X

মেঘেরা অন্তরীণ || পর্ব-০৪

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২ ডিসেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার

ডা. শুভদীপ চন্দ

ইটের টুকরো হোক বা বালু কণা- পানিতে পড়লে একই রকম ডোবে। প্রেমে পড়লে জ্ঞানী আর মূর্খ একই তফাৎ। পতন একই রকম।

ছবিঃ প্রতীকী

আমার এক বন্ধু ছিল ক্যাম্পাসে। এখন জার্মানির ডাক্তার। রোজ চার- পাঁচ পত্রিকা পড়তো, ছিল সবকিছু সূক্ষ্মভাবে বিচার করার ক্ষমতা। যখন কথা বলতো- পছন্দ হোক বা অপছন্দ তার কথা শুনতেই হতো। তার যুক্তিকে সাইডে ফেলার সুযোগ নেই। সে এক মেয়ের প্রেমে পড়লো, তার যুক্তিবিদ্যা, দর্শন, ইমেজ- সব নিয়েই জলে ডুবলো। একদিন ওই মেয়েই নালিশ করে দিলো ‘বড্ড জ্বালায়’। শিক্ষক হুমায়ূন আহমেদও এ ভুলটি করেছিলেন। ভালোবাসা সম্পর্কে খুব কম জানলেও এটুকু জানি- ভালোবাসার জন্য কোনো আত্মীয় সম্পর্ক প্রয়োজন হয় না। এক প্রদীপ নিভিয়ে আরেক প্রদীপ জ্বালালে আগুন বিনিময় হয়, আলোর শেয়ার হয় না।

ভদ্রমহিলাকে চেম্বারে আনা হয়েছে। ওরা বলছে ‘কথা বলতে পারছেন না’। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভুল হয় ‘কথা না বলতে পারা’ আর ‘কথা না বলা’ বুঝতে পারার মধ্যে। জিজ্ঞেস করলাম কোনো মনোমালিন্য হয়েছে সংসারে? উনি কথা বললেন না, বললো তার মেয়ের জামাই। একদম গলা নামিয়ে। শুনতে গেলে কান মুখের কাছে নিতে হয়। মূল কথা হলো তার শ্বশুর সরকারি কলেজের শিক্ষক, শাশুড়ি গৃহিণী। এখন শ্বশুর ‘ভুলে’ তার এক ছাত্রীকে বিয়ে করে ফেলেছে। তারপর থেকে শাশুড়ি অসুস্থ। কথা আটকে আছে মুখে। বুকের মধ্যে এতো জমাট ক্ষোভ অভিমান- যে কাশি দিলেও খুলে না। সে মেয়ে তার শাশুড়ির পরিচয়েই ঘরে ঢুকেছিলো। বুঝতে পারলাম যা ঘটেছে চোখের সামনে। অর্থাৎ মেয়েদের প্রাচীনতম রোগে তিনি ভুগছেন ‘ঢেকে রাখা রোগ’। একদম শেষ সময়ে এসে এ রোগের প্রকোপ প্রকাশ পায়। তা সে মেয়ে জামাইকে থামাতেই কিনা আহাজারি শুরু করলেন। এখন তিনি কি করবেন, তার সর্বনাশ হয়ে গেল, ছোট মেয়েকে কিভাবে বিয়ে দিবেন। এদেশের সবচেয়ে বড় সংগঠনটির নাম ‘পরচর্চা’। সংগঠন তো তাকেই বলে যা সংগঠিত অবস্থায় থাকে। সে সূত্রে পরচর্চার চেয়ে সুসংগঠিত শক্তি এদেশে অন্তত আর নেই। তিনি এ নিন্দার ভয়ে কাতর। সমাজে মুখ দেখাবেন কি করে?

নিজের চরমতম বিপদেও একজন মা-ই পারে সন্তানের বিপদের কথা আগে ভাবতে। নইলে আজ তার চেয়ে দুর্ভাগা আর কে আছে! মেয়ে তো পরে। যাই হোক কথা বলতে পারছেন মানে আমার কাজ শেষ। উনার চলে যাওয়া দেখলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘কোথায় যাবে’? বলেই বুঝলাম ভুল হলো। কোথায় আর যাবেন! উপরে উদার আকাশ বা পিচ ঢালা রাস্তায় তো কোনো ঘর নেই। সে তো আমি জানিই!

সবচেয়ে বড় রাতের একটি আজ। জমাট অন্ধকার। কিছুক্ষণ ডেকে শিয়ালরা ক্লান্ত। শুধু নষ্ট ঘড়িটি সচল আছে টিকটক শব্দে। থেমে থাকা পৃথিবী। মাঝ পুকুরে হঠাৎ টুপ করে শব্দ হয়। কিছু একটা ডুবে গেল যেন।

কী পার্থক্য ইটের টুকরো আর বালু কণায়?

Silvia Mim:
Related Post