X

হেলথ ক্যাডারঃ অফিসে যোগদানের পর, আপনার করনীয় সম্পর্কে টিপস

‘হেলথ ক্যাডার’কে ‘ক্যাডার’ বানানঃ

ডাঃ তাহসিনা আফরিন (CMC, 46th . 2003-2004)
সহকারী সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
৩৩ বিসিএস ব্যাচ

একটি বহুল প্রচারিত বিজ্ঞাপনের ভাষা হল, “দুধে হরলিক্স মেশান, দুধের শক্তি বাড়ান!!” নিতান্তই চটকদার বিজ্ঞাপন!! দুধ এমনিতেই একটি শক্তিশালি খাবার, এতে হরলিক্সের গমটুকু অর্নামেন্টালি মেশালে কিই বা শক্তি বাড়ে! কিন্তু এই নামেই হরলিক্স বিক্রি বাড়ছে!

একই রকম ভাবে হেলথ ক্যাডার হচ্ছে একটা শক্তিশালী কমিউনিটি। সরকারের অন্যতম গুরুত্বপুর্ন এবং সফল পেশাজীবী ক্যাডার। কিন্তু এতে ‘ক্যাডার সুলভ’ কিছু অর্নামেন্ট এর অভাবে এর শক্তি বাড়ছে না!! আমার হেলথ ক্যাডারে নয় মাস চাকরির অভিজ্ঞতা, জেনারেল ক্যাডারে বর্তমান চাকরি, ডাক্তারদের স্পেশাল ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্স এবং জেনারেলদের জন্য পিএটিসির ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্স দুটো সফল ভাবে শেষ করার আলোকে – অর্জিত যতসামান্য জ্ঞান থেকে চলেন, কিছু পয়েন্ট আউট করি নতুন প্রজন্মের জন্য, কিভাবে ‘হেলথ ক্যাডারের শক্তি বাড়ানো যায়!!”
.
## প্রথমত, মাইন্ডসেট চেঞ্জ করুন বিসিএস পরীক্ষায় বসার সময়েই। পাস করার পর আপনার সামনে অনেক পথ খোলা ছিল, কিন্তু আপনি সরকারের ‘চাকর’ হওয়া উত্তম মনে করছেন তাই এখানে চাকরির পরীক্ষা দিতে চাইছেন। সুতরাং আপনি জানেন, বিসিএস মেধার টেস্ট না, আনুগত্যের টেস্ট। এখানে সরকার নিজের পক্ষের লোককে নিয়োগ তালিকায় রাখার জন্য কোটা রাখবে/ স্পেশাল সুবিধা দেবে/ হয়ত কিছু অনিয়মের গুজবও শুনতে পারেন! – ধরে নিতে হবে এটাই স্বাভাবিক। আপনি মানেন, এখানে আর সব ক্যাডার যদি সিয়েরা লিওনের রাজার বউয়ের নাম মুখস্ত করে পরীক্ষা দেয়, আপনাকেও তাই দিতে হবে। ডাক্তারদের পৃথক সিলেবাস, ডাক্তারদের টেকনিক্যাল জ্ঞানে নাম্বার বেশি দেয়া … এসব ফাউ আলাপ আপনি যৌক্তিক মনে করেন, কিন্তু যদ্দিন ‘হেলথ’ আলাদা ক্যাডার না হচ্ছে, তদ্দিন – কর্তার ইচ্ছায় কর্ম!!
.
## দ্বিতীয়ত, আপনি অনেক ব্রিলিয়ান্ট, তাই আপনার গ্রামে – উপজেলায় যাওয়া উচিত না, উপকার করতে যেয়ে পেশাগত বিপদে পড়া উচিত না, আপনার থাকার জায়গা এই রকম ওই রকম হওয়া উচিত – এসব যৌক্তিক দাবিকে ‘অধিকার’ হিসেবে ভাবা বাদ দেন। এগুলো আপনি ‘ক্যাডার অফিসার’ হিসেবে দাবি করবেন, কিন্তু ‘ব্রিলিয়ান্ট’ ছিলেন, এই পয়েন্টে না।

