X

রোগ আড়াল করোনা

১ এপ্রিল ২০২০:
সহকারী অধ্যাপক ডা. শহিদুল ইসলাম
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

একেকটা রোগের একেক রকম সামাজিক মর্যাদা আছে। উচ্চ রক্তচাপ হচ্ছে সচেতনতার প্রতীক। যখন তখন প্রেসার মাপা ও বাসায় প্রেসার মেশিন রাখা স্বাস্থ্য সচেতনতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিদেশ থেকে একটা ডিজিটাল মেশিন আনতে পারলে তা সামাজিক মর্যাদা বাড়াতেও সাহায্য করে। ইদানিং সচেতনতার তালিকায় আরও কয়েকটি যুক্ত হয়েছে। তারমধ্যে লিপিড প্রফাইল আর ইউরিক এসিড পরীক্ষা করা অন্যতম।

হার্ট ডিজিজ ও ডায়াবেটিস হল আভিজাত্যের প্রতীক। যাদের এসব অসুখ আছে, তারা প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে তা আমাদের বলতে পছন্দ করেন। হার্ট রিং পড়ানো থাকলে তা যেমন আভিজাত্য বাড়ায়, তেমনি রোগীর ধন-সম্পদ প্রকাশেও সহায়তা করে। প্রথম ডায়াবেটিস ডায়াগনোসিস হলে রোগী এত খুশি হন যে, নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেন না। দিগন্ত বিস্তৃত হাসি দিয়ে বলেন, হায় আল্লাহ, আমার এখন কি হবে! সত্যি বলতে আমিও কখনও কখনও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। বলি কি আর হবে, মিষ্টি কিনে নিয়ে যান বাড়িতে! মানে আর কখনও খেতে পারবেন না, শেষবারের মত খাবেন। তবে অর্ধেকের বেশি খাবেন না, আর এটাই কিন্তু শেষ।

এজমা নিচু শ্রেণির অসুখ। কেউ কখনও এজমার গল্প করে না। পারলে গোপন করেন। যক্ষার কথা জিজ্ঞেস করলে কেউ কেউ তো আঁতকে উঠেন! প্রথমতঃ বোঝাতে চান যে, আমি জিজ্ঞেস করে অপরাধ করেছি, তারপর বলেন, আমার বংশে কখনও হয়নি। আমি কখনও কখনও বলি, এটা বংশগত রোগ নয়। আর যক্ষা হওয়াটা এমন কোন অপমানজনক বিষয় না। অসুখ হচ্ছে অসুখ। এটা যে কারও হতে পারে। অসুখ যেমন গর্বের বিষয় না, তেমনি অপমানের বিষয়ও না।

আমার প্রথম দিকে ধারণা হয়েছিল, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া বা কোভিড-১৯ অসুখটা অভিজাত রোগের কাতারে সামিল হবে, যেহেতু আমাদের মধ্যে বিদেশ প্রেমটা বেশ প্রকট।

উন্নত বিশ্বে, বিশেষ করে আমেরিকার মত দেশে রোগটা ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া বিদেশ ফেরত মানুষের মাধ্যমেই প্রথমে রোগটা এদেশে এসেছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে তা হয় নি। আমরা করোনা গোপন করছি, হাঁচি-কাশিও গোপন করছি। আমাদের দেশ এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত সংক্রমণ পর্যায়গুলোর তৃতীয় পর্যায় পার করছে। এখন আমাদের প্রধান দায়িত্ব হল- প্রতিটি করোনা রোগী খুঁজে বের করা। না হলে লক-ডাউন ফলপ্রসু হবে না। আসুন আমরা প্রকাশ করি। নিজেদের অসুখ, প্রতিবেশীর অসুখ, বন্ধু-বান্ধবের অসুখ, সব!

এটা আমাদের সবার ভালোর জন্য। অন্তত ফোন করি। হাসপাতালের সামনে ফোন নম্বর আছে। ফেসবুকসহ অন্যান্য মিডিয়াতে অনেক ডাক্তারই তাদের ফোন নম্বর দিয়েছেন। তারা অপেক্ষা করছেন আপনার ফোন কলের!

Platform:
Related Post