X

দেখিয়ে দিল স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা, মেডিকেল ভর্তি কার্যক্রম দু’ঘন্টা স্থগিত

দেখিয়ে দিল স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা, মেডিকেল ভর্তি কার্যক্রম দু’ঘন্টা স্থগিত



সাধারণ শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে আজ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় দিনের ভর্তি কার্যক্রম দু ঘন্টা বন্ধ ছিল। পূর্ব নির্ধারিত ভর্তি কার্যক্রম সকাল ৮টায় শুরু হবার কথা থাকলেও ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকসহ সকাল সাতটার আগেই পুলিশী প্রহরায় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এ সংবাদ পেয়ে সাথে সাথে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নতুন গ্যালারী ১ এর সামনে সমবেত হয়। গ্যালারী ১ এ তখন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা অভিভাবক সহ ভর্তির জন্য অপেক্ষা করছিল। এসময় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের প্রায় ২০০ সাধারণ শিক্ষার্থী অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ মহোদয়কে অনুরোধ করে ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য। এর মধ্যেও ভর্তির কার্যক্রম শুরু করা হলে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা তীব্র প্রতিবাদ জানাতে থাকে, কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের বাদানুবাদ চলতে থাকা। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন চিকিৎসক সহ সকলের দাবী ছিল-অবিলম্বে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ এবং পরীক্ষা বাতিল করা হোক। এদিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ২০১৫-১৬ শিক্ষা বর্ষে ভর্তির প্রাথমিক তারিখ ছিল ২৯ সেপ্টেম্বর। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কথা ছড়িয়ে পড়ায় ভর্তির তারিখ পিছিয়ে ৪-৫ অক্টোবর করা হয়। কিন্তু ২৯ তারিখ সকালে কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই পূর্ববর্তী নোটিশ বাতিল করে কর্তৃপক্ষ পুনরায় ২৯ তারিখ ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার ঘোষণা দেয়। জানা যায়, চান্স প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কে আগের দিন রাতে ২৯ তারিখ সকালে ভর্তি হতে আসতে বলা হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের হলগুলোতে ভর্তি শুরু হয়েছে এ সংবাদ পৌঁছালে তারা তাৎক্ষণিকভাবে ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে এর প্রতিবাদ জানায়। এর ফলে কর্তৃপক্ষ ভর্তির কার্যক্রম তড়িঘড়ি করে বন্ধ করে দেন। উল্লেখ্য, এ ভর্তি কার্যক্রমে BMDC এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন ফর্ম দেয়া হয়নি। জানা গেছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে এই ফর্ম পূরণ করা হবে ১০ তারিখ।আজ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা পূনর্বার ভর্তির কার্যক্রমে বাঁধা দিলে অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষ মহোদয় শিক্ষার্থীদের নতুন গ্যালারী ১ এর বাইরে গিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিবাদ করতে বললে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নতুন গ্যালারি ১ এর স্টেজ এবং মাটিতে সবাই বসে পরে। এর ফলে ভর্তি প্রক্রিয়া ২ ঘন্টার জন্য বন্ধ ছিল। এসময় ক্যাম্পাসে বিপুল পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন ছিল, এক পর্যায়ে তারা গ্যালারিতে প্রবেশ করে এবং তাদের উপস্থিতিতে এর মাঝেই ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এসময় স্থানীয় সাংসদ হাজী সেলিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তারক্ষী এবং অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ এবং শিক্ষকদের সাথে কথা বলেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বক্তব্যঃ আন্দোলন এবং ভর্তি প্রক্রিয়া এক সাথে চলতে পারে না। বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা নতুন গ্যালারী ১ ও গ্যালারী ২ এর সামনে ব্যানার প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানব বন্ধন করে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে চিকিৎসকদের ইতিহাস গৌরবময় ইতিহাস। দেশের সেরা মেধাবীরা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নের সুযোগ পায়। সেখানে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, অর্থ-বিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তি, ক্ষমতার কোন স্থান নেই, মেধাই আসল। কিন্তু গত ১৮ সেপ্টেম্বর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ব্যাপক প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যায় এবং এ অভিযোগে চিকিৎসকসহ অন্তত ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে ২০১৫-১৬ ব্যাচের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই প্রশ্ন পেয়ে চান্স পাওয়া। এর আগে ২০০৬ সালেও অনুরূপ অভিযোগ পাওয়া যায় এবং তৎকালীন সরকার এ ব্যাপারটিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে নি। বর্তমানে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায়, তরুণ প্রজন্ম কখনোই এই দুর্নীতি মেনে নেবে না। অপর আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান এই মেডিকেল কলেজ। স্বাধীনতার পর, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজ। এই ঐতিহ্যবাহী মিটফোর্ড হাসপাতালে কাজ করেছেন শহীদ চিকিৎসক ডা আলীম চৌধুরী। সে প্রতিষ্ঠানকে আমরা কোন ভাবেই কলংকিত হতে দেব না, টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন কেনা শিক্ষার্থীরা কোন ভাবেই এই মেডিকেলে পড়তে পারবে না। কোন ভাবেই এদের সুবিধা দেয়া যাবে না। এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, এটা চিকিৎসকদের আন্দোলন, এটা শিক্ষককদের আন্দোলন। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাবী জানাচ্ছি,যে কোন মূল্যে সারা বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজগুলোতে ২০১৫-১৬ ব্যাচের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত এবং পরীক্ষা বাতিল করে একটি স্বচ্ছ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মেধাবীদের সুযোগ করা দেয়া হোক।। এদিকে আজ শহীদ মিনারে সাধারণ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের চলমান প্রতিবাদ কার্যক্রম থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের সূত্র থেকে জানা গেছে প্রত্যেক মেডিকেল কলেজের কর্তৃপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে তড়িঘড়ি করে যেভাবেই হোক শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যাপারে। এমন কি প্রয়োজনে মেডিকেল কলেজের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রেখে বা লুকিয়ে ভর্তির কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলা হচ্ছে।