তাহলে কি ডাক্তার’রা ব্রিলিয়ান্ট না?! অবশ্যই ব্রিলিয়ান্ট। কিন্তু আমাদের ব্রেনের বিকাশ ওই ‘মেডিক্যাল’ কেন্দ্রিকই !! আমাদের ৮০% সহপাঠী মুখ গুঁজে পড়া আর পাস করার বাইরে কোনদিন গান গায়নি, নাচে নি, বক্তৃতা দেয় নি, নাটক করে নি, রাজনিতি করে নি, সামাজিক সংগঠন করে নি, অনেকটাই জন বিমুখ। অথচ, একজন তথাকথিত ‘ক্যাডার অফিসার’ থেকে সরকার আশা করেন, আপনি মাইক ধরিয়ে দিলেই দুই লাইন গেয়ে ফেলবেন! ঘঙ্ঘুর পরিয়ে দিলেই নেচে ফেলবেন! মঞ্চে উঠিয়ে দিলে সামজ বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও ‘রকেট সাইন্স’ নিয়ে দুই ঘণ্টা বকবক করতে পারবেন!! ডাক্তাররা ‘ব্রিলিয়ান্স’ এর মর্যাদা পেতে চাইলে রেজিস্ট্রেশন পরীক্ষা দিয়ে বিদেশ যেতে পারেন। ব্রিটিশ সরকার এদেশে কেবল মেধাবীদের জন্য ‘ক্যাডার তন্ত্র’ তৈরি করে নি। বরং এটা ‘মিডিওকার’দের টার্গেট করেই বানানো হয়েছিল।
.
## তৃতীয়ত, চাকরি পাবার পর গেজেট হবার আগ পর্যন্ত হইহই না করে, ‘ক্যাডার সার্ভিস’ সম্পর্কে কিছু জ্ঞান অর্জন করা জরুরি। আমি যখন চাকরিতে ঢুকি, জানতামই না আমার উপজেলায় আরও ২৬টি ক্যাডার অফিসার পোস্টেড আছেন। তারাও বাড়িঘর ছেড়েই, উপজেলায় পড়ে থাকেন। কেউ মাঠেঘাটে কৃষকের সাথে – কেউ জলে পানিতে জেলের সাথে – কেউ চোর ডাকাতের পিছে – কেউ স্থানীয় মন্ত্রীর আগমনের প্রস্তুতিতে দিবারাত্রি এক করছেন!! তাদের সবার কাছে আমার স্বার্থ আছে, আমার কাছে তাদের স্বার্থ আছে। আমি তাদের চিনিই না, কিভাবে ওদের থেকে সেবা আশা করবো! ওরা আমাকে চিনেই না কিভাবে আমাকে চেয়ার এগিয়ে দেবে?! আমি ভাবি, আমিই শুধু পরিশ্রম করি – ওরা কিছু করে না। তাহলে কিভাবে ওরা আমাকে বন্ধু ভাববে?!
.
## চতুর্থত, ‘ক্যাডার অফিসার’ এর পকেটে পয়সা নাই, কিন্তু শার্টটা ঝকঝকে থাকা চাই। এটা নিয়ে হাউকাউ-এর উপায় নাই, এটাই এই সার্ভিসের ধর্ম। আপনি ‘হেলথ ক্যাডার’, একটি সুদর্শন ক্যাডার। আপনার গোল গলার গেঞ্জি পরা যাবে না, অফিসে ব্যাগ প্যাক ঝুলিয়ে আসা যাবে না, ব্যাগের স্ট্রাপ কাঁধে ঝুলান যাবে না, শু –ভিন্ন অন্য কোন জুতা পরা হারাম হারাম হারাম!! আপনি এপ্রন পরিস্কার রাখবেন, হিজাব পরেন – ওড়না পরেন যাই পরেন, সেটা এপ্রনের নিচে আঁটসাঁট হবে। চুল বাঁধা থাকবে। সাজ সীমিত থাকবে। অফিসিয়াল আয়োজনে শাড়ি মেইন্টেইন করবেন। মোট কথা , চাকরির প্রথম দিন থেকেই আপনি টাইট ফিট ড্যাশিং হয়ে জয়েন করতে যাবেন। এবং রিটায়ার্মেন্ট এর দিন পর্যন্ত এটা ধরে রাখবেন।
.
## পঞ্চমত, অন্য ‘ক্যাডার’দের মান সম্মানের প্রধান কারণ, তারা পরস্পর পরস্পরকে সম্মান দেয়, অন্তত সম্মান দেখায়। অনেকটা একে অন্যের পিঠ চুলকে দেবার মত। এই প্রাক্টিস আমাদের নাই। আমরা একে অনেক সময় ‘তেল দেয়া’ ভাবি। অনেক সময় ‘আমি কাউরে পুঁছি না’ এই রকম ভাব ধরে থাকি। কিন্তু জেনারেল ক্যাডার হলে কি করত শুনেন –

