X

কোভিড-১৯ এর জিন রহস্য উন্মোচনে তৈরি হলো নতুন সম্ভাবনা

প্ল্যাটফর্ম নিউজ,
১৩ই মে, ২০২০, বুধবার

সম্প্রতি চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠানের অনুজীববিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহার নেতৃত্বে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ঢাকার গবেষণাগারে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ করছে। ১২ই মে (মঙ্গলবার) প্রতিষ্ঠানটির একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এরই মধ্যে নতুন কোভিড-১৯ রোগের ভাইরাসটির জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করা হয়েছে এবং এর তথ্য-উপাত্ত গ্লোবাল জিনোম ডেটাবেইজে(জিআইএসএআইডি) জমা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তিনি আরও বলেন- “সাধারণত ভাইরাসের সিকোয়েন্সিং করা কিছুটা দুঃসাধ্য, সেখানে নভেল করোনাভাইরাসের মতো একটি সংক্রমণশীল আর এন এ ভাইরাসের সিকোয়েন্সিং করা খুবই কঠিন।”

জিনোম কি? জিনোম সিকোয়েন্সিং কিভাবে সাহায্য করতে পারে কোভিড-১৯ দমনে?

জিনোম হলো প্রাণী বা উদ্ভিদের জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের বিন্যাস বা নকশা। আর কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদের জিনোমে নিউক্লিওটাইডগুলো কীভাবে বিন্যস্ত আছে তা লিপিবদ্ধ করাইকে বলে জিনোম সিকোয়েন্সিং। এই নকশার ওপরই নির্ভর করে সেই প্রাণী বা উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য। প্রাণীটি যদি DNA ভিত্তিক হয় (যেমন মানুষ) তাহলে DNA সিকোয়েন্সিং এবং RNA ভিত্তিক হলে RNA সিকোয়েন্সিং। করোনা একটি RNA ভাইরাস। এর মাঝে প্রায় ৩০ হাজার বেইজ পেয়ার আছে অর্থাৎ জেনেটিক কোডের ৩০ হাজার অক্ষর আছে। এই ৩০ হাজার কোড অক্ষরের মাঝেই লেখা আছে ভাইরাসটি কি করে ছড়ায়, আক্রান্ত করে, বংশ বৃদ্ধি করে, রোগ তৈরি করে।

বিজ্ঞানীরা ভাইরাসটিকে নিষ্ক্রিয় করে মেটাজিনোমিক সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কাজটি সম্পন্ন করেছে। তারা বাংলাদেশের আরও কিছু স্থানের নমুনা থেকে আরও কিছু ভাইরাসের সিকোয়েন্সিং করবে যাতে ভাইরাসটির উৎপত্তি, গতি প্রকৃতি বুঝতে ও প্রতিরোধের উপায় খুঁজে বের করতে সুবিধা হয়।

ড. সেঁজুতি সাহার বাবা, “চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন” এর নির্বাহী পরিচালক ড. সমীর কুমার সাহা বলেন,
“জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের এর ফলে আমরা জানতে পারব বাংলাদেশের ভাইরাসটির মোকাবেলায় কোন ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশে বসে সিকোয়েন্সিংটা করেছে তাই বাংলাদেশে এই ভাইরাসের আরও সিকোয়েন্সিং করা যাবে এবং আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে আরও জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হবে। এতে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন বা কোন ওষুধ কতটা কাজ করবে তা বুঝা যাবে। তাছাড়া বাংলাদেশে যে ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে তার সঙ্গে রাশিয়া ও সৌদি আরবের ভাইরাসের মিল পাওয়া গেছে। কাজেই আমাদের দেশে কয় ধরনের ভাইরাস এসেছে এবং সেগুলোর ওপর কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে সেটা বুঝতে গেলে অনেক বেশি নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। তাহলে এটার একটা তুলনামূলক চিত্র পাওয়া যাবে।” যত বেশি সিকোয়েন্সিং করা সম্ভব হবে তত তাড়াতাড়ি ভাইরাসটির প্রকৃতি ও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর,আইইডিসিআর, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং চ্যান জুকারবার্গ বায়োহাব/ইনিশিয়েটিভ এই বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা দিবে।”

সম্প্রতি ভারতের দুই গবেষক বিভিন্ন দেশের নমুনা পরীক্ষা করে বলেছেন, “নতুন করোনাভাইরাস চীনে মানবদেহে সংক্রমণ ঘটানোর পর এক ডজনের বেশি বার রূপ বদলেছে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এম আই এস এর অধীনে সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মারুফুর রাহমান অপু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, “চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের শ্রদ্ধেয় ড. সমীর সাহা ও ড. সেঁজুতি সাহাকে অশেষ ধন্যবাদ। তাঁরা কাজটি শুরু করে আমাদের পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। জিনোম সিকোয়েন্স এর মাধ্যমে আমরা অনেক তথ্য জানতে পারবো।
যেমনঃ আমাদের দেশে ভাইরাসটির কতরকম ভ্যারিয়েন্ট আছে এবং কি কি ধরনের মিউটেশন আছে। এসব মিউটেশন এর কোনো ক্লিনিক্যাল গুরুত্ব আছে কিনা অর্থাৎ বেশি এগ্রেসিভ না কম এগ্রেসিভ, সামনে যেসব ভ্যাকসিন আসছে সেগুলো কেমন কাজ করবে।
মিউটেশন দেখে মিউটেশন রেট বিবেচনায় দেশে ভাইরাসটি কি পরিমাণে ছড়িয়েছে এবং প্রকৃত রোগীর সংখ্যা কত হতে পারে তার অনুমান করা সম্ভব হবে। এদেশে ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে কিনা তাও জানা যাবে।
আমাদের দেশে করোনাভাইরাস এর জিনোম সিকয়েন্সিং নিয়ে আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অধিদপ্তরের এমআইএস শাখাধীন সেন্টার ফর মেডিকেল বায়োটেকনোলজিও কাজ করছে। আরও কিছু স্যাম্পল থেকে সিকোয়েন্স বের করার জন্য। কাজটি শ্রমসাধ্য ও ব্যয় অনেক। তবে আশা করি দ্রুতই আমরা আরও কিছু সিকোয়েন্স গ্লোবাল ডাটাবেজে জমা দিতে পারবো এবং সিকোয়েন্সের বায়োইনফরমেটিক এনালাইসিসের মাধ্যমে জেনেটিক এপিডমিওলজির অনেক তথ্য জানতে পারবো৷
প্রকৃত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এবং দক্ষতা মূল্যায়িত হলে বাংলাদেশে সব ধরনের টেকনিক্যাল কাজই করা সম্ভব।”

সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের (SARS CoV 2) প্রায় সাড়ে তিন হাজার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে। এছাড়া আরো অনেক গুলো প্রক্রিয়াধীন আছে যা কেন্দ্রীয় ডেটাবেইজে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলভিয়া মীম

হৃদিতা রোশনী:
Related Post