X

পিপিই পড়ে বাসায় ডাকাতি: অদৃশ্য ভাইরাসের সাথে দৃশ্যমান শত্রুর আতঙ্ক!

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, শনিবার। ১৮ এপ্রিল, ২০২০

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। সারাবিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ২ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে কয়েকদিন আগেই। পৃথিবীব্যাপী মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে।

করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবে সারাদেশে চলছে সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটি। কিন্তু ছুটি চলাকালীন এই সময়টিতেও থেমে নেই দুর্বৃত্তরা। রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় পিপিই পড়ে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী সেজে বাড়ি ডাকাতির কথা শোনা যাচ্ছে।

অদৃশ্য ভাইরাসের পাশাপাশি দৃশ্যমান শত্রুর আক্রমণের এরকই একটি সত্য ঘটনা তুলে ধরছি-

ঘটনাস্থল টাঙ্গাইল। ঘড়িতে সময় আনুমানিক রাত একটা। এত রাতে রাস্তাঘাটে সাধারণত মানুষজন থাকে না, তারপরে আবার করোনা ভাইরাসের কারণে জেলাটিতে চলছে লকডাউন। অবরুদ্ধ হবার কারণে সন্ধ্যা ছয়টার পরেই রাস্তায় তেমন কাউকে চোখে পড়ে না। মাঝেমাঝে পুলিশ ভ্যান অথবা অ্যাম্বুলেন্সের টুকটাক শব্দ কানে আসে।

শহরের একটা আবাসিক ভবনের নিচে এসে দুজন মাস্ক, গ্লাভস পরা এবং দুজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক পরিহিত মোট চারজন ব্যক্তি গার্ডকে ডাকাডাকি শুরু করলেন। জানতে চাইলে গার্ডকে তাদের পরিচয় হিসেবে তারা বললেন, হাসপাতাল থেকে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিতে এসেছেন। এ ব্যাপারে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।

বিল্ডিংয়ের সবাইকেই গার্ড বেশ ভালোভাবে চেনেন, গত কয়েকদিনে কেউ অসুস্থ হয়েছে বলে তার জানা নেই। তাছাড়া এত রাতে তো হাসপাতাল থেকে লোক আসার কথা নয়। গার্ড কোনোভাবেই দরজা খুলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। কিন্তু তারা ভয় দেখিয়ে দ্রুত গেট খোলার জন্য তাগিদ দিয়ে যাচ্ছিল। “স্বয়ং বাড়িওয়ালা ওপর থেকে এসে গেট খোলার জন্য তাকে বললেও তিনি কিছুতেই গেট খুলে দেবেন না। তাদের যদি সত্যি সত্যিই করোনা রোগী নিয়ে যেতে হয় তবে সকাল পর্যন্ত বাইরে অপেক্ষা করতে হবে” – এমনটি জানান গার্ড। বেশ কিছুক্ষণ তর্কের পরেও গার্ড গেট খুলে না দেওয়ায় তারা তাকে যাচ্ছেতাই ভাষায় গালাগাল করে চলে গেল এবং সকালে এসে দেখে নেবে তাকে শাসিয়ে গেলো।

কিন্তু অবাক করার বিষয়, সকালে কেউ সেই বাড়িতে করোনা রোগী নিতে আসেনি। কারণ পুরো ভবনে প্রকৃতপক্ষে কোনো করোনা রোগী নেই। সকালে ঘটনা শুনে এবং থানায় যোগাযোগ করে সবাই বুঝতে পারলেন, রাতে আসা এই লোকগুলো আসলে ছদ্মবেশী ডাকাত ছিল। গার্ড চমৎকার এক বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলেন।

এমন ঘটনা এখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও ঘটছে!! রাতের বেলায় ‘হাসপাতাল থেকে, থানা থেকে আসছি’ বলে বাসায় ঢোকার চেষ্টা করা হচ্ছে। পরণের পোশাক সবারই দেখতে এরকম। ঢাকার গুলশান ও ধানমন্ডি এলাকায়ও মধ্যরাতে বাসাবাড়ির সামনে পিপিই, মাস্ক ও গ্লাভস পরা লোকজনকে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। অনেকের ফেসবুকে স্ট্যাটাসেও ধানমন্ডির ৫ এবং ৯ নম্বর রোড, গুলশান ১ ও ২ নম্বরে ঘটা এরকমই কয়েকটা ঘটনার কথা জানা গেছে।

পুলিশের কাছেও ইতিমধ্যেই খবর পৌঁছেছে, এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে বাসার মূল দরজার গেট না খুলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দিয়েছে ঢাকা জেলা পুলিশ।

শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “ঢাকা জেলার সম্মানিত সকল অধিবাসীদের জানানো যাচ্ছে যে, কোন ব্যক্তি যদি পিপিই পরিহিত অবস্থায় ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী বা পুলিশ পরিচয়ে কোন বাসাবাড়িতে করোনা রোগী খোঁজ খবর করার সংক্রান্তে দরজা খুলতে বলে কেউ দরজা খুলবেন না। যদি কেউ ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী বা পুলিশ পরিচয়ে করোনা রোগী নিয়ে যেতে চেষ্টা করে তাহলে দরজা না খুলে সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ বা ডিউটি অফিসারকে জানান।”

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, “ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে কিছু দুষ্কৃতিকারী করোনা ভাইরাসের দোহাই দিয়ে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এবং পুলিশ পরিচয়ে অপকর্ম করার চেষ্টা করছে। তাই উপরিউক্ত পরিস্থিতির কেউ সম্মুখীন হলে নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হল।”

পাঠকদের সুবিধার্থে, ঢাকা জেলার সকল থানা সমুহের মোবাইল ফোন নাম্বার নিচে প্রদান করা হলো::

কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাঃ-

অফিসার ইনচার্জ- 01713-373329
ডিউটি অফিসার- 01769-690284

কেরাণীগঞ্জ থানা (দক্ষিণ)-

অফিসার ইনচার্জ-01713-373333
ডিউটি অফিসার- 01769-690285

সাভার থানাঃ-

অফিসার ইনচার্জ-01713-373327
ডিউটি অফিসার- 01769-690282

আশুলিয়া থানাঃ-

অফিসার ইনচার্জ-01713-373332
ডিউটি অফিসার- 01771-595333

ধামরাই থানাঃ-

অফিসার ইনচার্জ-01713-373328
ডিউটি অফিসার-01715-317500

নবাবগঞ্জ থানাঃ-

অফিসার ইনচার্জ-01713-373330
ডিউটি অফিসার-01750-909882

দোহার থানাঃ-

অফিসার ইনচার্জ-01713-373331
ডিউটি অফিসার-01769-690287

সাবধান থাকুন অদৃশ্য ভাইরাসের পাশাপাশি দৃশ্যমান মানুষের কাছ থেকেও। অপরিচিত কেউ দরজা খুলতে বললেই খুলে দেবেন না, সে থানা থেকে আসুক, হাসপাতাল থেকে আসুক বা যেখান থেকেই আসুক না কেন। বাসার দারোয়ান বা গার্ডকে সতর্ক করে দিন। গার্ড যেনো দিনরাত সারাক্ষণই গেট বন্ধ রাখে এবং পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে যাতে কাউকে ভেতরে ঢুকতে না দেয়।

আতঙ্ক নয়, সচেতন হোন; সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

নিজস্ব প্রতিবেদক/ অংকন বনিক জয়

Publisher:
Related Post