X

পৃথিবীর সব পিতা আজ উদ্বিগ্ন- ডা. মো. রাজিবুল বারি

প্ল্যাটফর্ম নিউজ
মঙ্গলবার, ২১শে এপ্রিল, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ

পৃথিবীর সব পিতা আজ উদ্বিগ্ন, সাথে সন্তানেরাও। রাষ্ট্রনায়কদের নস্টামির অংশীদারিত্বের দাবি জনগণ কোনোদিন করেনি। তবু তাদের খামখেয়ালিতে ধ্বংস হয়েছে অযুত জীবনের নিযুত অমূল্য গল্পগাঁথা। যতটা যত্নে মা সদ্যভূমিষ্ঠ সন্তানের নরম মাথাটা বাহুতে জড়ান, যতটা আবেগে বাবা সন্তানের খেলনার দাম দিতে মানিব্যাগটায় হাত ছোঁয়ান, যতটা অভিমানে সন্তানের আবদার কালবৈশাখীর ঝড়ো মেঘ-বাতাসের চেয়েও তীব্র হয়, তার চেয়েও ‘তীব্র অথচ নিঃশব্দ’ আজ লাখো মানুষের আর্তনাদ।

কোথাও কেউ নেই। চারিদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। অথচ কারো শোনার সময় নেই। রাষ্ট্র নামক ফ্র্যাঙ্কেন্সটাইন ডারউইনের ন্যাচারাল সিলেকশনের ব্যবহারিক ক্লাশে ব্যস্ত। তথাকথিত ‘বীর’/’শহীদ’/’যোদ্ধা’ – ইত্যাদি চটকদার বিশেষণের ফুলঝুরিতে মোড়ানো টক-ঝাল-মিষ্টি লজেন্সের লোভে ছোট্ট শিশুদের মত দৌড়ানো একদল বোকাদের লাশের উপর নির্মিত হচ্ছে সভ্যতার অট্টালিকা। আর সেই বিজয়ের তোপধ্বনিতে মাটিচাপা পড়েছে ভর্তা মেখে সন্তানকে ডাকতে থাকা মায়ের মুখ, অফিসে যেতে দেবেনা পণ করে ‘বাবার-পা-জড়িয়ে-রাখা’ সন্তানের ঠোঁট-ফোলা-অভিমান, মাকে দেখার জন্য সন্তানের মেঝেতে গড়াগড়ি, ক্ষুধার জ্বালায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে রাজপথে বেরনো বায়ান্ন-পরবর্তী ‘হঠাৎ-গরীব’ বীরবাঙ্গালি, ন্যায্য বেতনের দাবিতে নামা পোশাক শ্রমিক, খাবারের জন্য বৃদ্ধা মা, দায়গ্রস্ত পিতা, পরিশ্রমী বেকার যুবক।

পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পর্কগুলো সামান্য কয়েকটা সরকারী স্মারক নম্বর আর লোক দেখানো লাইভের ভিড়ে এত সস্তায় বিলীন হয়ে যাবে এমনটি পৃথিবী দেখেনি আগে। সদ্য মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করা বাংলার সন্তানেরা একাত্তরের অর্ধশত বছর পরে আবারও এমন পাইকারি দরে হারিয়ে যাবে ভাবিনি আগে। তবু ভালো থাক প্রিয় স্বদেশ। ভালো থাক আমার বাড়ি ফেরার মেঠো-পথ, স্কুলঘরের পেছনের বরই গাছটা, খেয়াঘাট, বৃষ্টি-ডোবা খেলার মাঠ, শর্ষে-ঘ্রাণ, কুয়াশা-ভোরে ক্ষেত নিড়ানো, সন্তানের তুলতুলে গালটা।

ভালো থাকুক ওরা, যাদের জন্য রচিত হবেনা কোন গান, খচিত হবেনা প্রস্তরখণ্ড বা টুকরো কাঠের এপিটাফ। তবু বলব,
“কেউ যেন ভুল করে গেয়ো নাকো মন ভাঙা গান।
ওরা আসবে, চুপি চুপি,
যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ।
সব কটা জানালা খুলে দাও না।”

ডা. মো. রাজিবুল বারি
সহকারী অধ্যাপক,
পিএইচডি গবেষক, টোকিও ইউনিভার্সিটি
সাবেক বিভাগীয় প্রধান, রেডিওলজি, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

হৃদিতা রোশনী:
Related Post