১। চাকরির জয়েনিং দিনেই সবচেয়ে দামি ড্রেসটা পরে যাবেন। সবচেয়ে ফিটফাট হয়ে। বাপের পা ধরে, জামাইয়ের হাত ধরে, কোলে কাঁখে বাচ্চা ঝুলিয়ে না। রিক্সা, ট্যাক্সি, বাস ঠিক আছে। কিন্তু শেয়ারের সিএনজিতে চরবেন না। নেভার। যেতে হলে পেছনের সবগুলো সীট নিজের জন্য রিসার্ভ করে যাবেন। সবসময় এটা মানবেন। এতে এলাকায় দাম পাবেন। জয়েনিং এ সাথে একটা উপহার নিয়ে যাবেন বসের জন্য। বই, শো পিস, কলম – ইত্যাদি। ইহা তেল নয়, ইহা নর্মস।

২। আপনার গেটাপে বস ইম্প্রেসড হবেন, নিজেকে একা পরিচালিত করতে পারার ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হবেন, উপহার পেয়ে দয়ার্দ্র হবেন। এবার আপনি তাকে আপনার সুবিধা- অসুবিধা গুলো বলুন, উনি দেখবেন সাধ্যের বাইরে যেয়ে সেগুলো সমাধান করবেন। তিনি আপনাকে সে বেলা লাঞ্চ হোস্ট করবেন। এটা আদিখেত্যা না, এটাই নর্মস। এবং আপনি জয়েন করেছেন এই সম্মানে পরের দিন একটি ছোট মিটিং রাখবেন। সে মিটিং এ আপনাকে বাকি এলাকার গন্যমান্য, আপনার সহকর্মি, স্টাফদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে। ফুলের তোড়া দেয়া হবে। সেটা ছবি তুলে নিবেন। (পরে ফেসবুকে আপলোড দেবেন)। খুব সেয়ানা হলে লোকাল পত্রিকার সাংবাদিককে ডেকে নিয়েন, এক কাপ চা খাওয়াবেন, ছবিটা পাক্ষিক পত্রিকায় চলে আসুক!!

৩। পরিচয় পর্ব থেকেই আপনার প্রধান বস থেকে শুরু করে, দুই ব্যাচ সিনিয়র সবাই আপনার জন্য স্যার এবং ম্যাডাম। ব্যাচে সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার, আরএমও, এমওডিসি – সবাই স্যার। যদি স্টাফকে জিজ্ঞেস করেন ‘ইমরান ভাইয়া’ আউট ডোরে এসেছেন কিনা?! স্টাফটিও ‘ডাঃ ইমরান’কে ইমরান ভাইয়া-ই ভাববে। আপনি জিজ্ঞেস করবেন, ‘ইমরান স্যার এসেছেন?’ এবং বয়সে ছোট ডাক্তারকে সবসময় অন্যদের সামনে সম্বোধন করবেন ‘ডাঃ’ প্রিফিক্স লাগিয়ে।

নার্সরা ‘সিস্টার দীপালি’, ব্রাদাররা ‘ব্রাদার বিকাশ’। স্যাকমোরা ‘মিস্টার জসিম’, ‘মিজ সালেহা’। টেকনিশিয়ান/ অফিস সহকারী/ একাউন্ট্যান্টসরা ‘রফিক সাহেব’। … অফিস প্রেমিসে জয়েনিং এর দিন থেকেই সকল সংবোধন কেবলই ‘আপনি’। আপু – ভাইয়া- তুই- তুমি এসব বলা হারাম হারাম হারাম!! তারা সম্মান পাবে, আপনার গাম্ভির্য বুঝতে পারবে, কোন ফাপরামি করার সাহস পাবে না। এরপরেও যদি ভাই/আপু ডেকে বসে, বিনয়ের সাথে বলবেন, ভাই বাসায় এলে বলেন, অফিসে স্যার ডাকবেন। এটাই সরকারী নিয়ম।

৪। বেতনের কাজগুলোর জন্য পরদিন সোজা চলে যাবেন
উপজেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তার কাছে, ডাইরেক্ট উনার রুমে। চা খাবেন, গল্প করবেন কিছুটা। পরিচয় বাড়াবেন। দেখবেন উনার শশুর বাড়ি আর আপনার শশুর বাড়ি এক জায়গায়!! উনার কাছ থেকে জেনে নেবেন বেতন – একাউন্টস সক্রান্ত কাজ গুলো কি কি। এরপর অফিসে এসে একাউন্ট্যান্টকে নির্দেশ দেবেন কি করে দেবে। আপনি সব নিয়ম জানেন, সিএ অফিস ঘুরে এসেছেন জানলে সে সিধা হয়ে যাবে। তবুও তাকে মাঝে মাঝে এটা সেটা গিফট দেবেন। বখশিশ দেবেন। এটা ঘুশ না, এটাই স্টাফ পালার এবং হাতে রাখার নর্মস।

