X

লক্ষীপুরে চিকিৎসককে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদে সহযোগীতা করলো স্থানীয় প্রশাসন

(ঘটনার ভুক্তভোগী ডাক্তারের নিজের লেখা পোস্ট থেকে সংগৃহীত)

গত বুধবার বেলা ১২:৪৫ এ ইমারজেন্সিতে এক্সিডেন্ট করে ৫জন রোগী আসে।সাথে আসে অসংখ্য উৎসুক জনতা।সবাইকে বাইরে যেতে বলে দরজা লাগিয়ে রোগীদের কাজ শুরু করি।বাইরে শত শত মানুষ।একটু পর আবার রোগী আসে।দরজা খুলতেই আবারো রোগীর সাথে হুড়মুড় করে লোক ঢুকতে থাকে।সবাইকে বাইরে যাবার অনুরোধ করি। কথামত সবাই বাইরে যায় কিন্তু একটা ছেলে বাইরে যেতে অস্বীকৃতি জানায়।আমি আমার কাজের অসুবিধার কথা বলে আবারো তাকে বাইরে যেতে বলি।বিনয়ের সাথেই বলসি।সে তখন উত্তেজিত হয়ে বলে আমি থাকবই।সাথে যোগ দেয় আরো কিছু ছেলে।চিৎকার করে বলতে থাকে আমাকে চিনেন,আমি কে জানেন?এই বলে সে আমার ডান বাহুতে একটা ধাক্কা মারে।একজন অফিসারের জন্য একটা ধাক্কাই যথেষ্ট।আমার স্টাফরা কাজ ছেড়ে এগিয়ে আসলে আমি বিষয়টা পরে দেখব বলে সবাইকে কাজে হাত দিতে বলি এবং ওই ছেলেকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিই।সবাইকে বললাম এখন ওই ছেলের সাথে লাগতে গিয়ে যদি কোন রোগীর ক্ষতি হয়ে যায় তাহলে আমি আরো বিপদে পড়ব এবং ওরা দায়িত্বে অবহেলার একটা ইস্যু পেয়ে যাবে।অতএব আমরা কাজ শেষ করতে লাগলাম।এরমাঝে ছেলেটির নাম পরিচয় জানতে থাকলাম

রোগী সেটেল করে আমি uhfpo স্যারকে জানালাম।স্যার uno স্যার কে জানালেন।আমি উপজেলায় গিয়ে uno স্যারকে সব বললাম।স্যার ওসিকে বললেন দ্রুত এ্যাকশন নিতে।আমি থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিলাম।এর মধ্যে অনেক তদবির,কুপরামর্শ,হুমকি ছিল যাতে লিখিত না দেই।কিন্তু আমি অটল ছিলাম এবং লিখিত অভিযোগ দিয়েই থানা থেকে বের হই।তারপর CS স্যারের সাথে দেখা করে বিস্তারিত জানালাম।স্যার এসপি এবং ডিসি স্যারকে জানালে ওনারা রাতের মধ্যেই ব্যবস্হা নেয়ার আশ্বাস দেন।তারপর লক্ষিপুর NSI প্রধানের কাছে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে দেখা করি এবং সমস্যার কথা বলি।উনি সব লেভেলে মেসেজ পাঠাই দিলেন যে একজন সরকারী কর্মকর্তাকে লান্ছিত করা হয়েছে এবং এর দ্রুত ব্যাবস্হা যেন নেয়া হয়।সবার সাথে দেখা করে সন্ধায় বাসায় ফিরি।


এরমধ্যেই অনলাইন নিউজে ঘটনা আসতে থাকে এবং সত্য ঘটনাই প্রচারিত হয়।এক ঘন্টা পর বাইরে আসি।হঠাৎ কিছু পরিচিত ছেলে এসে পা ধরে বসে পড়ল।একটু অবাক হলাম।তারা বলতে লাগল,ভাই ভুল হয়ে গেসে।চিনতে পারে নাই,এইবারের মত মাফ করে দেন ব্লা ব্লা ব্লা।বললাম,আমি সরকারী নিয়মে লিখিত দিয়ে ফেলসি,আমার আর কিছুই করার নাই।তারা পা ছাড়েই না।কিছুক্ষণ পর দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান,ওই ছেলেসহ আরো অনেক নেতা এসে সবাই আমার হাত পা ধরে মাফ চাওয়া শুরু করল।ছেলেটা পায়ের উপর আর চেয়ারম্যানরা হাত রাখছে।আমি দেখলাম এত মানুষ মাপ চাওয়ার পর আর বেশি বাড়াবাড়ি করাটা ঠিক হবে না।তখন আমি বললাম,বিষয়টা আর আমার হাতে নাই,অনেক দূর চলে গেছে।আমি সিদ্ধান্ত দিতে পারবো না। তখন আমি CS স্যারকে জানালে স্যার আমাকে অপেক্ষা করতে বলেন।

রাত ১০.৩০ এ CS স্যার,বিএমএ সভাপতি মামুন স্যার হাসপাতালে আসেন।স্যার আসার পর স্হানীয় নেতারাসহ বাজারের সবাই আসেন।স্যার চেয়ারম্যানদের তুলোধোনা করে ছাড়লেন।মামুন স্যার লক্ষিপুরের মেয়র জনাব তাহের সাহেবকে ফোন দিয়ে বললেন,ভাই আমরা হাসপাতালে আছি,আপনি চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলেন।মেয়র সাহেব যে গালিগালাজ করলেন তা আর প্রকাশ করার মত না( বলা বাহুল্য,মেয়র সাহেব ডাক্তারদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এটা সবাই জানে)।

এরপর ওই ছেলে আবার পা ধরে মাফ চাইল।তখন CS স্যার বললেন,আমরা অভিযোগ উঠাই নিব তবে আমাদেরকে মুচলেকা দিতে হবে যেন আর কোনদিন কেউ ডাক্তার,স্টাফ,নার্সদের সাথে এধরনের কাজ না করে এবং যদি করে তবে ওই ছেলে এবং চেয়ারম্যানদেরকেই দায়ী করে অভিযোগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেয়া হবে।তারা এটা মেনে নেয়ার পর আমরা তাদরকে ছাড়লাম এবং অভিযোগ প্রত্যাহার করলাম।

আল্লাহর রহমতে অনেক ভালভাবেই আমরা ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি এবং এলাকায় একটা দৃষ্টান্ত স্হাপিত হয়েছে।সবাই দোয়া করবেন।ধন্যবাদ।

লিখেছেন:
ডা. রেজাউল করিম রাজিব
শজিমেক,১৫তম
মেডিকেল অফিসার,
উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্স,
কমলনগর,লক্ষিপুর।

Banaful:

View Comments (2)

  • I hv faced similar scenerio in 2009 in my uhc n managed similar way. Nothing more to do just now. Bigger change will take time n uncertain. Thnks dear junior colleague !

Related Post