X

গাইনি বিশেষজ্ঞের বিরুদ্ধে মানহানিকর মন্তব্যের অভিযোগ, অপপ্রচার বলে দাবি করলেন ডাক্তার

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৪ জুলাই ২০২০, মঙ্গলবার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে স্কয়ার হাসপাতালের একজন গাইনোকলজিস্ট এর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ! গত ১২ জুলাই রবিবার ২১ বছর বয়সী আফসারা তাসনিম বুশরা নামক একজন নারী তার ফেসবুক পোস্টে স্কয়ার হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কাজী শামসুন নাহারের বিরুদ্ধে মানহানিকর মন্তব্যের অভিযোগ আনেন।

গত ১১ জুলাই (শনিবার) ২১ বছর বয়সী বুশরা তার যৌনাঙ্গের “ভ্যাজাইনিসমাস” নামক অসুস্থতার জন্য স্কয়ার হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কাজী শামসুন নাহারের কাছে যান। উল্লেখ্য, ভ্যাজাইনিসমাস এমন একটি রোগ যাতে নারীর যৌনাঙ্গে যেকোন ধরনের পেনেট্রেশন অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হয়। রোগটি পরীক্ষার এক পর্যায়ে চিকিৎসক তাকে “আপনাকে ধর্ষণ করা দরকার” এমনটি মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছেন বুশরা। তিনি বলেন,

“ডাক্তার কাজী শামসুন নাহার, আপনি ডাক্তার নামের কলঙ্ক। আপনি পৃথিবীর সমস্ত ডাক্তারদের জন্য কলঙ্কসরূপ, যারা অন্যদের সেবা দিয়ে চলেছে। আপনি আমার রোগ নির্ণয়ের সময় আমাকে ধর্ষণ করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন, যা সমস্ত মানুষের জন্য অপমানজনক। আমার আপত্তি এই বিশেষ চিকিৎসককে নিয়ে, স্কয়ার হাসপাতালের প্রতি নয়। হাসপাতালের সুনামের প্রতি আমার কোনো সন্দেহ নেই।
এই মহিলা (ডা. কাজী শামসুন নাহার) আমার পেশির পরীক্ষা করছিলেন, যা ছিল অত্যন্ত কষ্টদায়ক। আমি তাকে বলেছিলাম, আমি ব্যথা পাচ্ছি। পরীক্ষার পর তিনি আমার সামনে বসলেন এবং আমার জীবনে কারও মুখ থেকে শোনা সবচেয়ে ভয়াবহ কথাগুলো আমি শুনলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে আমার স্বাস্থ্যের উদ্বেগজনক বিষয়টি সম্পর্কে কারও সাথে কথা বলা উচিত নয়, এটা জানা সত্ত্বেও যে ভ্যাজাইনিসমাস ভবিষ্যতে আমার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে চলেছে। তার মানে তিনি যৌনশিক্ষার চূড়ান্ত বিরোধী। উনি বললেন, আধুনিকতাবাদের নামে এই বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করবেন না। আমি তার পরবর্তী কথাটি আমি উদ্ধৃতিতে রেখে দেব, কারণ এটি আমার কাছে ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষায় প্রকাশ করার মানসিকতা নেই।
উনি বলেন, “এইসব মেয়েদের হাসব্যান্ড একটু জংলী টাইপের হওয়া উচিত, যাতে তারা একবারে রেপ করে ফেলে। কারণ এই মেয়েরা পারমিশন দিতে চায় না, যেহেতু ওদের সেক্স এর সময় ব্যথা লাগে। সো, একবারে রেপ করে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আমি চোখে জল নিয়ে কক্ষটি ছেড়ে বের হয়ে এলাম। এ সময় আমি খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, শুধু এই কথাটি বলার জন্য আমি কাউকে টাকা দিয়েছি। আমি খুবই আঘাত পেয়েছি, ভেঙে পড়েছি এবং নিজেকে অসহায় মনে হয়েছে।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে উভয় পক্ষের মত

এই অভিযোগের বিপরীতে অফিসিয়াল বার্তা দিয়েছেন ডা. কাজী শামসুন নাহার। উক্ত অভিযোগকে মনগড়া অনৈতিক ব্যাখ্যামূলক অপপ্রচার আখ্যায়িত করে তিনি জানান যে চিকিৎসা শাস্ত্রের নিয়ম বহির্ভূত কোন কথা তিনি বলেন নি। উক্ত রোগীর পরীক্ষা এবং কাউন্সেলিং চলাকালে রোগী কিংবা রোগীর মায়ের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগই ছিল না। বিবৃতিতে তিনি আরো উল্লেখ করেন,

“গত শনিবার (১১ জুলাই ২০২০) আমার কর্মস্থল স্কয়ার হাসপাতালের বর্হিবিভাগের আফসানা তাসনিম বুশরা নামের ২১ বছর বয়সের এক রোগী তার যৌনাঙ্গের ভ্যাজাইনিসমাস সংক্রান্ত কিছু সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসেন। রোগীর সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে তার সাথে আলোচনার ভিত্তিতে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য এবং রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বোঝার জন্য খুবই যুক্তিসংগত এবং প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন করি। সংগত কারণেই এখানে তা প্রকাশ করা সম্ভব নয়, যা মেডিকেল এথিক্স বর্হিভূত।

