X

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’, চ্যালেঞ্জ নিতে পারবে কি বাংলাদেশ?

প্ল্যাটফর্ম নিউজ ডেস্ক, ১৮ মে ২০২০, সোমবার

করোনা সংকটকালীন এমন এক সময়ে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, যখন বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে করোনাভাইরাস মহামারী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পুরো সক্ষমতাই বলতে গেলে লড়ছে মহামারি সামলাতে।

‘আম্পান’ বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দূরে এবং উওর-পশ্চিমে এগিয়ে আসায় সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যালোচনা অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টির গতি ও দিক ঠিক থাকলে ১৯ মে দিবাগত রাতে উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানতে পারে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ বলছেন, ঘুর্ণিঝড়ের হাত থেকে প্রাণহানী ঠেকানোর একটি প্রধান উপায় হলো ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া। সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। যদিও আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা একটু কষ্টকর হবে। নারীদের জন্য এটা আরো কষ্টকর হবে, কারণ গাদাগাদি হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। মানুষ এবং গবাদিপশুর মৃত্যুহার কমাতে গেলে সাইক্লোন শেল্টারের কোন বিকল্প নেই। “যদি শেল্টারে আসার কারণে করোনাভাইরাস কোন ভাবে সংক্রমিত হয় বা ছড়ায় তাহলে ওই এলাকায় সংক্রমণের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে এটাও একটা ঝুঁকি।”

তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময় মানুষের মধ্যে ত্রাণ পৌঁছানো, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা সেটাও নতুন চ্যালেঞ্জ আনবে। কারণ, ঘূর্ণিঝড়টি এমন একটা সময় আসছে যখন একদিকে করোনাভাইরাস মহামারী চলছে, আর অন্যদিকে চলতি বছরের বাজেটেরও শেষ মুহূর্ত চলছে।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিম দিক অর্থাৎ সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চলে আঘাত হানার সময় ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০-৭০ কিলোমিটার বা তার উপরে থাকতে পারে। যদি ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার বা তার উপরে থাকে তার মানে হচ্ছে এটা বড় ধরণের একটা ঘূর্ণিঝড়। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় লোকজনকে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে বলা হয়। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত হওয়া ঘূণিঝড়গুলোর মধ্যে ১৯৭০ সালের ভোলা সাইক্লোনে প্রায় ৫ লাখ মানুষ মারা যায়, ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যায়, ২০০৭ সালে সিডর ঘূর্ণিঝড়টিতে ৩ হাজার ৪০৬ জন মারা যায়, ২০০৯ সালের ২৫শে মে আইলার আঘাতে মারা যায় ১৯০জন, ২০১৩ সালে মহাসেনে ১৮ জন মারা যায় আর এর পরে বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা কখনোই দুই সংখ্যার বেশি হয়নি এবং সেটি ২৫ এর উপরে যায়নি। অতীতের চেয়ে বাংলাদেশে এখন প্রাণহানির সংখ্যা কমে গেছে, ঘূর্ণিঝড়ে দুই ধরণের ক্ষতি হয় একটা হচ্ছে প্রাণহানি আরেকটা হচ্ছে ঘরবাড়ি ও গবাদিপশুর ক্ষতি। ঘূর্ণিঝড় সিডরের কারণে দুই লাখ ৮০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছিল। উপকূলীয় এলাকার বেশিরভাগ ঘর-বাড়ি কাঁচা হওয়ার কারণে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অধিকাংশই ভেঙ্গে পড়ে। আর গত বছর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানার আগে ২০ লাখের মতো মানুষকে নেওয়া হয়েছিল আশ্রয় কেন্দ্রে।

‘আম্পানের’ ক্ষয় ক্ষতি নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলছেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান যখন আঘাত হানবে তা অতি প্রবল হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। পূর্বের অভিজ্ঞতা বলে, এ ধরণের ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যথেষ্ট হয়। ঘরবাড়ি, গাছ-পালার ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার মতো অবস্থা তৈরি হতে পারে। তবে বাংলাদেশের কোন কোন জেলার উপর দিয়ে এই ঘূর্ণিঝড়টি বয়ে যেতে পারে সে বিষয়ে এখনো নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি নেয়া সম্পর্কে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে প্রস্তুতি হিসেবে এরইমধ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, উপকূলীয় জেলাগুলোর জেলা প্রশাসক, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ স্কাউটস এবং সিপিসি এর মধ্যে বৈঠক হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে প্রথম যে বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেয়া হয় সেটি হচ্ছে সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখা। তবে এবার যেহেতু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে তাই সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও প্রস্তুত রাখা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সবাইকে নিরাপদে রাখা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যেই কারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাবে তাদেরও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন যারা দুর্যোগের সময়ে কাজ করেন।

তিনি আরও বলেন, “এখন প্রিপারেশন স্টেজে আছি, পরে এক্সিকিউশনে যাবো, পরবর্তী সিগনালের অপেক্ষায় আছি।”

সূত্র: বিবিসি

Abdullah Al Maruf:
Related Post