X

রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা করায় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৪ই নভেম্বর, ২০২০, বুধবার

চক, বাঁশি, পয়সা, বাদাম ইত্যাদি শ্বাসনালীতে আঁটকে সৃষ্ট জটিলতার দরুন প্রায়শ-ই বাচ্চাদের বাবা-মাকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে উদ্বিগ্ন সময় অতিবাহিত করতে দেখা যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই ধরনের ঘটনাকে জরুরী অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

এমনই একটি জরুরী অবস্থার সম্মুখীন হন নাটোরের “আধুনিক সদর হাসপাতাল”-এর জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. কাজী মোহাম্মদ আলী (রাসেল)। গত ০২-১১-২০ ইং তারিখে রোজ সোমবার সকাল ৭:৩০ এ দুর্ঘটনাবশত বাঁশি শ্বাসনালীতে আটকে যাওয়ায় রোগী আরিফকে (০৯) অবচেতন অবস্থায় নাটোরের আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন ডা. কাজী মোহাম্মদ আলী(রাসেল)। তিনি অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর রোগীর মরণাপন্ন অবস্থা রোগীর মায়ের কাছে ব্যাখ্যা করেন এবং রোগীকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে জরুরীভাবে রোগীর শ্বাসনালী কেটে(ট্রাকিওস্টোমি) ছিদ্র করে রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস চালু করার চেষ্টা করবেন বলে জানান।

ট্রাকিওস্টোমি হলো এক ধরনের অস্ত্রপাচার যার সাহায্যে গলায় একটি ছোট ছিদ্র করে নল ঢুকানো হয়। এই নলটি সেই সময়ের জন্য রোগীকে নাক বা মুখের সাহায্য ছাড়াই শ্বাস নিতে সাহায্য করে। ট্রাকিওস্টোমি সাধারণত শ্বাসনালীর উপরের অংশ কোনো কারণে বাধাগ্রস্ত হলে শ্বাস গ্রহণের বিকল্প ব্যবস্থার জন্য, এয়ারওয়ে বা বায়ুপথে কোনো নিঃসরণ, অপসারণ ও পরিষ্কার করতে এবং ফুসফুসে জরুরী ভিত্তিতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে করা হয়ে থাকে।

রোগী আরিফ (০৯) এর অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল কারণ বাঁশি শ্বাসনালীতে আটকে থাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারছিল না, যে কারণে রোগীর দেহে এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি(সেরেব্রাল হাইপোক্সিয়া) হওয়ায় রোগী দ্রুততার সাথে মৃত্যুর পথে ধাবিত হচ্ছিল। এমতাবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসক রাজশাহীতে রেফার করলে মাঝপথেই রোগী মারা যেতে পারে ভেবে মানবিক বিবেচনায় নিজে রোগীর অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে শেষ চেষ্টা চালান।

কিন্তু অস্ত্রপাচারের এক পর্যায়ে রোগী মৃত্যুবরণ করেন। রোগী মারা যাবার পরপরই রোগীর স্বজনরা রোগীর মৃত্যুর জন্য চিকিৎসককে দোষারোপ করে বিলাপ করতে থাকেন। চিকিৎসক রোগীর গলা কেটে রোগীকে মেরে ফেলেছেন এমন বক্তব্য সম্বলিত সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

একজন মরণাপন্ন রোগীকে বাঁচাতে ঝুঁকি নেন চিকিৎসক কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে সাধারণ জনগণের জ্ঞান স্বল্পতার কারণে এমন চিত্র বাংলাদেশে আজ কম নয়। এমতাবস্থায় চিকিৎসক সমাজ ভবিষ্যতে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জরুরী সেবা দিতে দ্বিধায় ভুগতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকেই।

তথ্যসূত্রে
ডা. মোঃ রাসেল
মেডিকেল অফিসার
সিভিল সার্জনের কার্যালয়, নাটোর।

নিজস্ব প্রতিবেদক
নুরুন্নাহার মিতু

হৃদিতা রোশনী:
Related Post