X

বিমানবন্দরে ঘুষ দিয়ে এলাকায় করোনা ছড়িয়ে মারা গেলেন এক প্রবাসী

প্ল্যাটফর্ম নিউজ,

রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০

এবার এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায়! প্রবাস থেকে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে ঘুষ দিয়ে বাড়ি ফিরে এলাকাতে করোনা ছড়িয়ে দিয়ে মারা গেলেন মো. শাহ আলম নামের এক প্রবাসী!

গত ৭ এপ্রিল (মঙ্গলবার) মারা যান শাহ আলম। এরপর তার নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়। প্রবাস থেকে দেশে ফিরে কোয়ারেন্টিন মানেননি তিনি। নিজের বাড়ি আর শ্বশুরবাড়িতে অবাধে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এছাড়াও গিয়েছেন অন্য উপজেলায় আত্নীয়ের বাড়িতে। পরিণতিও ভালো হয়নি। শ্বাসকষ্ট নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে মারা যান তিনি। তিনি গত ১৮ মার্চ দেশে আসেন। বিমানবন্দর থেকে তাকে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হলে সেখানে দায়িত্বরতদের ৫০ হাজার টাকা দিয়ে চলে আসেন বাড়িতে। বাড়িতে এসেও ছিলেন না হোম কোয়ারেন্টিনে। তার মৃত্যুর পর এসব তথ্য প্রকাশ পায়। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ দাবী করে,

“শাহ আলম ১৮ মার্চ সর্বশেষ মালয়েশিয়া হয়ে শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসেন। ২০ মার্চ থেকে ১লা এপ্রিল পর্যন্ত নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। নাসিরনগরের পূর্বভাগ ইউনিয়নের মকবুলপুর গ্রামের আবদুল গফুরের ছেলে তিনি।”

তার মৃত্যুর পর ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: হাবিবুর রহমান জানান,

“শাহআলম আসার পর থেকে শ্বশুর বাড়িতেই ছিলো। মাঝেমধ্যে বাপের বাড়িতে আসা যাওয়া করেছে কিনা জানিনা। আমাদের কাছে তালিকা আসার পর আমরা অনুসন্ধান করে তাকে বাড়িতে পাইনি। আমার ইউনিয়নে ১৯ জন লোক প্রবাস থেকে আসে বাস্তবে। যদিও ২৩ জনের তালিকা দেয়া হয় আমাদের কাছে। এরমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে থাকে ২ জন, ১ জনের নাম ঠিকানা ভুল ছিলো। শাহআলম ছাড়া প্রবাস থেকে আসা সবাই আমাদের পর্যবেক্ষনে ছিলো। প্রত্যেকের বাড়িতে গ্রামপুলিশ পাঠিয়ে কমিউনিকেশন ঠিক রাখতে পেরেছি। কিন্তু শাহআলমকেই শুধু আমরা বাড়িতে পায়নি।”

পার্শ্ববর্তী গোকর্ণ ইউনিয়নের জেঠাগ্রামে তার শ্বশুর বাড়ি। নাসিরনগরে নিজের বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ির বাইরে সে সরাইলের শাহজাদাপুরে তার এক আত্নীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলো বলেও তথ্য পাওয়া যায়। তার মৃত্যুর পর তার নিজের বাড়ি ও শ্বশুড়বাড়ি লকডাউন করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। ৪ঠা এপ্রিল অসুস্থতা বোধ করলে শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর টাইফয়েড ধরা পরে তার। কিন্তু তখন করোনা ভাইরাসের কোন উপসর্গ প্রকাশ পায়নি। ৭ এপ্রিল রাতে শ্বাসকষ্ট বাড়লে স্বজনরা তাকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রবাসী মো: শাহআলম কতজনের যে বিপদ ঘটিয়েছেন এই হিসাব মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগকে। স্ত্রী, সন্তান এবং তার ভাইয়ের করোনা আক্রান্তের রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে এরই মধ্যে। নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার অভিজিৎ রায় জানিয়েছেন,

“শাহআলমের পরিবারের ১২ জনের নমুনা সংগ্রহ করেন তারা প্রথমে। শুক্রবার তার শ্বশুর বাড়ির আরো ৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। শাহআলম কতোজনের সংস্পর্শে এসেছিলেন তা নিরুপণ করছেন তারা।”

এভাবে এক প্রবাসীর উদাসীনতা কতশত মানুষকে ঠেলে দিলো এক অনিশ্চিত শঙ্কার দিকে! বিদেশ থেকে ফিরে হোম কোয়ারান্টাইন মেনে সঠিক চিকিৎসা নিলে হয়তো তাকেও মরতে হতো না এবং এর পাশাপাশি এতগুলো মানুষের আতঙ্কও বাড়তো না! প্রসঙ্গত, করোনা প্রতিরোধে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হয়ে, নিজগৃহে অবস্থান করেই সুস্থ ও নিরাপদ থাকা সম্ভব।

নিজস্ব প্রতিবেদক/ অংকন বনিক জয়

জামিল সিদ্দিকী: A dreamer who want to bring positive changes in health sector in Bangladesh.
Related Post