X

মাতৃত্বকালীন ডায়াবেটিস

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১০ই নভেম্বর, ২০২০ রোজ মঙ্গলবার

গর্ভকালীন সময়ে কোনো মহিলা যার হয়তো কখনোই রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি ছিল না কিন্তু গর্ভকালীন সময়ে রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে এ ধরনের ডায়াবেটিস কে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস মেলাইটাস(GDM) বা গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিস বলা হয়ে থাকে।

গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার দেহে নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। এসময় শরীরে হরমোনের তারতম্য ঘটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।

গর্ভদশায় গর্ভের অমরা বা প্লাসেন্টা নামক একটি পর্দা গর্ভস্থ শিশুকে আবৃত করে রাখে এবং শিশুকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে। তবে প্লাসেন্টা বা গর্ভের অমরা সংরক্ষণের জন্য প্রজেস্টেরন নামক একটি হরমোনের কার্যকারিতা ব্যাপক।
গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা প্রচুর পরিমাণে প্রজেস্টেরন হরমোন নিঃসরণ করে। কিন্তু এই হরমোনের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে ইনসুলিনের কার্যকারিতার উপর। এটি ইনসুলিনের উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে এবং ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয় তার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় এবং তাকে ভেঙে ফেলার মত পর্যাপ্ত ইনসুলিনের অভাব ঘটে। গর্ভাবস্থায় রোগীর ডায়াবেটিস হয় এই ইনসুলিনের মাত্রার তারতম্যের কারণে।

এছাড়া গর্ভাবস্থাকালীন আরো দুটো হরমোন হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রোপিন হরমোন এবং হিউম্যান প্লাসেন্টাল ল্যাকটোজেন হরমোন যারা ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা কমিয়ে দেয়। যার কারণে ইনসুলিন তার কাজ করতে ব্যাহত হয়।

তবে সব নারীরই গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিস হয় না। যাদের স্ট্রং পজিটিভ পারিবারিক ইতিহাস থাকে যেমন পরিবারের বাবা-মা, ভাইবোনের, দাদা, চাচা, খালা কোনো একজন বা অনেকের ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে, পূর্ববর্তী ৪ কেজি বা তার অধিক ওজনের বাচ্চা প্রসবের ইতিহাস থাকলে, ৩০ বছরের পরে গর্ভবতী হলে, স্থূলতা ইত্যাদি কারণ গুলো যাদের রয়েছে তাদের এই গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিস বা GDM হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

সন্তান গর্ভে থাকার সময় মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে নানাভাবে সন্তানের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন:

>শিশুর আকৃতি অপেক্ষাকৃত বড় হতে পারে যার ফলে ডেলিভারি প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।

>জন্মগ্রহণের পরপরই স্বাস্থ্যজনিত অনেক সমস্যা বা জন্মত্রুটি দেখা যেতে পারে যেমন হৃৎপিন্ড, স্নায়ুতন্ত্রজনিত, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা।

>গর্ভাবস্থায় মায়ের রক্তে গ্লুকোজ বেশি থাকায় বাচ্চার রক্তেও গ্লুকোজ বেশি থাকে তাই জন্মের পরপর মা থেকে বিচ্ছেদ এর পর বাচ্চার শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া দেখা যায়।

>রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস সিন্ড্রোম হতে পারে

>ভবিষ্যতে স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন বা ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

যদি কোনো নারীর টাইপ-১ বা টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত থাকে তবে তাকে পরিকল্পিত গর্ভধারণের অন্তত তিনমাস আগে থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে।

ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারীর গর্ভধারণের পরিকল্পনার আগে নিশ্চিত করতে হবে যে তার ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা আবশ্যক। স্বাভাবিক অবস্থায় ডায়াবেটিসের জন্য যেসব ঔষধ গ্রহণ করতে হয় তা গর্ভকালীন অবস্থায় পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণত গর্ভাবস্থায় রোগীকে কখনোই মুখে ঔষধ বা ওরাল হাইপোগ্লাইসেমিক ড্রাগ দেওয়া হয় না। গর্ভাবস্থায় সবসময় ইনসুলিন দেওয়া হয়ে থাকে তবে তার মাত্রা রোগীর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণের উপর নির্ভর করে।

গর্ভকালীন এই সময়ে মায়ের ও শিশুর সব ধরনের শারীরিক জটিলতা এড়াতে এবং সঠিক মাত্রায় ইনসুলিনের ডোজ গ্রহণের জন্য রোগীকে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

স্টাফ রিপোর্টার
নুরুন্নাহার মিতু

হৃদিতা রোশনী:
Related Post