X

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আশঙ্কাজনক গর্ভবতী মায়ের রাতভর সফল অস্ত্রোপচার

১৫ ডিসেম্বর ২০১৯

১২ ডিসেম্বর ২০১৯, রাত আনুমানিক ১১টা। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক গর্ভবতী মা আসেন। তিনি প্রেগন্যান্সির ৩৮ সপ্তাহে ছিলেন। উল্লেখ্য, তার ইতোপূর্বে দুইটি কন্যাসন্তান সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে জন্ম নেয়।

দায়িত্বরত ইউনিট-৩ এর ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, তিনি যখন হাসপাতালে আসেন তখন তার ডেলিভারির ব্যথা তীব্র। পরীক্ষা করে দেখা যায়, জরায়ুর মুখ সম্পূর্ণ খুলে গিয়ে বাচ্চার মাথা অনেক নিচে নেমে এসেছে। উল্লেখ্য আগের দুইটি সিজারিয়ান ডেলিভারি থাকলে নরমাল ডেলিভারি ঝুঁকিপূর্ণ, তবে অসম্ভব নয়। তিনি জানান এই ভদ্রমহিলা এসেছিলেন শক্ এ, অর্থাৎ পালস অনেক বেশি এবং রক্তচাপ কম।

কালবিলম্ব না করে রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হল এবং সেই সাথে রোগীর স্বামীকে সবকিছু জানানো হল। রোগীর রক্তের গ্রুপ AB +ve যা অত্যন্ত দূর্লভ। সবরকম ঝুঁকির কথা বলে রক্তের জন্য তাগাদা দিয়ে অবেদনবিদ তথা এনেস্থেসিয়োলজিস্টকে ফোন করা হলে তিনিও মুহূর্তে চলে আসেন।

এসময় রোগীর যোনীপথে তাজা রক্ত আসল, ক্যাথেটার করে দেখা যায় প্রস্রাবের বদলে রক্ত আসছে। অর্থাৎ রোগীর জরায়ু ও মুত্রথলি দুটোই ফেটে গেছে। জরায়ু ফেটে গেলে বাচ্চা মারা যাবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে, কারণ মায়ের জরায়ু থেকেই বাচ্চা নাড়ীর মাধ্যমে অক্সিজেন পায়। অবেদনবিদ কালক্ষেপণ না করে রোগীকে অবশ করলেন এবং যথাসম্ভব দ্রুত মায়ের পেট কেটে ভেতরে দেখা যায় জরায়ু ফেটে বিরাট রক্তজমাট হয়ে আছে, অতঃপর তার নিচ থেকে বাচ্চাকে বের করা হয়। বাচ্চাটি সুস্থসবল ভাবেই জন্মগ্রহণ করে।

এরপর শুরু হয় মায়ের জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ। গাইনী রেসিডেন্ট সার্জন ডা. আয়েশা পারভীনের ভাষায়, জরায়ু আর মূত্রথলি এমন করে চিরে গিয়েছিল যে, কোন অঙ্গটা কি বোঝার উপায় ছিল না। তার সাথে চলছিল অবিরাম রক্তক্ষরণ। সার্জারীর রেসিডেন্ট সার্জন ডা. আরমান, কনসালটেন্ট ডা. নাজনীন নাহার এবং ইউনিট হেড প্রফেসর মুনিরা ফেরদৌসীও আসলেন। সকলের অক্লান্ত পরিশ্রমে টানা সাড়ে ছয় ঘন্টার চেষ্টায় অবশেষে জরায়ু ফেলে মুত্রথলি সেলাই করে রক্তপাত বন্ধ করতে সক্ষম হন চিকিৎসকগণ।

রোগী ও নবজাতকের সাথে ডা. আয়েশা সিদ্দিকা

দীর্ঘসময়ের এই জটিল অপারেশনে রোগীর অনেক সমস্যা দেখা যায়, তবে তিনি অপারেশনের পর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। রাত সাড়ে এগারোটা থেকে ভোর সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত দুটি জীবন বাঁচানোর যে যুদ্ধ চিকিৎসকগণ করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়!

তথ্য সূত্রে: ডা. আয়েশা সিদ্দিকা
স্টাফ রিপোর্টার/সায়েদা নাফিসা ইসলাম

Platform:
Related Post