X

লাইফ ইন লকডাউন, ডে হান্ড্রেড এইটি টু

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৬ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

কেবল ক্রসফায়ার, মৃত্যুদণ্ড, দ্রুত গ্রেফতার, মোমবাতি প্রজ্বলন যথেষ্ট নয় ধর্ষণ বন্ধ করার জন্য। প্রয়োজন হলিস্টিক এপ্রোচ। দরকারে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা যেতে পারে। সে কমিটি সবকিছু নিয়ে সুপারিশ করবে যেন ভবিষ্যতে একটি ধর্ষণও না হয়। সে বৈবাহিক ধর্ষণ কিংবা আসুরিক ধর্ষণ।

সবকিছু নিয়ে আবার ভাবা উচিত। শিক্ষা, পরিবারের ভূমিকা, বক্তৃতা বা ওয়াজে কথাবার্তা, ফেসবুকে ফান পেজ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা, দ্রুত বিচার, প্রচলিত আইন, শাস্তি- সবকিছু নিয়েই।

ছবি – প্রতীকী

মোটা দাগে দেখলে এ দেশের নারীরা গণতান্ত্রিক রাজনীতিসহ সবকিছুতেই নেতৃস্থানীয়। এই যে দেশে এখন করোনা পরিস্থিতি- তারও নেতৃত্বে একজন নারী। প্রশাসন, বিচার বিভাগ, হাসপাতাল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য নারী কাজ করছেন। ক্লাসের ফলাফল বলেন বা বিসিএস- যোগ্যতাবলে এক দুই তিনে সবসময় নারী। কিন্তু খুব কী ভাগ্যের উন্নতি ঘটছে? উপজেলা পর্যায়ে বিশ বছর বয়সেই একজন নারী দুই তিন বাচ্চার মা হয়ে যাচ্ছেন। ঘরে ঘরে নারী নির্যাতন অসংখ্য। আর এসব এক দুই ঘটনা যে সামনে আসছে সেগুলো প্রকৃত দৃশ্যের কিছুই না। এদেশে মূল ধর্ষন হয় চোখ দিয়ে আর কথায়। বন্ধুমহলে অশ্লীল শব্দ বলা এখনো ‘স্মার্টনেস’। নারীর পোশাক নিয়ে প্রশ্ন তোলা বা ইউটেরাসকে নিজের সম্পত্তি মনে করা এখানে ‘যুক্তিবাদ’। জুনিয়র বা অধস্তন কোনো মেয়েকে জবরদস্তি প্রপোজ করা ‘পুরুষত্ব’। সুযোগের অভাবে ধর্ষক হয় নি বা ভদ্রবেশী ধর্ষক হিসেবে নিলে এ জাতির কম্বল লোম শূন্য।

সবার আগে শিক্ষার উপর জোর দেয়া প্রয়োজন। একজন মেয়েকে কারো অমুক তমুক ভাবার আগে ‘কেউ’ বলে ভাবতে পারার শিক্ষা পেতে হবে। আমরা সে জনপদের অংশ যে জনপদ নিয়ে তুলসীদাস বলে গেছেন ‘শুড়িখানা ভর্তি লোক। লোকজন গিয়ে গিয়ে মদ কিনছে, ওদিকে দুধওয়ালাকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধন্না দিতে হয় দুধ বেচার জন্য’। প্লেটো দুই আড়াই হাজার বছর আগে যে আদর্শ রাষ্ট্রের কল্পনা করে গেছেন সেখানে বলেছেন ‘যে রাষ্ট্র মেয়েদের শিক্ষিত করে না, প্রশিক্ষণ দেয় না, সে রাষ্ট্র সে লোকের মতো যে তার শুধু ডান হাতকেই কাজে লাগাতে শিখেছে’। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না করতে পারলে এক দুই অসুর মেরে জনপদ অসুর শূন্য করা যাবে না। অসুরের রক্ত ভূমিতে পড়া মাত্রই সেখানে নতুন অসুর জন্ম নিচ্ছে।

আসুরিক মানসিকতা আগে টার্গেট করতে হবে। মা দুর্গা মা কালীর হাতে আগে ত্রিশূল তুলে দিয়ে তারপর পূজা করার প্রয়োজন নেই। ত্রিশূল বিহীন দূর্গা কালীকে সম্মানের চোখে দেখার আবহাওয়া তৈরি করতে হবে।

ঈশ্বর মাটি দিয়ে প্রথম পুরুষ তৈরি করলেন। তারপর তার বাম পাশের এক পাঁজরের হাড় দিয়ে নারী তৈরি করলেন। তিনি চাইলেই পায়ের হাড় বা মাটি দিয়ে নারী তৈরি করতে পারতেন। কিন্তু তা করেন নি। কারন তিনি দুইয়ের মাঝে সম্পর্ক স্থির করে দিয়েছেন। নারীর অবস্থান সমপর্যায়ে হৃদয়ের পাশে।

এখানে ”না” শব্দের অর্থ না হোক যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে। এ ‘না’ -য়ের সম্মান যেন ব্যক্তি, পরিবার, গোষ্ঠী, সমাজ, রাষ্ট্র রক্ষা করে- কমিটি এমনভাবে ভবিষ্যত বিনির্মাণে সুপারিশ করবে।

Platform:
Related Post