ডক্টরস ডেস্ক: bddoctorsplatform@gmail.com

View Comments (8)

  • Curious mind wants to know... Ei batch e powerful baap ma gula kara?? Jader jonno eto ghota kore admission hochhe... Police pahara dichhe....

  • ভর্তি রুখা হয়তোবা যাবে না কারন দেশের ম্যাজরিটি অংশই পচে গেছে...রুই কাতলাগণের কাছে এই আন্দোলন নিছকই হাস্যতুল্য...
    কিন্তু আমি আন্দোলন কারীদের বিশেষকরে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের স্যালুট জানাই.....

  • উচ্চশিক্ষাকে আমলাতনন্ত্রের হাত থেকে বাঁচাও
    মেডিকেল উচ্চশিক্ষাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে মুক্ত কর
    বন্ধুরা, আমরা কি ভেবে দেখেছি কেন মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় বারবার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। প্রশ্নের এত নিম্নমান!!
    কই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে এরকম প্রশ্ন ওঠে না!
    সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় অনেক নেমে গেছে তারপরও এরকম অভিযোগ উঠলে প্রতিকার হয় চটজলদি।
    যে কোন দেশের বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান শাখা চিকিৎস্যা বিজ্ঞান।স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমাদের দেশে চিকিৎস্যা বিজ্ঞানে মেধাবীদের শ্রেষ্ঠাংশ গিয়েছে অথচ তারা আজ সব চাইতে অবহেলিত, আমলাতন্ত্রের হাতে বন্ধী।
    আমি বুঝতে পারি না— কেন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজগুলোকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকাল অনুষদের অন্তর্গত ধরা হয়? ছাত্র-ভর্তি, শিক্ষক- নিয়োগ-প্রমোশনসহ প্রায় সব কিছু মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বাধীন, অথচ নামে বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার এমন অপমান আমরা সহ্য করছি কিভাবে? প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে একটি মেডিকেল কলেজ সত্যিকার অর্থে মেডিকাল অনুষদ হিসেবে থাকা উচিত, পৃথিবীর প্রত্যেকটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমনটি আছে। গবেষণার সবার্থে সেটা করা হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বীয় বিষয়গুলো যেমন তাতে লাভবান হয় তেমনি সমৃদ্ধ হয় মেডিকেলসহ অন্যান্য ব্যবহারিক বিষয়গুলো। আর যাই হোক বদলিযোগ্য চাকরি রেখে, মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বাধীন করে , তত্ত্বীয় বিষয়গুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোন ভাল ডাক্তার করা সম্ভব নয়; মোসাহেব ব্যবসায়ী সৃষ্টি ........
    প্রায় একইভাবে গণিত, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা প্রভৃতি প্রধান বিষরগুলো কম গুরুত্ব দিয়ে, সেগুলো যারা পড়ান তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষক ভেবে, কলা থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন করে দেশের জন্য ভাল প্রকৌশলী তৈরী সম্ভব নয়।-

Related Post