X

করোনা পরিস্থিতিতেও দেশজুড়ে চালু রয়েছে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ

আজ ২৪শে জুন, ২০২০ ইং তারিখ বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে সারা বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকা দান কর্মসূচি চালু রয়েছে। এসময় তিনি যথাসময়ে টিকা দেয়ার মাধ্যমে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি আরো জানান, টিকাদান কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ভ্যাক্সিন ও অন্যান্য রসদ সরবরাহ করা হয়েছে। এদিকে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে যেসব শিশুরা টিকা গ্রহণ করতে পারে নি তাদেরকে এখন টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা হচ্ছে। যেসকল এলাকা লক-ডাউন রয়েছে, সেসকল এলাকাতে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্যে এই টিকা দান কর্মসূচি পরিচালিত হবে বলেও জানান তিনি। সেই সাথে, স্থানীয় মসজিদের মাইকের মাধ্যমে জনগণকে টিকা দান কর্মসূচির ব্যাপারে সচেতন করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মী থেকে শুরু করে স্থানীয় স্বাস্থ্য সেবায় কর্মরত সকল সদস্য এই টিকাদান কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করছে। এর পাশাপাশি, টিকা কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা সকল স্বাস্থ্যকর্মী ও সেবাগ্রহীতাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ পরিচালিত করার অনুরোধ করা হয়েছে।
তবে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্দেশিকা অনুসারেই এই কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে বলে তিনি অবহিত করেন।

উল্লেখ্য,ইউনিসেফের বক্তব্য অনুযায়ী, টিকাদান, পুষ্টি ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবার অভাবে বাংলাদেশে আগামী ছয় মাসে অতিরিক্ত ২৮০০০০ শিশুর মৃত্যু দেখতে পাবে। তাছাড়া তারা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হবার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রায় ৪.৫৯ লক্ষ শিশু ও মায়েদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

উল্লেখ্য, ইপিআই একটি বিশ্বব্যাপী কর্মসূচি যার মূল লক্ষ্য হলো সংক্রামক রোগ থেকে শিশু, মাতৃমৃত্যু ও পঙ্গুত্ব রোধ করা। এ কর্মসূচির উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠী হচ্ছে ০ থেকে ১৮ মাস বয়সী সব শিশু এবং ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী সন্তান ধারণক্ষম সব নারী। যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, মা ও নবজাতকের ধনুষ্টঙ্কার, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি, নিউমোকক্কাল নিউমোনিয়া, পোলিও মাইলাইটিস, হাম ও রুবেলা— এই ১০ রোগের বিরুদ্ধে নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের এ কার্যক্রমে সার্বিকভাবে সহায়তা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। শহর এলাকায় সরকারের কার্যক্রমে স্থানীয় এনজিও সম্পৃক্ত রয়েছে। ইপিআই কর্মসূচির মাধ্যমে সারা দেশে বিনা মূল্যে এ টিকাগুলো দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) একটি গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এ কর্মসূচির ফলেই দেশে মা ও শিশুমৃত্যুর হার কমানোর পাশাপাশি পঙ্গুত্ব রোধ করা সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে সম্প্রতি বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারনে টিকাদান কর্মসূচির পরিধি কিছুটা কমে যায়। যার ফলে টিকাপ্রাপ্তির হারে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

যেমন: দেশে করোনা ভাইরাসের আগে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় বিসিজি টিকাপ্রাপ্তির হার ছিলো ১০৪ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু প্রাদুর্ভাবের কারনে এপ্রিলের দিকে তা কমে গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫২ শতাংশে এবং মে মাসের দিকে তা একটু বেড়ে আবার ৬৬ দশমিক ৯ শতাংশ হয়। বর্তমানে সারাদেশেই টিকা প্রাপ্তির হার বাড়ানোর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী টিকাদান কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে।

Ashrafur Rahaman Mahadi:
Related Post