রোগীর শারীরিক অবস্থা বোঝার জন্য (যা রোগ নির্ণয়ের জন্য আবশ্যক) অনুমতি সাপেক্ষে তার মায়ের উপস্থিতিতে শারীরিক পরীক্ষা করা হয় এবং সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। যার প্রতিটি পদক্ষেপই চিকিৎসা সংক্রান্ত নীতিমালার অর্ন্তভূক্ত।
কনসালটেন্সি চলাকালীন সময়ে রোগী এবং তার মায়ের সাথে কথোপকথনে কোনো প্রকার অসঙ্গতি ওনারা পেয়েছেন কিনা তা আমার কাছে পরিলক্ষিত হয় নি। তাছাড়া এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে ওনারা আমার বা হসপিটাল কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো প্রকার অভিযোগও করেননি। খুব সাধারণ ভাবেই উনারা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন বলেই আমার বিশ্বাস।

পরবর্তীতে আমি গত ১২ জুলাই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জানতে পারি যে, উক্ত রোগী আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মনগড়া একটি অনৈতিক ব্যাখ্যামূলক অপপ্রচার চালাচ্ছেন, যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়।

আমি একজন অব্স ও গাইনী বিশেষজ্ঞ হিসেবে ২২ বছর যাবত নিষ্ঠার সাথে অসংখ্য রোগীর চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছি। আমার বক্তব্যে আফসারা তাসনিম বুশরার যদি মনে হয়ে থাকে যে আমি চিকিৎসাগত কোনো প্রকার অসদাচারণ করেছি তাহলে তিনি অবশ্যই আমার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পূর্ণ অধিকার রাখেন। তা না করে তিনি আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এবং সামাজিকভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছেন যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়।”

এদিকে এ ঘটনায় পক্ষে বিপক্ষে পাওয়া যাচ্ছে অসংখ্য মতামত! দ্যা ডেইলি স্টার পত্রিকার ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক শরিফুল হাসান ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। তার মতে, প্রকৃত ঘটনা না জেনে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া দেখানো সম্পূর্ণ অনুচিত। তিনি বলেন,

“কাল রাত থেকে দেখছি স্কয়ার হাসপাতালের ডাক্তার কাজী শামছুন নাহারকে নিয়ে লেখা হচ্ছে। কারণ কেউ একজন অভিযোগ দিয়েছে। তাতেই ক্ষুব্ধ হয়েছে একদল নারী। স্ট্যাটাসটা দেখে ক্ষুব্ধ হওয়ারই কথা। আপনাদের প্রতি সম্মান জানাচ্ছি। কিন্তু আসল ঘটনা কী আমরা কেউ কী জানি? ঘটনার সময় ফেসবুক বাসিন্দাদের কেউ কী ছিলেন সেখানে? তা হলে কীসের ভিত্তিতে একজন ডাক্তারকে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই বলছি আমরা? হ্যাঁ, স্ট্যাটাসটা যদি শতভাগ সত্য হয়, আমিও এই ডাক্তারের সমালোচনা করবো। কিন্তু আপনারা যারা সমালোচনা করছেন তারা কেউ কী কাজী শামছুন নাহারকে চেনেন?

আমার স্ত্রীর ডাক্তার হওয়ার সুবাদে আমি কাজী শামছুন নাহারকে চিনি দশ বছর ধরে। আমার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর আমরা বাংলাদেশের অনেক গাইনি ডাক্তারের কাছে গিয়েছি। দিনের পর দিন আমি হাসপাতালে ছিলাম। অনেকদিন হাসপাতালের বারান্দায় শুয়েই রাত কেটেছে। বাংলাদেশের ডাক্তারদের প্রতি আমার তখন মনটা বিষিয়ে উঠেছিল। ওই জটিল সময় আমি অনেকের কাছ থেকে শুনে স্কয়ারের কাজী শামসুন নাহারের কাছে যাই। বাংলা‌দে‌শের ডাক্তারদের সম্পর্ক‌ে আমার ধারণা তিনি পু‌রোপু‌রি পা‌ল্টে দি‌য়েছিলেন। অন্য কার কী অভিজ্ঞতা আমি জানি না আমাদের কাছে তি‌নি ফে‌রেশতা। এরপর গত প্রায় পাঁচ বছরে আমি আমার প‌রি‌চিত বন্ধু, ঘ‌নিষ্ঠ বড় ভাই সবাইকে কাজী শামছুন নাহারের কাছে যেতে ব‌লে‌ছি। প্রত্যেকেই আমার মতো বলেছে, অসাধারণ একজন মানুষ। তিনি কেমন ডাক্তার সেটা হয়তো চিকিৎসা শাস্ত্রের লোকের ভালো বলতে পারবে কিন্তু আমার কাছে তিনি একজন অসম্ভব মান‌বিক এবং কেয়া‌রিং মানুষ। এমন ডাক্তার আমি আর কখনো পাই নি। বেশিরভাগ সময় তিনি কোন কোন রোগীকে এক ঘন্টা ধরেও দেখেছেন, কথা বলেছেন। না কোন চেনা জানা, পাওয়ার কিছুই লাগে না, সব রোগীদের জন্য তিনি একইভাবে দরদী। কাজী শামছুন নাহারকে যারা দেখিয়েছে তাদের যে কারও সাথে কথা বললেই আপনারা জানতে পারবেন এ বিষয়ে।

আমি কাজী শামছুন নাহারের সাথে কথা বলেছি, একজন সাংবাদিকের মতো তদন্ত করার চেষ্টা করেছি। পুরো আলাপের পর আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, ফেসবুকে যা দেখেছেন সেটা একটা বিকৃত ব্যাখা কিংবা মেয়েটার বোঝার ভুল।”

Platform:
Related Post