৫। দ্রুতই এক বিকেলে দেখা করবেন উপজেলা নির্বাহি অফিসারের সাথে। এডমিন ক্যাডার। এরা আলাপি, আপ্যায়নে ওস্তাদ, উপজেলার প্রসাশনিক অভিভাবক। বয়সে – ব্যাচে সিনিয়র হলে অবশ্যই স্যার বলবেন। বিনয়ী হবেন। পরিচয় বাড়াবেন, দেখবেন উনি আর আপনার বড় ভাই একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছিলেন! উনার থেকেই জেনে নেবেন, সপ্তাহের প্রতি ‘মঙ্গলবার’ উনারা ক্যাডার অফিসাররা এবং স্পাউজেরা মিলে টেনিস খেলেন – সাঁতার কাটেন – জিম করেন অথবা মাছ ধরেন। কথা দিয়ে আসেন, আপনিও যোগ দেবেন তাদের সাথে। সে বেলা চ্যাম্বার জলাঞ্জলি দেবেন। এটা মাস্ট মাস্ট মাস্ট। মেইন্টেইন করবেন না, তো আপনি মাইর খেলে কেউ আসবে না বাঁচাতে।

৬। দ্রুতই এক সন্ধ্যায় দেখা করেন উপজেলার এএসপির সাথে। পুলিশ ক্যাডার। না, সিনেমায় দেখা ডিপজলের মত পুলিশ না, বাংলাদেশ পুলিশে এখন কি পরিমাণ কোয়ালিফায়েড অফিসার জয়েন করেন, ভাবতেও পারবেন না। পরিচয় করে আসেন তার সাথে। ব্যাচে সিনিয়র হলে স্যার ডাকেন। দেখবেন তিনি হয়ত আপনার একই জেলার!! অথবা হলে একই পার্টি করতেন!! কত বিচিত্র এই দুনিয়া!!

৭। এবার দেখা করার পালা Health Engineering Department /পিডাবব্লিওডি ‘র ইঞ্জিনিয়ারের সাথে। আপনার কোয়ার্টার, যেখানে গরু চরে – ছাগল ঘুরে, সেটাকে মানুষ বানানোর দায়িত্ব উনার। গল্প করে আসেন, পরিচয় করে আসেন। দেখবেন উনি হয়ত আপনার কোন ডাক্তার বন্ধুর কাজিন!! তার গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথার প্রেস্ক্রিপশন দিয়েন। আর বলে আসবেন আপনার বাসার কাজটা যেন করে দেন। দরকার হলে ইউএনও স্যারের রেফারেন্স দিয়েন। এএসপির সাথে আপনার দোস্তি, সেসব নজরে আনবেন। ব্যাস, পরদিন আপনার বাসা মেরামতের কাজ শুরু!!

৮। এবার বিগ শটের পালা!! উপজেলা চেয়ারম্যান, এবং সম্ভব হলে এমপির সাথে দেখা করা। চেইতেন না!! এটাই নর্মস। আপনারই দেখা করা লাগবে, পরিচয় করা লাগবে। কেন?!!
কারণ আপনি সরকারের ‘চাকর’, জনতার ‘চাকর’; আর উনি উনি এইট পাস জুতা চোর হইতে পারেন, কিন্তু উনিই ভোটে নির্বাচিত ‘সরকার’ , জনতার প্রতিনিধি। আপনি তার কাছে এখানেই বাঁধা। স্যার বলবেন, খুব সমস্যা না হলে। এটাই নর্মস। দেখবেন এসব লোকাল রাজনীতিবিদ কি পরিমাণ খাতির করে আপনার। তারা আপন করতে জানেন, খেয়াল রাখতে জানেন। এদের থেকে দূরে থাকা কোন বুদ্ধিমানের কাজ না, এদের কাজের লোকের চিকিৎসা করে দেয়া অপমান না, এদের খাতির করা তেল দেয়া না। বরং ব্যাক্তিত্বের মধ্যে থেকে এটাই … নর্মস!!

