুনামগঞ্জ

৫০ শয্যাবিশিষ্ট দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইমার্জেন্সিতে কর্তব্যরত ডাক্তারকে রোগী দেখার জন্য জোর করে বাসায় নিতে চাওয়ায় এবং ওই সময় রোগী ফেলে ডাক্তার যেতে না চাওয়ায় তাকে লাঞ্ছিত করেছে দিরাই উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম চৌধুরীর স্বজনেরা। এ সময় অন্যান্য ডাক্তার, নার্স ও হাসপাতালের কর্মীদেরও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে চেয়ারম্যানের স্বজনেরা।

জানা গেছে, আজ (১২ এপ্রিল) সকালে ইমার্জেন্সিতে বসে কাজ করার সময় দিরাই উপজেলার চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর ভাগ্নে পরিচয়ে এক যুবক এসে ইমার্জেন্সিতে কর্তব্যরত ডা. স্বপন সরকারকে উপজেলা চেয়ারম্যান অসুস্থ বলে জোরপূর্বক বাসায় নিয়ে যেতে চায়। কর্তব্যরত ডাক্তার ইমার্জেন্সি ফেলে কোনো বাসায়ই রোগী দেখতে যেতে পারবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানোর অনুরোধ করেন। এসময় ওই যুবক কর্তব্যরত ডাক্তারকে গালিগালাজ করে বেরিয়ে যান।

কিছুক্ষণ পরেই ওই যুবক উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে, এক ভাইসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তারের চেম্বারে এসে তাকে গালাগালি শুরু করে ডাক্তারের চেয়ার লাথি মেরে ফেলে দেয়। এসময় চেয়ারম্যানের ভাই ডাক্তারের দিকে মসজিদের দানবাক্স নিয়ে মাথায় বাড়ি দিতে যান। অন্যরাও ডাক্তারকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে রাস্তায় এনে পিটানোর নির্দেশ দেয়।

এই শোরগোলের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ছুটে আসলে, অন্য দুই ডাক্তারসহ ওই স্থানে উপস্থিত সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের গালাগালি শুরু করে তারা। এসময় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা একজন ডাক্তারকে উপজেলা চেয়ারম্যানের স্বজনদের সঙ্গে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ ঘটনায় হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

কর্তব্যরত ডাক্তার স্বপন সরকার বলেন, “আমি ইমারজেন্সি ছেড়ে যেতে পারতাম, কিন্তু তখন যদি একজন শ্বাসকষ্টের রোগী আসতেন, তখন ইমার্জেন্সিতে কে রোগী দেখতো? চেয়ারম্যান সাহেবের ভাই, ছেলে আর ভাগিনা??? আমি যাইনি, তাই উনারা হুমকি দিয়েছেন। এই মহামারীর সময়ে আমরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। এর মাঝে এই রকম হুমকি, গালাগালি শুনলে আর কাজ করতে ইচ্ছে করে না। তখন মনে হয় এদেশে সবচেয়ে বড় পাপ #ক্ষমতাশালী না হওয়া, দ্বিতীয় পাপ #ডাক্তার হওয়া।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, “ইমার্জেন্সি ডাক্তারের সঙ্গে চেয়ারম্যান সাহেবের আত্নীয়েরা খারাপ আচরণ করেছে। পরে বাসায় গিয়ে ডাক্তার চেয়ারম্যান সাহেবকে দেখে এসেছেন এবং বিষয়টি মিটমাট হয়ে গেছে।”

করোনাকালে কর্তব্যরত ডাক্তারদের সঙ্গে অসৌজন্য আচরণ ও হুমকি ধমকি দেওয়ায় নিন্দা জানিয়েছে সুনামগঞ্জ বিএমএ। তারা দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সুনামগঞ্জ বিএমএ’র সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সৈকত দাস বলেন, “করোনার এই ভয়াল থাবায় জীবনবাজি রেখে ডাক্তাররা চিকিৎসা দিচ্ছেন। এর মধ্যে প্রভাবশালীরা হাসপাতালে ঢুকে যেভাবে ডাক্তারদের অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করছে, রাস্তায় ফেলে পিটানোর কথা বলছে, হুমকি ধমকি দিচ্ছে তা নিন্দনীয়।”

তিনি আরো বলেন, “ইমার্জেন্সি ছেড়ে প্রভাবশালী রোগীকে দেখতে হবে সরকার এমন কোন নির্দেশনা দেয়নি। এদের বিচার না হলে বারবার এভাবে ডাক্তারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে।”

উক্ত ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে ডাক্তারদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার জোর দাবী জানিয়েছেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদক/ অংকন বনিক জয়

Publisher:
Related Post