৯। তাহলে আপনার বাসা বাড়ি মেরামত হয়ে গেলো, উপজেলার সবার সাথে জানা শোনা হয়ে গেলো, হেলথ কমপ্লেক্স এর সবার সাথে মিথথিস্ক্রিয়া হয়ে গেলো … আপনি অল সেট!! এবার শুধু নাক গুঁজে আউটডোর – ইনডোর করবেন?! জ্বি না।
অফিসে অনেক সাচিবিক কাজ হয়, জিনিস পত্র কেনা বেচা, নানা রকম ফান্ডের এলোটমেন্ট, অনেক রকম প্রোজেক্ট … । বসে সাথে এসব নিয়ে খোলামেলা আলাপ করবেন, উনাকে হেল্প করবেন এসব কাজে। বাড়তি হেল্প। বিনিময়ে আপনি জানবেন আপনার ‘অধিকার’, প্রাপ্যতা, সুবিধা গুলো। আপনিও জানবেন আউট ডোরের আপনার চেয়ার ভাঙ্গা থাকার কথা না। টেবল ময়লা থাকার কথা না। অফিসের সাপ্লাই কি কি আসে। কতটা আসে। কতটা কোথায় যায়। আপনি তখন সেভাবে নিজেরটা আদায় করে নিতে পারবেন।

১০। জানি আপনার পকেট তেমন গরম থাকবে না যদি এর পর আপনি একটা সৎ জীবন জাপন করেন। তবুও অকাতরে উপহার দেবেন, বখসিশ দেবেন, আর্থিক সাহায্য করবেন আপনার নিচের পদের স্টাফদের। এরাই আপনার রক্ষা কবচ, এরাই গুন গাইবে আপনার। ঔষধের স্যাম্পল আর কম্পানির গিফট গুলোর বিনিময়ে একটা বেকার ছেলে বা মেয়ে পালুন নিজের সাথে। যে আপনার রুমের বাইরে রোগীদের লাইন মেইন্টেইন করে দেবে। আপনি রুমে আসার আগে আপনার চেয়ার মুছে রাখবে। ফুট ফরমায়েশ খাটবে। সততা অনেক বড় ঢাল। যদি ডায়াগনস্টিক এর খাম ফিরিয়ে দেন, যদি এমআরদের অফার সবিনয়ে ফিরিয়ে দেন, যদি রোগী নিয়ে ব্যবসা না করেন – আপনি অশেষ সম্মান পাবেন। কেউ আপনার এক তিল অপমান করার কথা ভাবতেও পারবে না। আঘাত আপনার গায়ে আসার আগে তাদের পিঠে যাবে। তারা বুকে আগলে সামলাবে আপনাকে।

.
… বকবক শেষ!! যেভাবে বললাম, জলের মত ফকফক ভাবে হয়ত অনেক কিছুই হবে না, কিন্তু অধিকাংশই হবে। বিশ্বাস রাখুন, একদিন সবটাই হবে। সরকারী ডাক্তার যারা সুনাম সম্মান পেয়েছেন, তারা সবাই এসব নর্মসের কমবেশি পালন করে গেছে। ‘ক্যাডার’ হবার চর্চা একটা চলমান প্রক্রিয়া, চাকরি পেয়ে গেলেই তা নিশ্চিত হয়ে যায় না। দিনে দিনে নিজেকে পোক্ত করার চর্চা এটা। কঠিন কোন কাজ না, ইজ্জত দিলে ইজ্জত পাবেন – এই রকমের ডিল। বিনয় দিলে অনুগত পাবেন। নেতৃত্ব দিলে পাবেন শিষ্য। ডাক্তারি তো করবেনই, সেখানে পেশাগত উৎকর্ষতা সাধন তো করবেনই, একই সাথে ‘ক্যাডার’ হবার নর্মস গুলোও আয়ত্ব করুন। নিজেকে বৃত্তের বাইরে চিন্তা করতে শেখান, নিজেও কিছু নতুন নতুন পথ উদ্ভাবন করুন। ফেসবুকে প্রতিকূল পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা – কান্নাকাটি – তর্ক বিতর্ক না করে, পরিস্থিতিকেই নিজের দিকে নিয়ে আসুন। একজন ডাক্তার চাইলে কি না পারে!!
চলেন, ‘হেলথ সার্ভিস’এ ‘ক্যাডার সুলভ আচরণ’ মেশাই, ‘হেলথ ক্যাডার’ এর শক্তি বাড়াই!!

ওয়েব টিম:
Related Post